Advertisement
০২ মে ২০২৪
Citizen Amendment Act

সিএএ নিয়ে আতঙ্কে মতুয়াদের অনেকেই

নিঃশর্ত নাগরিকত্বের দাবিতে শনিবার সকালে উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটা থানার সামনে শ্রীশ্রী শান্তিহরি-গুরুচাঁদ ফাউন্ডেশনের তরফে টায়ার জ্বালিয়ে যশোর রোড অবরোধ করা হয়।

CAA

অমিত শাহ। — ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নবদ্বীপ ও কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০২৪ ০৬:০১
Share: Save:

সিএএ নিয়ে মতুয়াদের বড় অংশের প্রাথমিক উচ্ছ্বাস আগেই উদ্বেগে পরিণত হতে শুরু করেছিল। এ বার ক্রমশ তা ক্ষোভের চেহারা নিচ্ছে। কোথাও রাস্তা অবরোধ, কোথাও বা লিফলেট বিলি নজরে পড়েছে শনিবার। সেই ক্ষোভ কোনও নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের বৃত্তেও আবদ্ধ থাকছে না বলেই রাজনৈতিক মহলের একাংশের দাবি।

নিঃশর্ত নাগরিকত্বের দাবিতে শনিবার সকালে উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটা থানার সামনে শ্রীশ্রী শান্তিহরি-গুরুচাঁদ ফাউন্ডেশনের তরফে টায়ার জ্বালিয়ে যশোর রোড অবরোধ করা হয়। বিকেলে বনগাঁ শহরে ১ নম্বর রেলগেট এলাকাতেও যশোর রোড অবরোধ করা হয়। তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি তথা বনগাঁর প্রার্থী বিশ্বজিৎ দাসের দাবি, ‘‘অবশেষে মতুয়ারা বুঝছেন, বিজেপি ভাঁওতা দিয়েছে। তাঁদের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গিয়েছে।’’ বিজেপির বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি দেবদাস মণ্ডল অবশ্য দাবি করেন, ‘‘সিএএ আইনে মতুয়া-উদ্বাস্তু মানুষের নিঃশর্ত নাগরিকত্ব দেওয়ার কথাই বলা আছে। তৃণমূল ভুল বোঝাচ্ছে। আমার সন্দেহ, এঁরা আদৌ মতুয়া কি না!’’

তবে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনে ‘নিঃশর্ত নাগরিকত্ব’ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, এমনটা মতুয়াদের অনেকেই আর বিশ্বাস করতে পারছেন না। দক্ষিণ নদিয়ায় গত কয়েক দিন ধরেই ক্ষোভ-বিক্ষোভ, অবরোধ হচ্ছে। শর্তসাপেক্ষে নিজেকে নাগরিক প্রমাণ করার চেষ্টা বিপজ্জনক হতে পারে দাবি করে এ বার লিফলেট বিলি শুরু হয়েছে। সর্বভারতীয় মতুয়া মহাসঙ্ঘের দক্ষিণ নদিয়া সাংগঠনিক জেলা সম্পাদক বাবুল বিশ্বাসের বক্তব্য, “২০০৩ সালে যখন প্রথম ‘কালা কানুন’ আসে, বড়মার নেতৃত্বে আমরা আন্দোলন করেছি। আমাদের ১০ দফা দাবির মধ্যে প্রথমটিই ছিল, নিঃশর্ত নাগরিকত্ব। দু’দশক পরেও তা মিলল না।”

মতুয়া মহাসঙ্ঘের রানাঘাট ১ ব্লক সভাপতি পরিমল বিশ্বাসের দাবি, “আইনে বলা হয়েছে, অন্য দেশ থেকে যাঁরা এসেছেন, তাঁদের সেখানকার পাসপোর্ট, স্কুল লিভিং সার্টিফিকেট, ড্রাইভিং লাইসেন্স বা ভাড়ার রসিদ ইত্যাদি নথি থাকতে হবে। সর্বস্ব খুইয়ে যাঁরা পালিয়ে এলেন, তাঁদের পক্ষে এ সব দেওয়া সম্ভব?” তাঁদের বক্তব্য, এই আইনে নাগরিকত্ব চাওয়ার তিনটি পর্যায় রয়েছে। প্রথমে জেলাশাসকের দফতরে যে আবেদন করতে হবে, তাতেই আবেদনকারী শরণার্থী বলে চিহ্নিত হয়ে যাবেন। পরিমলের কথায়, “এর পর প্রমাণ দিতে হবে যে, ওই ব্যক্তি অত্যাচারিত হয়ে এ দেশে এসেছেন। যাঁরা প্রাণ হাতে পালিয়েছেন, তাঁদের পক্ষে প্রমাণ দেওয়া অসম্ভব। সেই প্রমাণে প্রশাসন সন্তুষ্ট হলে তবেই নাগরিকত্ব মিলবে। কিন্তু সন্তুষ্ট না হলে কী ঘটবে? ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠানো হবে?’’

এই সংশয় এবং অবিশ্বাস ক্রমশ এমন পর্যায়ে যাচ্ছে যে, বিজেপির সঙ্গে থাকা মতুয়াদের একাংশও ক্ষোভ চেপে রাখতে পারছেন না। বিজেপির নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার এসসি মোর্চার সহ-সভাপতি এবং মতুয়া মহাসঙ্ঘের নবদ্বীপ ব্লক সম্পাদক রঞ্জিত মণ্ডলের দাবি, “এই আইনে মতুয়াদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে। লিফলেটের মাধ্যমে আমরা সেই সত্যিটা তুলে ধরব।”

বিজেপিপন্থী মতুয়া মহাসঙ্ঘের সদ্যপ্রাক্তন সভাপতি, দলবদলের পরে রানাঘাটের তৃণমূল প্রার্থী মুকুটমণি অধিকারীর মতে, “২০০৩ সাল থেকে মতুয়া-উদ্বাস্তুরা বিজেপিকে পাঁচ বার ভোট দিয়েছে নিঃশর্ত নাগরিকত্বের আশায়। কিন্তু এত শর্ত চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে, যা এক-কাপড়ে পালিয়ে আসা গরিব মানুষের পক্ষে দাখিল করা অসম্ভব।” তবে রানাঘাটের বিজেপি সাংসদ তথা প্রার্থী জগন্নাথ সরকারের বক্তব্য, “একটা ন্যূনতম শর্ত: যে দেশ থেকে এসেছেন, সেখানকার নাম-ঠিকানা সংক্রান্ত নথি চাওয়া হয়েছে। কেউ তা দিতে না পারলেও ক্ষতি নেই। তিনি যে দীর্ঘদিন এ দেশে বাস করছেন, তা জানিয়ে জনপ্রতিনিধি বা বিশিষ্টজনেরা শংসাপত্র দেবেন। কিছু বিশ্বাসঘাতক তৃণমূলের দালালি করছে, তাতে সুবিধা হবে না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE