Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
কম্পন ফিরল, আতঙ্কও

সাহায্যের আশ্বাস মুখ্যমন্ত্রীর

নকশালবাড়িতে ভূমিকম্পে দেওয়াল চাপা পড়ে মৃত রূপবান খাতুনের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে সব রকম সাহায্যের আশ্বাস দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর নির্দেশে তাঁর স্বামীর হাতে ৪ লক্ষ টাকা তুলে দিলেন নকশালবাড়ির বিডিও কিংশুক মাইতি। শুধু রূপবান নয়, ভূমিকম্পে মৃত প্রত্যেকের পরিবারকে ৪ লক্ষ টাকা, শরীরের ৬০ শতাংশের বেশি স্থানে জখম হলে ২ লক্ষ টাকা করে এবং ৬০ শতাংশের কম হলে ৫৯ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে বলে মুখ্যমন্ত্রী জানান।

শিলিগুড়ি হাসপাতালে মুখ্যমন্ত্রী। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

শিলিগুড়ি হাসপাতালে মুখ্যমন্ত্রী। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

সংগ্রাম সিংহ রায়
নকশালবাড়ি শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:২০
Share: Save:

নকশালবাড়িতে ভূমিকম্পে দেওয়াল চাপা পড়ে মৃত রূপবান খাতুনের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে সব রকম সাহায্যের আশ্বাস দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর নির্দেশে তাঁর স্বামীর হাতে ৪ লক্ষ টাকা তুলে দিলেন নকশালবাড়ির বিডিও কিংশুক মাইতি। শুধু রূপবান নয়, ভূমিকম্পে মৃত প্রত্যেকের পরিবারকে ৪ লক্ষ টাকা, শরীরের ৬০ শতাংশের বেশি স্থানে জখম হলে ২ লক্ষ টাকা করে এবং ৬০ শতাংশের কম হলে ৫৯ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে বলে মুখ্যমন্ত্রী জানান।

গোটা ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। নেপালে আটকে থাকা এ রাজ্যের বাসিন্দাদের উদ্ধারের জন্য নেপাল সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘‘নেপালে রাজ্যের ৩৩৬ জন আটকে রয়েছে বলে খবর পেয়েছি। তার মধ্যে ৩১ জন যোগাযোগ করেছে। ঘাটালের একটি পরিবারও আটকে রয়েছে বলে জানতে পেরেছি। এঁদের উদ্ধার করার চেষ্টা চলছে।’’

এদিন বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ রূপবানের বাড়িতে যান মুখ্যমন্ত্রী। কথা বলেন মৃতের স্বামী মহম্মদ নিজামের সঙ্গে। কীভাবে ঘটনাটি ঘটেছে তা জেনে নেন মৃতার ননদ আজমেঢ়া খাতুনের কাছ থেকে। আজমেঢ়া জানান, শনিবার দুপুরে রান্না করছিলেন তাঁর বৌদি। সেই সময় বাড়িতে ছিলেন তাঁর স্বামী, এক ছেলে, এবং বৃদ্ধা মা খতিজা খাতুন। হঠাৎ ভূমিকম্প শুরু হলে তিনি দৌড়ে মাকে ঘরের ভিতরে ঢুকে বের করে আনতে যান। মাকে বের করে আনলেও তিনি বের হওয়ার সময় পাননি তিনি। তার আগেই ঘরের বাইরে তৈরি করা একটি তোরণ তাঁর গায়ের উপরে ভেঙে পড়ে। চিৎকারে শুনে তাঁকে তোরণের নীচ থেকে টেনে বের করে স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের সান্ত্বনা দেন। জেলাশাসক পুনীত যাদবকে ডেকে সরকারি কী কী প্রকল্পে এই পরিবারকে সাহায্য করা যায় তাঁকে তদারকি করতে বলেন। তিনি খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, মৃতা স্থানীয় ছোট মণিরাম স্কুলে স্বনিযুক্তি প্রকল্পে মিড ডে মিল রান্নার কাজ করতেন। তিনি বিডিওকে ডেকে ওই কাজে বা সম মানের কোনও কাজে তাঁর ২০ বছরের মেয়ে অঞ্জুনা খাতুনকে নিয়োগ করার নির্দেশ দেন। সেই সঙ্গে বাড়ির একাংশ ভেঙে পড়ায় তিনি সরকারি কোনও গৃহ প্রকল্পে বাড়ি ও মৃতার মাকে বিধবা ভাতা চালু করার ব্যপারে তদারকি করতে বলেন।

জেনে নেন বাড়িতে কে কে রয়েছে। মৃতাই পরিবারের প্রধান উপার্জনকারী ছিলেন। তাঁর স্বামী দিনমজুরি করেন। রোজ কাজ জোটে না। তাঁর দুই ছেলে, এক মেয়ে। মেয়ে বড়। তাঁর বয়স ২০ বছর। তাঁকেই আপাতত কাজে লাগানোর পরামর্শ দেন তিনি। এর পরেই বেরিয়ে পড়েন শিলিগুড়ির উদ্দেশ্য।

যদিও মুখ্যমন্ত্রীর দুর্গতদের দেখতে যাওয়াকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের উদ্দেশ্যে বলে অভিযোগ করেছেন প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য। তাঁর অভিযোগ, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী কতটা ভূমিকম্পের কারণে এবং কতটা রাজনৈতিক কারণে এসেছেন তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। সোমবার ভোট প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আগেই তিনি প্রশাসনিক বৈঠক ডেকেছেন। সেখানে তাঁর ভূমিকা কী হবে, তা নিয়ে আমাদের সন্দেহ রয়েছে।’’ এদিন বিকেলে মুখ্যমন্ত্রী বেরিয়ে যাওয়ার পরে রূপবানের বাড়িতে যান অশোক ভট্টচার্য, দার্জিলিং জেলা সিপিএম সম্পাদক জীবেশ সরকার সহ বাম নেতারা। শনিবার রাতেই এলাকায় যান মাটিগাড়া-নকশালবাড়ির বিধায়ক শঙ্কর মালাকারও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE