তখন সুখের সময়...।—ফাইল চিত্র।
মুকুল-মদনের পিছনে তিনি আছেন। শুভার পিছনে নেই।
সারদা-কাণ্ডে নাম উঠেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ চিত্রশিল্পী শুভাপ্রসন্নর। তাঁকে একাধিক বার জেরাও করেছে ইডি এবং সিবিআই। বুধবার আগ বাড়িয়েই সেই প্রসঙ্গ টেনে মমতা বলে দিলেন, “শুভাপ্রসন্ন একটি চ্যানেল বিক্রি করেছে। তার তদন্ত চলছে। হয়তো দোষী সাব্যস্ত হতে পারে। আমি ওকে সাপোর্ট করছি না।”
শুভাপ্রসন্ন তাঁর চ্যানেল ‘এখন সময়’ বিক্রি করেছিলেন সারদা-কর্তা সুদীপ্ত সেনকে। সারদা কেলেঙ্কারির প্রথম মামলা দায়ের হয় ওই চ্যানেলকে ঘিরেই। সারদা কেলেঙ্কারির তদন্তেই মুকুল রায় এবং মদন মিত্রের নাম বারবার উঠেছে। সে ক্ষেত্রে কিন্তু মমতা মদন-মুকুলের পাশেই দাঁড়িয়েছেন। দু’দিন আগেও বলেছেন, “বলা হচ্ছে মদন চোর, মুকুল চোর। এর কোনও প্রমাণ আছে? দল এ সব বিশ্বাস করে না।” কিন্তু চিত্রশিল্পী শুভাপ্রসন্নের ব্যাপারে তাঁর প্রত্যয় এতটা দৃঢ় নয়। এ দিন পৈলানের দলীয় সম্মেলনে নিজে থেকেই শুভাপ্রসন্নর নাম করে মমতা সে কথা জানিয়ে দিলেন। ফলে দলের মধ্যেই প্রশ্ন উঠে গেল, এ বার কি তবে এই ঘনিষ্ঠ চিত্রশিল্পীকে ঝেড়ে ফেলতে চলেছেন মমতা?
দলের একটি অংশের ব্যাখ্যা, সিবিআই এবং ইডি-র তদন্তে যে ভাবে শুভাপ্রসন্নর নাম আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গিয়েছে, সেখান থেকে তাঁর বেরিয়ে আসার সম্ভাবনা ক্ষীণ বলেই মনে করছেন মমতা। কিন্তু সিবিআইয়ের তদন্তকারীরা তো মদন-মুকুলের নামেও গুরুতর অভিযোগ পেয়েছেন। তা হলে নেত্রী প্রকাশ্যে বিবৃতি দিয়ে মদন-মুকুলের পাশে দাঁড়াচ্ছেন কেন?
এ ব্যাপারে তৃণমূল নেতাদের একাংশের বক্তব্য, শুভাপ্রসন্নর কোনও জনভিত্তি নেই। কিন্তু মদন বা মুকুলের বিষয়টি তেমন নয়। মদনবাবু দীর্ঘদিন ধরে ট্যাক্সি, মেট্রো রেল এবং এসএসকেএম হাসপাতালের কর্মী-সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। অন্য দিকে, দলের মধ্যে মুকুলবাবুর স্থান কার্যত মমতার পরেই। সংগঠক হিসেবেও তাঁর প্রভাব যথেষ্ট। তাই মমতার যত ঘনিষ্ঠই হোন না কেন, মদন-মুকুলের সঙ্গে শুভাপ্রসন্নের তুলনা চলে না। দলের নেতাদের একটি বড় অংশও শুভাপ্রসন্নকে ভাল চোখে দেখেন না। তাই শুভাপ্রসন্নকে ঝেড়ে ফেললে দল এবং জনমানসে সে রকম কোনও বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে না বা রাজনৈতিক ভাবে দলকে বিশেষ অসুবিধার মধ্যে পড়তে হবে না বলেই মনে করছেন তৃণমূল নেত্রী।
এর আগে কুণাল ঘোষ এবং রজত মজুমদারকেও কার্যত একই ভাবে ঝেড়ে ফেলা হয়েছিল। সারদা কেলেঙ্কারিতে কুণালকে রাজ্য পুলিশ গ্রেফতার করার পরেই তৃণমূল তাঁকে দল থেকে সাসপেন্ড করে। কুণাল আগে কখনও রাজনীতি করেননি। রাজ্যসভার সাংসদ হওয়ার আগে বা পরে তাঁর কোনও জনভিত্তিও ছিল না। নেত্রীর নেকনজরে এসে তাঁর ধূমকেতুর মতো উত্থান ভাল চোখে দেখেননি দলের একাংশও। তাই কুণালের গ্রেফতার দলের-কর্মী নেতাদের মধ্যে কার্যত কোনও প্রভাবই ফেলেনি।
সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার রজতবাবুর ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। রাজ্য পুলিশের এই প্রাক্তন ডিজি-কে দলের সহ-সভাপতি এবং বীরভূম জেলার পর্যবেক্ষক করা হলেও দলের মধ্যে তাঁর তেমন কোনও প্রভাব ছিল না।কিন্তু শুভাপ্রসন্নকে যদি সিবিআই বা ইডি গ্রেফতার করে, তবে দল কি কিছুটা হলেও অস্বস্তিতে পড়বে না? এ ব্যাপারে দলের এক শীর্ষস্থানীয় নেতা বলেন, “বিষয়টি কী করে সামলানো হবে, তা এ দিন নেত্রী বুঝিয়ে দিয়েছেন। আগেও রাজ্যে অনেক চ্যানেল বিক্রি হয়েছে। এ বার সে সব নিয়েও তদন্তের দাবি করছেন নেত্রী। এই রাজনৈতিক সুরেই আমরা বিরোধীদের আক্রমণ প্রতিহত করব।”
কিন্তু শুভাপ্রসন্নর উপরে আগে থেকেই কেন এতটা রুষ্ট হলেন দলনেত্রী?
তৃণমূলের একটি অংশের ধারণা, সিবিআইয়ের জেরায় মমতার আঁকা ছবি নিয়ে মুখ খুলেই হয়তো বিপদ ডেকে এনেছেন শুভাবাবু।
গত ১৪ অক্টোবর সিবিআই মমতার ছবি নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল শুভাপ্রসন্নকে। সিবিআই সূত্রের খবর, শুভাপ্রসন্ন তদন্তকারীদের জানান, নাম-করা চিত্রশিল্পীর আঁকা কোনও ছবির সাধারণ বাজারদর ৩০-৪০ লক্ষ টাকার মতো।
প্রশ্ন ওঠে, তা হলে মমতার আঁকা ছবি কী করে ১ কোটি ৮০ লক্ষ টাকায় কিনেছিলেন সুদীপ্ত সেন? এর কোনও সদুত্তর শিল্পী দিতে পারেননি। পরে মমতা এ কথা জানতে পারেন।
মমতার এ দিনের বক্তব্য শুনে কী বলছেন শুভাপ্রসন্ন?
এ দিন বিকেলের পর থেকে ল্যান্ডলাইন ও মোবাইল ফোনে বেশ কয়েক বার চেষ্টা করার পরে বাড়ির ফোনটি তোলেন এক ব্যক্তি। মিহি কণ্ঠে বলেন, “দাদা তো বাড়িতে নেই।” তাঁকে বলা হয়, জরুরি দরকার। দলনেত্রী ‘দাদা’কে ‘সাপোর্ট’ করবেন না বলেছেন। ওই ব্যক্তির প্রতিক্রিয়া, “আমি তো কিছু জানি না।” দাদা কোথায় গিয়েছেন? উত্তর আসে, “মিটিং-এ।” কখন ফিরবেন? “রাত হবে।” দাদার মোবাইল ফোনটা বেজে যাচ্ছে কেন? মিহি গলার মানুষটি জানান, “বলতে পারব না। হয়তো কোথাও রেখে গিয়েছেন।” মিটিং করতে কোথায় গিয়েছেন, আর্টস একরে? ওই ব্যক্তি বলেন, “না, না। সেখানে যাননি।” তবে কি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছেন? উত্তর আসে, “বলতে পারব না।”
মোবাইল ফোনেও শুভাপ্রসন্নকে বার্তা পাঠানো হয়েছিল। সেই বার্তারও জবাব আসেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy