Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

দেহ বাক্সে ভরে বাড়িতে রাখে বাবলু

অমরনাথ গাইন (৫৮) নামে ওই ব্যক্তির বাড়ি বাদুড়িয়ার রেজিস্ট্রি অফিসের কাছে। শনিবার ভোরে বাদুড়িয়ারই সন্নিয়া গ্রামে একটি পুকুর ধারের মাটি খুঁড়ে দেহটি পুলিশ উদ্ধার করে।

বাক্স-রহস্য: অনুমান, এই বাক্সেই রাখা হয়েছিল অমরনাথের (ইনসেটে) দেহ। ছবি: নির্মল বসু

বাক্স-রহস্য: অনুমান, এই বাক্সেই রাখা হয়েছিল অমরনাথের (ইনসেটে) দেহ। ছবি: নির্মল বসু

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাদুড়িয়া শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৮ ০১:২০
Share: Save:

নিখোঁজ চা ব্যবসায়ীর দেহ উদ্ধার হল মাটি খুঁড়ে।

পুলিশ জানায়, অমরনাথ গাইন (৫৮) নামে ওই ব্যক্তির বাড়ি বাদুড়িয়ার রেজিস্ট্রি অফিসের কাছে। শনিবার ভোরে বাদুড়িয়ারই সন্নিয়া গ্রামে একটি পুকুর ধারের মাটি খুঁড়ে দেহটি পুলিশ উদ্ধার করে। ময়না তদন্তের জন্য সেটি কলকাতার এনআরএস হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, লটারির পুরস্কারের লোভে অমরনাথকে অপহরণের পরে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়। দেহ খালে আথবা নদীর জলে ভাসিয়ে দেওয়ার ছক কষেছিল আততায়ীরা। কোনও কারণে পরিকল্পনা বাতিল হয়। তদন্তকারীদের দাবি, বড় একটি বাক্সে ভরে সন্নিয়া গ্রামে নিজের বাড়িতে দেহ নিয়ে গিয়ে রাখে বাবলু আলি মণ্ডল নামে এক ব্যক্তি। সুযোগ বুঝে সঙ্গীদের সাহায্যে দেহ বাড়ির পিছনে পুকুর ধারে পুঁতে দেয়।

২৬ জুন বাদুড়িয়ার একটি লটারির দোকানের জন্য বসিরহাট থেকে ১২ লক্ষ টাকার লটারির টিকিট নিয়ে ভ্যান রিকশা চালিয়ে ফিরছিলেন অমরনাথ। তারপর আর খোঁজ মেলেনি তাঁর।

তদন্তে নেমে পুলিশ লটারির টিকিট কেনা-বেচার সঙ্গে যুক্ত মন্টু গাজি এবং বাবলুকে গ্রেফতার করে। যে টিকিট লোপাট হয়েছিল অমরনাথের সঙ্গে, নিখোঁজ হওয়া টিকিটে প্রায় ৪৫ হাজার টাকা পুরস্কার বেধেছিল। বুধবার সেই টাকা নিতে হাবড়ায় গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে বাবলু ও মন্টু।

মাটি-খুঁড়ে: এখানেই পোঁতা হয় দেহ।

বাবলু অসুস্থ হওয়ায় তাকে ভর্তি করা হয়েছিল হাসপাতালে। ইতিমধ্যে দিন কয়েক মারা যায় সে। পুলিশের দাবি, জেরায় মুখে মন্টু স্বীকার করে, শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছিল অমরনাথকে।

সেই সূত্র ধরে শনিবার ভোরে একজন ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে পুলিশি দেহ উদ্ধারে যায়। বাবলুর বাড়ির পিছনে পুকুর পাড়ে জঙ্গলের মধ্যে মন্টু একটি জায়গা দেখিয়ে দেয়। সেখানেই মাটি খুঁড়ে উদ্ধার হয় অমরনাথের পচা-গলা দেহ।

ছোটখাট চুরি-ছিনতায়ের ঘটনায় এর আগে বাবলুর নাম জড়িয়েছিল। কিন্তু সে যে মানুষ খুন করতে পারে, সে কথা জেনে স্থানীয় মানুষ হতবাক। স্থানীয় বাসিন্দা মোকশেদ আলির কথায়, ‘‘বাবলুকে নিয়ে একবার পুলিশ গ্রামে এসেছিল। কিন্তু তার মুখ থেকে কোনও কথা বের করতে পারেনি।’’

শুক্রবার রাত ১১টা নাগাদ পুলিশ গ্রামে আসে। জেনারেটর এনে আলো জ্বালানো হয়। রাতভর পাহারার পরে ভোর ৭টা নাগাদ মাটি খোঁড়া শুরু হয়। উদ্ধার হয় দেহ। বাবলুর ঘর থেকে বাক্সটি মিলেছে।

বাবলুর আত্মীয়া ফতেমা খাতুন বলেন, ‘‘কয়েক দিন আগে দুপুরে বাবলু বড় একটা টিনের বাক্স এনেছিল। সেটা খুব ভারী ছিল। ভ্যান চালক একা বাক্স টেনে ঘরে তুলতেই পারছিল না। বাক্সে কী আছে, জানতে চাইলে বাবলু বলেছিল, শ্বশুরবাড়ি থেকে পাওয়া জিনিসপত্র আছে।’’

পুলিশের অনুমান, অমরনাথকে অন্যত্র খুন করা হয়েছিল। সেটাই বাক্সে ভরে আনা হয়েছিল বাড়িতে। পরে সুযোগ বুঝে দেহ পুঁতে ফেলা হয়। কোথায় কী ভাবে অমরনাথকে খুন করা হল, তা মন্টুকে জেরা করে জানার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা। এই ঘটনায় আরও কেউ জড়িত কিনা, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE