Advertisement
E-Paper

দেড় মাস পরে ‘যাচাই’, বঞ্চিত বহু ক্ষতিগ্রস্ত

২৭ মে রাজ্য সরকারের ক্ষতিপূরণ ঘোষণার অব্যবহিত পরে তার বাস্তবায়ন দ্রুত হয়।

প্রদীপ্তকান্তি ঘোষ ও চন্দ্রপ্রভ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২০ ০৪:০৭
ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

যত দোষ তালিকার! তার আড়ালেই লুকিয়ে হিসেবনিকেশ। আর সেসব করতে কাবার দেড় মাস। তাই বাড়ি ভাঙলেও জোটেনি ক্ষতিপূরণ। আর যখন ক্ষতির ‘প্রকৃত’ তদন্ত শুরু হল, তার মধ্যে অনেক বাড়ির ক্ষতিগ্রস্ত অংশ মেরামতও হয়েছে। তাই নতুন তালিকা ত্রুটি মুক্তি থাকা নিয়ে সংশয়ের মেঘ জমছে, আমপান আছড়ে পড়া বিভিন্ন জেলার বাসিন্দাদের মুখে-মনে।

২৭ মে রাজ্য সরকারের ক্ষতিপূরণ ঘোষণার অব্যবহিত পরে তার বাস্তবায়ন দ্রুত হয়। সেই দ্রুততা ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরিতে সমস্যা বাড়ায়, তা নিয়ে চর্চা রয়েছে প্রশাসনের অন্দরে। কারণ, দুপুরে তালিকা হয়েছে আর বিকেলেই ক্ষতিগ্রস্তর অ্যাকাউন্টে টাকা পৌঁছেছে। আর সেসব করে পরবর্তীতে দেখা যায়, ক্ষতিই হয়নি, অথচ টাকা পেয়েছেন অনেকেই। তাতে বঞ্চিত হয়েছেন প্রকৃত ক্ষতিগ্ৰস্ত। এই ‘ভুল’ সামনে আসতে নতুন করে তালিকা তৈরির সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য সরকার।

এ বার নতুন তালিকা যাচাই শেষে মিলবে ক্ষতিপূরণ। সেই তালিকাও আদৌ ত্রুটিমুক্ত থাকবে তো! সেই প্রশ্ন তুলছেন অনেক ক্ষতিগ্রস্ত। তাঁদের মতে, দেড় মাসের বেশি সময় কেটেছে ঝড়ের। এখন কতটা বাড়ি ভেঙেছে, কোথায় ভেঙেছে, সেই সবের তদন্ত হচ্ছে। তাতে সঠিকটা তথ্য পাওয়া যাবে না বলে দাবি অনেকের। ‘‘এত দিন কি বাড়ি মেরামত না করে থাকা যায়! আমাদের তো একটা দুটো ঘর। সেখানে চাল ঠিক না করলে তো রোদ আর জলের মধ্যে থাকতে হত। তা কি সম্ভব?" - প্রশ্ন এক ক্ষতিগ্রস্তের। তার রেশ ধরে আরেকজনের অভিমত, "বাড়ি ভেঙেছিল। কিন্তু সরকারের টাকা পায়নি। অথচ যার ভাঙেনি। তিনি টাকা পেলেন। তাই ভাবলাম আর টাকা পাব না। তাই ধার করেই মেরামত করেছি। আর এখন বিডিও অফিসের লোক এল।’’ যদিও প্রশাসনের অনেকের দাবি, ‘‘এলাকায় গেলে বোঝা যায় বা জেনে নেওয়া যায়, কাদের ক্ষতি হয়েছে এবং কাদের হয়নি। তাই সঠিক তথ্য জোগাড়ে অসুবিধা হয় না।’’

এ বার আংশিক ক্ষতিগ্রস্তদেরও তালিকাও তৈরি হয়েছে। তবে কিভাবে আর কত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে, তা নিয়ে এখনও কোনও নির্দেশিকা প্রকাশ পায়নি। তা খুব তাড়াতাড়ি প্রকাশ হবে বলে জানিয়েছেন প্রশাসনিক সূত্রে দাবি। ইতিমধ্যেই তালিকা প্রকাশ হয়েছে। সেই তালিকায় ফের পরিমার্জিত হবে কি না, তা নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি।

ক্ষতিগ্রস্ত তালিকার ‘গরমিলের’ জন্য ‘দায়’ কার? তার উত্তর এখনও অস্পষ্ট। প্ৰশাসনের প্রাক্তন এবং প্রবীণ অনেক আমলা-আধিকারিক মনে করছেন, যে পদ্ধতিতে ক্ষতিগ্রস্তের তালিকা তৈরি হয়েছিল, তা প্রশ্নবিহীন হতে পারে না। ভুল করে একজনের বদলে আর এক জনের অ্যাকাউন্টে টাকা চলে যেতে পারে। কিন্তু একই বাড়ির একাধিক লোক ক্ষতিগ্রস্তের তালিকাভুক্ত হবেন, তা কাঙ্খিত নয়। পঞ্চায়েত স্তরে যে কমিটি ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করেছিল। তা যাচাই না করে জেলা প্রশাসন কী ভাবে সম্মতি দিল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে সংশ্লিষ্ট মহল। আমপানের ক্ষতিপূরণ ঘোষণার পরে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে জেলা এবং রাজ্যভিত্তিক একটি করে কমিটি গড়ে দিয়েছিল সরকার। ক্ষতিপূরণের বিলিবণ্টন প্রক্রিয়া চলাকালীন সেই কমিটি প্রতিদিন নিজেদের মধ্যে ভিডিয়ো বৈঠক করেছিল। তারপরেও কেন তালিকার এত বড় ‘ত্রুটি’ ধরা পড়ল না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। প্রাক্তন এক আমলার কথায়, “মনে রাখতে হবে আমপানের আগে রেশন নিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে অভিযোগ-শোরগোল চলছিল। শেষ পর্যন্ত প্রশাসনের শীর্ষস্তরকে হস্তক্ষেপ করতে হয়। সেই অভিজ্ঞতা আমপান-ক্ষতিপূরণের বিলিবণ্টনে কাজে লাগাতে দ্বিস্তরীয় কমিটি তৈরি হয়েছিল। সেই অভিজ্ঞতা কি আদৌ কাজে লেগেছিল?”

Cyclone Amphan Cyclone Compensation
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy