শিলদায় ইএফআর শিবিরে হামলা চালিয়ে ২৪ জন জওয়ানকে হত্যার মামলায় এখনও সে ফেরার। ২০১০-এর ১৫ ফেব্রুয়ারির সেই হামলায় মাওবাদীদের একটি নারী বাহিনীকে সে-ই নেতৃত্ব দিচ্ছিল বলে তদন্তে প্রকাশ পায়। মামলার নথিতে তার নাম ‘বেলা’। সাড়ে পাঁচ বছর ধরে পলাতক সেই বেলা ওরফে নির্মলা বিশ্বাস অসমের কাছাড় জেলার কাটিগড়া থেকে বৃহস্পতিবার ধরা পড়েছে। সঙ্গে ধরা হয়েছে আরও পাঁচ জন সন্দেহভাজন মাওবাদীকে।
বছর পঁয়তাল্লিশের নির্মলা বিশ্বাসের গ্রেফতার হওয়ার খবর অসম পুলিশও জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশকে। শিলদা মামলার তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি। বেলাকে কী ভাবে হেফাজতে নেওয়া যায়, সিআইডি সেটা খতিয়ে দেখছে। নদিয়া জেলার চাকদহ এলাকার কালীপুরের বাসিন্দা বেলা ওরফে নির্মলা পশ্চিমবঙ্গে মাওবাদীদের প্রথম মুখপাত্র গৌর চক্রবর্তীর শ্যালিকা। গৌরবাবুও বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইনে (ইউএপিএ) রুজু হওয়া মামলায় অভিযুক্ত।
পশ্চিমবঙ্গের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার বক্তব্য, আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার ও আইইডি তৈরিতে প্রশিক্ষিত বেলা ওরফে নির্মলা বিশ্বাস শুধু শিলদা নয়, পশ্চিম মেদিনীপুরের সাঁকরাইল থানায় হামলা চালিয়ে দুই পুলিশকর্মীকে হত্যা ও ওসি অপহরণ-কাণ্ডেও জড়িত। সাঁকরাইলের ঘটনা ২০০৯-এর ২০ অক্টোবরের। ওই বছরই নভেম্বরে গিধনিতে পাঁচ ইএফআর জওয়ান খুনেও বেলা জড়িত বলে গোয়েন্দাদের একাংশের দাবি।
শিলদা, সাঁকরাইল, গিধনি— তিনটি ঘটনাতেই মাওবাদীদের প্রমীলা স্কোয়াডের দাপট দেখা গিয়েছিল। লালগড় আন্দোলন তখন তুঙ্গে। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, সেই সময়ে লালগড়-সহ জঙ্গলমহলের বহু তল্লাটে বেলা গিয়ে সংগঠনের কাজ করেছে, বহু স্কোয়াড-সদস্যকে অস্ত্রশিক্ষা দিয়েছে। জঙ্গলমহলের মাওবাদী নেত্রীদের মধ্যে এর আগে সোমা মান্ডি, জাগরী বাস্কে ও সুচিত্রা মাহাতো আত্মসমর্পণ করে। আর নির্মলা ভিন্ রাজ্যের পুলিশের হাতে গ্রেফতার হল। কাছাড়ের এসপি রজবীর সিংহ জানান, কয়েক বছর ধরেই কাছাড়ে মাওবাদী কার্যকলাপ চলছে। ২০১৩-র মে মাসে শিলচরে ধরা পড়ে মাওবাদী নেতা অনুকূলচন্দ্র নস্কর ওরফে পরেশদা। ফেব্রুয়ারিতেও বরাকে গ্রেফতার হয় চার মাওবাদী।
কিষেণজির মৃত্যুর পর জঙ্গলমহলে বেলার গতিবিধির কথা তেমন জানতে পারেনি পুলিশ। এখন তাঁরা বুঝতে পারছেন, বেলা কাছাড়ে কাজ করছিল। নির্মলার সঙ্গেই গ্রেফতার করা হয়েছে আর এক মাওবাদী নেতা আমিরুদ্দিন আহমেদকে। অসম পুলিশের দাবি, দু’জনই অসমে মাওবাদীদের প্রথম সারির নেতা। সাংবাদিকদের সামনে দু’জনের দাবি, তারা মাওবাদীদের আঞ্চলিক কমিটির সদস্য। সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের নির্দেশে কাজ করত।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, কাছাড় থেকে কিছু তরুণ-তরুণীকে অস্ত্র প্রশিক্ষণে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছিল। বছর দেড়েকের জন্য গোপন শিবিরে পাঠিয়ে অস্ত্র চালানো শেখানো হতো তাদের। বরাক থেকে ক’জনকে, কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে, জানার চেষ্টা করছে পুলিশ। পশ্চিমবঙ্গের গোয়েন্দাদের সন্দেহ, উত্তরবঙ্গের কিছু চা বাগান এলাকাতেও সংগঠন গড়ার চেষ্টা করেছিল নির্মলা। সে তাদের হেফাজতে এলে আরও তথ্য জানা যাবে বলে মনে করছে পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy