Advertisement
E-Paper

শিবকাশীর ওস্তাদি, ছদ্মবেশে শব্দবাজি

শিবকাশী থেকে বাজির কারিগরেরা এসে হাতেকলমে শিখিয়ে দিচ্ছে ওই বিদ্যা।

সুরবেক বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০১৭ ০২:৫৪
বিক্রি বন্ধ: বাজারে বাজির পসরা। কোর্টের নির্দেশে ক্রেতা নেই। সোমবার দিল্লিতে। এএফপি

বিক্রি বন্ধ: বাজারে বাজির পসরা। কোর্টের নির্দেশে ক্রেতা নেই। সোমবার দিল্লিতে। এএফপি

মুঙ্গেরে তৈরি দেশি বন্দুক হোক কিংবা শিবকাশীর ‘স্পেশ্যাল’ শব্দবাজি। পশ্চিমবঙ্গে বিপুল পরিমাণে ছড়ানোর ধরনটা দু’টোর ক্ষেত্রেই এক।

মুঙ্গেরি আগ্নেয়াস্ত্র পেতে এখন বিহারে যাওয়ার প্রয়োজন হয় না। মুঙ্গের থেকে ওস্তাদ কারিগররা পশ্চিমবঙ্গে এসে বানিয়ে দিয়ে যাচ্ছে অস্ত্রশস্ত্র, তালিম দিচ্ছে স্থানীয় মিস্ত্রিদের। তাই, শহরের উঠতি মস্তানের হাতেও নাইন এমএম পিস্তল।

বাজির ক্ষেত্রেও প্রযুক্তিটা শিবকাশীর, তবে তৈরি হচ্ছে এখানেই। ‘শেল’, ‘শটস’, ‘আসমান গোলা’-র মতো আলোর বাজির আড়ালে লুকিয়ে থাকা শব্দবাজি পেতে তামিলনাড়ুর শিবকাশী যেতে হচ্ছে না। সে সব এখন তৈরি হচ্ছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার চম্পাহাটি, হারাল, নুঙ্গিতেই। শিবকাশী থেকে বাজির কারিগরেরা এসে হাতেকলমে শিখিয়ে দিচ্ছে ওই বিদ্যা।

যার ফলে শিবকাশীতে তৈরি একটি শেল-এর দাম এখানে ৩০০ টাকা হলে এখানে তৈরি শেল-এর দাম পড়ছে তার অর্ধেক। কয়েক বছর ধরে উৎসবের মরসুমে তাই বিজাতীয় শব্দবাজির রমরমা এই রাজ্যে। চকলেট বোমা, দোদমা, কালীপটকার মতো বঙ্গজ শব্দবাজিকে ব্যাকফুটে ফেলে দিয়েছে এই বন্দোবস্ত।

বাজি প্রস্তুতকারকদের একাংশ জানাচ্ছেন— শেল, শট বানানোর ওস্তাদ শিবকাশীর কারিগরদের তিন-চার জনের এক-একটি ছোট দলের ‘রেট’ ৫০ হাজার থেকে দু’লক্ষ টাকা। মাস চারেক আগে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাজির আঁতুড়ঘরে এসে সপ্তাহ দুয়েক ধরে তাঁরা ওই সব বাজি যেমন তৈরি করেছেন, শিখিয়েওছেন স্থানীয় কারিগরদের।

শিবকাশীর প্রযুক্তিতে তৈরি হওয়া ওই বিশেষ শব্দবাজির প্রায় সবটুকু এ বার দুর্গাপুজোর আগেই পাইকারদের হাতে পৌঁছে গিয়েছে বলে রাজ্য পুলিশের একটি সূত্রের খবর। যার নমুনা মিলেছে দুর্গাপুজোর বিসর্জন মিছিলে।

লালবাজারের এক কর্তার বক্তব্য, লাগাতার প্রচার ও ধরপাকড়ের ফলে চকলেট বোমা, দোদমা, কালীপটকার মতো পরিচিত শব্দবাজি চোরাপথে কিনতে গেলেও লোকে ভয় পায়। যাঁরা সত্যিই সচেতন, তাঁরা এ সব থেকে দূরে থাকেন। কিন্তু এ সব বাজি আসলে কী, সে ব্যাপারে পুলিশেরও অনেকের ধারণা নেই। বহু মানুষ জানেন— এগুলো সব আলোর বাজি, আলো তৈরি করতে গিয়ে যেটুকু শব্দ তৈরি করে। অথচ ফাটলে মালুম হয়, কী ভয়ঙ্কর শব্দ। পুলিশ ও বাজি ব্যবসায়ীদের একাংশের মতে, এই ছদ্মবেশই এই ধরনের বাজির প্রতি প্রস্তুতকারী ও ব্যবসায়ীদের আকর্ষণের বড় কারণ।

পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের অবসরপ্রাপ্ত মুখ্য আইন আধিকারিক ও বর্তমানে পরিবেশকর্মী বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘ওই সব বাজির শব্দ ১২৫ ডেসিবেলেরও বেশি। গ্রীষ্মকালে বাজির আঁতুড়ঘরে হানা না দিলে এটা আটকানো যাবে না।’’ বাজি ব্যবসার সঙ্গে ২০ বছর ধরে যুক্ত, টালা বাজি বাজারের সাধারণ সম্পাদক শুভঙ্কর মান্না বলেন, ‘‘শিবকাশীর প্রযুক্তিতে এখানে তৈরি হওয়া ওই সব বাজি আসলে ছদ্মবেশী শব্দবাজি। এই বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।’’

Firecrackers বাজি
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy