E-Paper

‘পাশে আছি, লড়ে যাও’! শিক্ষকদের জল-খাবার পৌঁছে দিয়ে বার্তা

আর জি কর হাসপাতালে চিকিৎসক-পড়ুয়াকে খুন ও ধর্ষণের ঘটনা ঘিরে তৈরি হওয়া আন্দোলনের সাত মাসের মধ্যেই কার্যত তেমনই আরও একটি আন্দোলন দেখছে কলকাতা।

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২৫ ০৮:৪৯
দুপুরের খাবার সংগ্রহ করতে দীর্ঘ লাইন বিক্ষোভকারী চাকরিহারাদের। মঙ্গলবার, সল্টলেকে।

দুপুরের খাবার সংগ্রহ করতে দীর্ঘ লাইন বিক্ষোভকারী চাকরিহারাদের। মঙ্গলবার, সল্টলেকে। —নিজস্ব চিত্র।

রাত পেরিয়ে সকাল হয়েছে। সকাল পেরিয়ে দুপুর। রোদে ঝলসানো দুপুর গড়িয়ে ফের নেমেছে রাত। অসংখ্য প্রতিকূলতার মধ্যে এখনও সল্টলেকে এসএসসি ভবনের সামনেই বসে রয়েছেন চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকারা। খাবার নেই, জল নেই, নেই শৌচাগার। কিন্তু সোমবার রাত থেকেই তাঁদের পাশে দাঁড়াতে শুরু করেছেন মানুষ। কেউ জল, কেউ বা শুকনো খাবার, ওআরএস নিয়ে হাজির হয়েছেন। কেউ এনেছেন বাড়িতে রান্না খাবার। অনেকেই আবার নিজের বাড়ি, বিশেষ করে শৌচাগার ব্যবহার করতে দেওয়ার কথা জানিয়ে সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেছেন। তাতে লেখা, ‘পাশে আছি, লড়ে যাও’! সব মিলিয়ে আর জি কর হাসপাতালে চিকিৎসক-পড়ুয়াকে খুন ও ধর্ষণের ঘটনা ঘিরে তৈরি হওয়া আন্দোলনের সাত মাসের মধ্যেই কার্যত তেমনই আরও একটি আন্দোলন দেখছে কলকাতা। অনেকেই বলছেন, তখনকার মতো এ বারও সহায় সেই সাধারণ মানুষই।

সোমবার সন্ধ্যার পরে আন্দোলনকারীদের প্রথম সমস্যা তৈরি হয় শৌচাগার নিয়ে। কাছেই একটি পেট্রল পাম্পের শৌচাগার ব্যবহার করা শুরু হতেই তাতে কিছু সময়ের জন্য তালা দিয়ে দেওয়া হয়। প্রথমে আশপাশের কয়েকটি সরকারি দফতরের শৌচাগার ব্যবহার করা গেলেও সন্ধ্যার পরে সেগুলিতে প্রবেশ বন্ধ করে দেওয়া হয়। রূপা কর্মকার নামে চাকরিহারা এক শিক্ষিকা জানান, শৌচাগার ব্যবহার করতে করুণাময়ী মোড় পর্যন্ত যেতে হচ্ছিল তাঁদের। তখন একটিই মাত্র বায়ো-টয়লেট ছিল। কিন্তু এত আন্দোলনকারীর জন্য স্বাভাবিক ভাবেই একটি টয়লেট পর্যাপ্ত নয়। এই পরিস্থিতিতে পাশে দাঁড়িয়েছেন আন্দোলনস্থলের কাছের ইই, ডিএল, সিকে ব্লকের বাসিন্দাদের অনেকে। তাঁদেরই এক জন, দিতিপ্রিয়া সরকার সমাজমাধ্যমে লিখেছেন, ‘সল্টলেকে থাকি। এসএসসি ভবনের সামনে আন্দোলনরত চাকরিহারা শিক্ষিকা যাঁরা আছেন, শৌচাগার ব্যবহারের জন্য বা কোনও দরকারে আসতে পারেন। দরজা খোলা রইল’। দেবব্রত সাহানা নামে এক ব্যক্তি আবার ন’নম্বর ট্যাঙ্কের পাশের ‘ন্যাশনাল মাইম ইনস্টিটিউট’-এর শৌচাগার ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছেন। তমাল ঘোষ নামে এক ব্যক্তি লিখেছেন, তাঁদের ‘কোঅপারেটিভ সোসাইটি’র প্রতিটি ব্লকের সমস্ত ফ্ল্যাটের বাসিন্দারাই আন্দোলনকারীদের শৌচাগার ব্যবহার করতে দিতে রাজি। রাতেই অন্তত ৫০০ জনের খাবার নিয়ে পৌঁছনোর কথাও লিখেছেন সল্টলেকের আর এক আবাসন কমিটির কর্তা।

এর মধ্যেই দেখা গিয়েছে, বারাসতের নীলগঞ্জ থেকে আসা জয়া দে নামে এক শিক্ষিকা আন্দোলনকারীদের আখের রস খাওয়াচ্ছেন। তিনি বললেন, ‘‘আমার স্কুলের তিন শিক্ষিকা চাকরি হারিয়েছেন। তাই প্রথম থেকেই এই আন্দোলনের পাশে রয়েছি। রোজ আসব। যতটা সম্ভব, জল-খাবারের ব্যবস্থা করব।’’ বারাসতেরই আর এক শিক্ষককে দেখা গেল, বাড়ি থেকে ডিম-ভাত রান্না করিয়ে নিয়ে এসেছেন। ফুটপাতে বসে তা-ই খাচ্ছেন অনেকে। ওই ব্যক্তির দাবি, ২০০৬ সালের প্যানেলে তিনি চাকরি পেয়েছিলেন। আন্দোলনকারীদের মধ্যে তাঁর চাকরিহারা ভাই রয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমার ভাইয়ের মতোই তো অনেকে অভুক্ত। তাই বাড়িতে খাবার বানিয়ে এনেছি।’’

আন্দোলনের পাশে দাঁড়ানো জুনিয়র চিকিৎসকদের খিচুড়ি নিয়ে হাজির হতে দেখা গেল। সেই খিচুড়ি লাইন দিয়ে পাতায় করে নেন চাকরিহারা শিক্ষকেরা। তাঁদেরই এক জন বলেন, ‘‘কাল দুপুরে শেষ খেয়েছিলাম। তার পরে এই।’’ পরে তাঁর মন্তব্য, ‘‘বহু মানুষ পাশে এসে দাঁড়াচ্ছেন। অনেকে বলছেন, জনসাধারণ পাশে আছে। আমরা বলছি, এঁরা জন-অসাধারণ। এই আন্দোলন আর শুধুই চাকরিহারা শিক্ষকদের নেই।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

SSC West Bengal SSC Scam

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy