Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

পশ্চিমবঙ্গে গ্রামে গ্রামে আয় সেই তলানিতে

আমলাশোলের কথা মনে পড়ে! মেদিনীপুরের যে গ্রামে অনাহারের জেরে মৃত্যুর খবর সামনে আসায় জোর নাড়া খেয়েছিল বাংলা! সাড়া পড়ে গিয়েছিল গোটা দেশেও। ২০০৪ সালের কথা।

শঙ্খদীপ দাস
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৫ ০৪:০১
Share: Save:

আমলাশোলের কথা মনে পড়ে! মেদিনীপুরের যে গ্রামে অনাহারের জেরে মৃত্যুর খবর সামনে আসায় জোর নাড়া খেয়েছিল বাংলা! সাড়া পড়ে গিয়েছিল গোটা দেশেও।

২০০৪ সালের কথা। বাঁশপাহাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের সিপিএম সদস্য কৈলাস মুড়া প্রথম সামনে আনেন না-খেতে পেয়ে পাঁচ জনের মারা যাওয়ার কথা। তার পরপরই কেন্দ্রের এক সমীক্ষা এবং বাজেট-পূর্ববর্তী আর্থিক সমীক্ষাতেও জানা যায়, গোটা দেশের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে দু’‌বেলা দু’মুঠো খেতে না পাওয়া মানুষের সংখ্যা সব থেকে বেশি। সে সময় মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সরকার অবশ্য রিপোর্টের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। কিন্তু পালাবদলের চার বছর পরে আজ দেখা যাচ্ছে, বেশি বাম জমানার শেষ পর্বেও কতটাই দীর্ণ ছিল পশ্চিমবঙ্গের গ্রাম! ২০১১ সাল পর্যন্ত নেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হিসেব কষে দেখা যাচ্ছে, গ্রামে ৮২%-এর বেশি পরিবারে সারা মাসের আয় ৫ হাজার টাকাও নয়! চার-পাঁচ জনের পরিবারে ওই টাকায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাবারের সঙ্কুলান হতে পারে কি?

কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী চৌধুরী বীরেন্দ্র সিংহ আজ যে আর্থসামাজিক জাতিভিত্তিক জনগণনার রিপোর্ট প্রকাশ করেছেন তাতে স্পষ্ট বলা রয়েছে, দেশের অন্যান্য অংশের তুলনায় পূর্বের রাজ্যগুলির গ্রামীণ পরিবারগুলির অবস্থা খুবই খারাপ!

সবিস্তার পড়তে ক্লিক করুন

কিন্তু কতটা খারাপ? দেখা যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের গ্রামে প্রতি একশোটি পরিবারের মধ্যে মাত্র ৮টিতে এক জনের বাঁধা মাইনের কাজ রয়েছে। রাজ্যে কোনও নতুন শিল্প নেই, যেগুলি ছিল সেগুলিও বন্ধের মুখে।

চাষবাষের কাজ করেন প্রায় ১৯% মানুষ। বাকিদের মধ্যে শতকরা ৫৮ জনই দিন মজুর। রাজ্যে ছোট উদ্যোগও বিশেষ নেই। হিসেব মতো গ্রামে প্রতি একশোটি পরিবারের মধ্যে হাতে গুনে মাত্র তিনটি পরিবার পাওয়া যাবে যারা ছোট দোকানপাট চালিয়ে সংসার চালায়। বড় কথা হল, স্রেফ ভিক্ষাবৃত্তি করে পেট চালায় প্রায় দু’লক্ষ পরিবার।

গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের এক কর্তা আজ বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের ৮২% পরিবারের আয় মাসে ৫ হাজার টাকার কম মানে। বহু পরিবারের ক্ষেত্রে তা ২-৩ হাজার, এমনকী, কারও ক্ষেত্রে এক হাজার টাকাও নয়! স্বাভাবিক ভাবেই পড়েছে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রেও এর প্রভাব পড়েছে।’’ আজকের রিপোর্টে অবশ্য স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে কোনও তথ্য তুলে ধরা হয়নি। তবে সমীক্ষা অনুযায়ী রাজ্যের গ্রামাঞ্চলে শিক্ষার অবস্থাও খুবই শোচনীয়। বাংলার গ্রামে-গঞ্জে প্রায় ৭ কোটি ৮ লক্ষ মানুষ বাস করেন। তার মধ্যে সাক্ষরের সংখ্যা ২ কোটি ৩৭ লক্ষ। সাক্ষরতার হার মাত্র ৩৩.৫ শতাংশ। এর মধ্যে উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়েছে মাত্র ৭ শতাংশ। আর মাধ্যমিক পাশ করেছে মাত্র সাড়ে ৩ শতাংশ মানুষ।

তা হলে আমলাশোলকে পিছনে ফেলে রেখে বাম জমানায় কতটা এগোতে পেরেছে পশ্চিমবঙ্গ? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গিয়েছিলেন আনাহারের আমলাশোলে। তবে এই আমলে কতটা বদলেছে বাংলার গ্রাম, ছবিটা জানা যাবে পরের সমীক্ষায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE