Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

দলের সঙ্গে সঙ্ঘাতেই মানস, গ্রহণ করলেন পিএসি চেয়ারম্যান পদ

দলের সঙ্গে সঙ্ঘাতের পথেই হাঁটলেন কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়া। বিধানসভার পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান পদ গ্রহণ করছেন তিনি। সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে ঘোষণা করলেন শুক্রবার। চেয়ারম্যান পদে নিয়োগপত্র হাতে পেয়েই এ দিন বিধানসভায় গিয়ে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করলেন মানস।

মানস ভুঁইয়া। —ফাইল চিত্র।

মানস ভুঁইয়া। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৬ ১৬:৪৯
Share: Save:

দলের সঙ্গে সঙ্ঘাতের পথেই হাঁটলেন কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়া। বিধানসভার পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির (পিএসি) চেয়ারম্যান পদ গ্রহণ করছেন তিনি। সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে ঘোষণা করলেন শুক্রবার। চেয়ারম্যান পদে নিয়োগপত্র হাতে পেয়েই এ দিন বিধানসভায় গিয়ে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করলেন মানস। তার পর বিধানসভার গেটে সাংবাদিক সম্মেলন করে জানালেন, পিএসি চেয়ারম্যান পদ প্রত্যাখ্যান করার প্রশ্নই ওঠে না। দল চাইলে ব্যবস্থা নিতে পারে।

মানস ভুঁইয়ার নাম পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষিত হতেই রাজ্যের বিরোধী শিবিরে ঝড় উঠে গিয়েছিল। কংগ্রেস রাজ্য বিধানসভার প্রধান বিরোধী দল হওয়ায় পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান পদ কংগ্রেসেরই প্রাপ্য। কিন্তু বামেদের সঙ্গে সমঝোতা বজায় রাখতে ওই গুরুত্বপূর্ণ কমিটির শীর্ষ পদটি সিপিএম-কে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় কংগ্রেস। স্থির হয় যাদবপুরের সিপিএম বিধায়ক সুজন চক্রবর্তী কমিটির চেয়ারম্যান হবেন। কমিটিতে সদস্য হিসেবে অবশ্য সবং-এর বিধায়ককেও রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু স্পিকার সদস্যদের উপর চেয়ারম্যান নির্বাচনের ভার ছাড়েননি। তিনি নিজেই ঘোষণা করে দেন, কমিটির চেয়ারম্যান হচ্ছেন কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুইঁয়া। বিধানসভায় স্পিকার এ কথা ঘোষণা করতেই বিরোধী দলনেতা আবদুল মান্নান প্রতিবাদ করেন। মানুস ভুঁইয়াকে তিনি এই পদ প্রত্যাখ্যান করতে বলেন। কিন্তু মানসবাবু সে কথা শোনেননি। এতে আবদুল মান্নান কংগ্রেস এবং বাম বিধায়কদের সঙ্গে নিয়ে বিধানসভা থেকে ওয়াক আউট করেন। তার পর সুজন চক্রবর্তীকে সঙ্গে নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করে মান্নান জানিয়ে দেন, স্পিকারের এই সিদ্ধান্ত তাঁরা মানবেন না। মানস ভুঁইয়াকে বলা হবে পদ গ্রহণ না করতে।

এই ঘটনার পর থেকে পরবর্তী এক সপ্তাহে অনেকটা জল গড়িয়েছে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীও বলেছেন, এই পদ গ্রহণ করা মানস ভুঁইয়ার উচিত হবে না। মানসকে অধীর সরাসরিও বলেছেন সে কথা। কিন্তু মানস ভুঁইয়া যে পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান পদ গ্রহণ করবেনই, তা তিনি হাবেভাবে বুঝিয়েই দিচ্ছিলেন। গোটা বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য ৯ জুলাই কংগ্রেসের পরিষদীয় দলের বৈঠক ডাকা হয়েছে। মানস ভুঁইয়া আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন, ওই বৈঠকে যেতে পারবেন না অন্য ব্যস্ততার কারণে। কংগ্রেস নেতৃত্ব পাল্টা জানিয়েছিল, মানস ভুঁইয়া না এলেও বৈঠক হবে। বৈঠকের সিদ্ধান্ত তাঁকে মানতেও হবে। কারণ এাইসিসি-র সম্মতি নিয়েই পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান পদ সিপিএম-কে ছাড়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। মানস ভুঁইয়া সিদ্ধান্ত না মানলে তাঁর বিরুদ্ধে দল ব্যবস্থা নিতে পারে বলেও বিধান ভবন সূত্রে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছিল।

আরও পড়ুন: আমি কি বাজারের চিংড়িমাছ? জিজ্ঞাসা মানসের

সবং-এর দীর্ঘ দিনের কংগ্রেস বিধায়ক অবশ্য দলের কোনও নিষেধ মানলেন না। পরিষদীয় দলের বৈঠক পর্যন্তও অপেক্ষা করলেন না। শুক্রবার পিএসি চেয়ারম্যান পদের নিয়োগপত্র হাতে পান তিনি। তার পরই স্পিকারের সঙ্গে দেখা করতে বিধানসভায় যান। তার পর বিধানসভার গেটে সাংবাদিক সম্মেলন করে মানস বলেছেন, ‘‘পিএসি চেয়ারম্যান পদ সিপিএম-কে ছাড়ার সিদ্ধান্ত কংগ্রেস পরিষদীয় দলের বৈঠকে নেওয়া হয়নি।’’ তিনি আরও অভিযোগ করেন, আবদুল মান্নান কোনও নিয়ম মানেননি। মানসের কথায়, ‘‘আমার নাম ঘোষণা হতেই আবদুল মান্নান কংগ্রেস ও বাম বিধায়কদের নিয়ে বিধানসভা থেকে ওয়াক আউট করেন। আমার সঙ্গে কোনও কথা বলার প্রয়োজন বোধ করেননি। সোজা প্রেস রুমে গিয়ে সুজন চক্রবর্তীকে পাশে নিয়ে তিনি আমাকে, মুখ্যমন্ত্রীকে, স্পিকারকে ষড়যন্ত্রকারী বলতে শুরু করেন।’’ মানস ভুঁইয়ার এই সাংবাদিক সম্মলনে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, পিএসি চেয়ারম্যান পদ তিনি মোটেই ছাড়ছেন না। দল শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে জানা সত্ত্বেও, তিনি যে তার পরোয়া করছেন না, তাও বুঝিয়ে দিয়েছেন।

তা হলে কি কংগ্রেস ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছেন মানস? সূত্রের খবর, তিনি নিজে কংগ্রেস ছাড়ার দায় মাথায় নিতে চান না। কংগ্রেস তাঁকে বহিষ্কার করুক, এটাই নাকি চাইছেন সবং-এর দীর্ঘ দিনের বিধায়ক। তাই নেতৃত্বের নিষেধ না মেনে পিএসি চেয়ারম্যান পদ নিয়ে নিলেন। এর পর কংগ্রেস তাঁকে বহিষ্কার করলে অন্য যে কোনও দলে তাঁর যোগদানের পথ পরিষ্কার হয়ে যাবে। বিধান ভবন সূত্রের খবর, মানস ভুঁইয়ার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাই নিতে চলেছে কংগ্রেস। তবে বহিষ্কার করে তাঁর পথ পরিষ্কার হয়তো কংগ্রেস করবে না। শনিবার পরিষদীয় দলের বৈঠকে তাঁকে সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE