Advertisement
E-Paper

‘লোকনাথ-ভক্তের পুত্র জ্যোতিবাবু প্রসাদও খেতেন’! ধর্ম নিয়ে উন্নাসিকতা ছাড়তে দলকে পরামর্শ সেলিমের

২০১৬ সালের পর থেকে বামেদের ভোট যে গতিতে কমেছে, প্রায় একই গতিতে বৃদ্ধি পেয়েছে বিজেপির ভোট। অনেকের মতে, সার্বিক প্রেক্ষাপটে সেলিমের ধর্ম নিয়ে উন্নাসিকতা ছাড়ার বার্তা ‘তাৎপর্যপূর্ণ’।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৪ ২১:০৭
MD Salim gave a message to the Party members to maintain balance with religious events

(বাঁ দিকে) জ্যোতি বসু, মহম্মদ সেলিম। —ফাইল চিত্র।

সিপিএম করা অনেকে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করেন। কেউ কেউ আবার ওই দিকেই ঘেঁষেন না। জ্যোতি বসুর উদাহরণ দিয়ে দলের মধ্যে থাকা এই দুই মেরুর সদস্যদের ভারসাম্য রক্ষা করার পরামর্শ দিলেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। পাশাপাশি, লোকসভা ভোটে ধাক্কা খাওয়ার পর ‘ব্যর্থ’ তরুণ মুখেরা যখন সমালোচনার মুখে পড়ছেন, তখন তাঁদের বর্ম হয়ে দাঁড়াতে চাইলেন রাজ্য সম্পাদক।

প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা সিপিএম নেতা জ্যোতিবাবুর ১১১তম জন্মদিবসের অনুষ্ঠান ছিল সোমবার। নিউ টাউনে নির্মীয়মাণ ‘জ্যোতি বসু সেন্টার ফর সোশ্যাল স্টাডিজ় অ্যান্ড রিসার্চ’-এর প্রাঙ্গণে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সেলিম বলেন, ‘‘জ্যোতিবাবুর বাবা-মা ছিলেন ধার্মিক। তাঁর বাবা লোকনাথের ভক্ত ছিলেন। জ্যোতিবাবু বহু বার গল্প করতে করতে বলেছেন, তিনি নিজে ধর্ম না-মানলেও প্রসাদ খেতেন।’’ সেই প্রসঙ্গ ধরেই সেলিমের বক্তব্য, ‘‘আমাদের অনেকে উন্নাসিকতা দেখায়। কেউ কেউ আছে যারা মোদীর মতো সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করে। আবার কেউ ও সবের মধ্যেই থাকে না। জ্যোতি বসুর জীবন থেকে এই শিক্ষাই নিতে হবে— নির্লিপ্ততা থাকবে, একই সঙ্গে সম্পৃক্ততাও থাকবে।’’

সেলিমের এই বক্তব্যকে কটাক্ষ করেছেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ। কুণালের মন্তব্য, ‘‘দিশাহীন রাজনীতির প্রলাপ! আগে সিপিএম দুর্গাপুজোর মণ্ডপ থেকে দূরে মার্ক্সবাদী সাহিত্যের স্টল দিত কিন্তু মণ্ডপে যেত না। এখন স্টলও দিচ্ছে আবার আরতিও করছে।’’

বঙ্গ সিপিএমের ভোট ক্ষয়ে ক্ষয়ে রক্তশূন্যতার জায়গায় পৌঁছেছে। ২০১৬ সালের পর থেকে সিপিএমের ভোট যে গতিতে কমেছে, প্রায় একই গতিতে বৃদ্ধি পেয়েছে বিজেপির ভোট। বামের ভোট রামে যাওয়ার প্রবণতা নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে বিস্তর আলোচনাও হয়েছে। সিপিএম তাদের ভোটের বাক্সবদল রোখার চেষ্টা করেও পারেনি। রাজনৈতিক মহলের অনেকের মতে, সার্বিক প্রেক্ষাপটে সেলিমের এই ধর্ম নিয়ে উন্নাসিকতা ছাড়ার বার্তা ‘তাৎপর্যপূর্ণ’।

বিজেপি, তৃণমূল প্রায়ই সিপিএমকে ‘অধার্মিক’ বলে কটাক্ষ করে। সিপিএম আদর্শগত প্রশ্নে তাকে প্রকাশ্যে বিঁধতেও পারে না। অথচ দলের মধ্যেও আস্তিক-নাস্তিক দ্বন্দ্ব রয়েছে। সেলিমের কথা শুনে উত্তর ২৪ পরগনার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সিপিএম নেতা বললেন, ‘‘সেলিমদাকে এই কথাগুলি সবই পরিস্থিতির চাপে বলতে হচ্ছে। একদা সুভাষদার (প্রয়াত সুভাষ চক্রবর্তী) তারাপীঠে পুজো দেওয়া দেওয়া নিয়ে পার্টিতে কম বিতর্ক হয়নি। আবার সেই সময়েই জ্যোতিবাবু বলেছিলেন, সুভাষের মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে। ওর মৃত্যুভয় ঢুকে গিয়েছে।’’ সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য থাকাকালীন রেজ্জাক মোল্লার হজ করতে যাওয়া নিয়েও দলে তীব্র সমালোচনা হয়েছিল। হজ থেকে ফিরে এসে রেজ্জাক বলেছিলেন, ‘‘মার্ক্সের থেকে মহম্মদ বড়।’’ পরে সেই রেজ্জাককে দল থেকে বহিষ্কার করেছিল সিপিএম। তিনি তৃণমূলে যোগ দিয়ে দ্বিতীয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারে মন্ত্রীও হয়েছিলেন।

সোমবারের বক্তৃতায় দলের তরুণ প্রজন্মের উপর আস্থা দেখিয়ে সেলিম বলেন, ‘‘অনেকে বলেন ওল্ড ইজ় গোল্ড। আমি তা মনে করি না। প্রতিটি প্রজন্মের সামনে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ আসে। সেই প্রজন্মকেই তার মুখোমুখি হতে হয়।’’ এই প্রসঙ্গেই জ্যোতিবাবুর রাজনৈতিক কার্যধারার প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন সেলিম। সিপিএমের অনেকের মতে, দলের সম্মেলন প্রক্রিয়ার আগে প্রবীণদের বার্তা দিতে চেয়েছেন সেলিম। সোমবারের আলোচনাসভায় বক্তৃতা করেন চিত্র পরিচালক গৌতম ঘোষও। গৌতম জ্যোতিবাবুকে নিয়ে একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেছিলেন।

Md Salim Jyoti Basu CPM Leaders
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy