চলন্ত ট্রেনে দু’জন সেনা জওয়ানের বিরুদ্ধে গণধর্ষণের অভিযোগ করেছিলেন দমদমের বাসিন্দা ১৪ বছরের এক মেয়ে। কিন্তু, মঙ্গলবার হাওড়া আদালতে পেশ হওয়া তার শারীরিক পরীক্ষার রিপোর্ট মুহূর্তে বদলে দিল গোটা চিত্র!
পুলিশ জানিয়েছে, মঙ্গলবার হাওড়া জেলা আদালতের (ফার্স্ট ক্লাস ৬ কোর্ট)-এ বিচারক শাবানা পারভিনের এজলাসে যে মেডিক্যাল রিপোর্ট পেশ করা হয়েছে তাতে জানানো হয়েছে, নাবালিকা ওই মেয়েটির শরীরে চিকিৎসকেরা বাহ্যিক আঘাতের কোনও চিহ্ন পাননি। এমনকী, ওই মেয়ের গোপনাঙ্গে কোনও ক্ষত চিহ্ন নেই বলেও রিপোর্টে উল্লেখ করেছেন চিকিৎসকেরা। ছ’বার করে গণধর্ষণ করলে একটি ১৪ বছরের মেয়ের যে রকম শারীরিক অবস্থায় থাকার কথা সে সবও লক্ষ করেননি তাঁরা! এর পরেই গোটা ঘটনা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। কেন না মধুপুরের হাসপাতাল সোমবার জানিয়েছিল, ওই নাবালিকার শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। প্রাথমিক পরীক্ষার পর তারা জানিয়েছিল ধর্ষণেরও প্রমাণ মিলেছে। যা অভিযোগকীরিনীর বয়ানের সঙ্গেও মিলেছে। কিন্তু, হাওড়ার হাসপাতালের রিপোর্ট মধুপুর হাসপাতালকে নস্যাত করায় ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।
পুলিশ সূত্রের খবর, রবিবার হাওড়া জিআরপি-তে এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ফোন করে। তাঁরা জানায়, দমদম থেকে একটি মেয়ে পালিয়ে গিয়েছে। হাওড়া জিআরপি দ্রুত রেল পুলিশ ও অন্যান্য জিআরপিকে বিষয়টি জানায়। হোয়াটসঅ্যাপ-এ দেওয়া হয় মেয়েটির ছবিও। রেল ও জিআরপি পুলিশ যৌথ ভাবে তদন্ত শুরু করে। পরে তারা জানতে পারে, অমৃতসর এক্সপ্রেসে উঠেছে ওই কিশোরী। রবিবার রাতেই ঝাড়খণ্ডের মধুপুর স্টেশনে অমৃতসর এক্সপ্রেস থামিয়ে তল্লাশি শুরু হয়। সেনা জওয়ানদের জন্যে সংরক্ষিত কামরা থেকে উদ্ধার করা হয় ওই কিশোরীকে। তদন্তকারী দল জানিয়েছে, সে সময় এক জওয়ান মঞ্জরীশ ত্রিপাঠী পালানোর চেষ্টা করলে তাকে আটক করা হয়। এর পরে ওই কিশোরী ও জওয়ানকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে তদন্তকারী দল। সে সময় ওই কামরায় যে ক’জন যাত্রী ছিল তাঁদের প্রত্যেকের ভিডিও তুলে রাখেন পুলিশের ওই দলটি।
রেল পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মেয়েটি জানায় ফেসবুকে লুধিয়ানার এক যুবকের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব হয়। মেয়েটি বাড়ি থেকে পালিয়ে ওই যুবকের কাছেই যাচ্ছিল। যে কারণে অমৃতসর এক্সপ্রেসে ওঠে ওই নাবালিকা। কামরা খোঁজার সময়ে সেনাদের জন্যে সংরক্ষিত কামরায় চলে ওঠে সে। পরে মদ খাইয়ে বাথরুমে নিয়ে গিয়ে দু’জন জওয়ান তাকে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। মদত দেয় ধৃত জওয়ান মঞ্জরীশ। এর পরে ওই সেনা জওয়ানরা তাকে চিৎকার চেঁচামেচি না করে শুয়ে থাকতে বলে। চিৎকার করলে ট্রেন থেকে তাকে ফেলে দেওয়ারও হুমকি দেয় বলে অভিযোগ।
পরে ভিডিও ফুটেজটি মেয়েটিকে দেখানো হলে অভিযুক্ত দু’জন জওয়ানকে শনাক্ত করে। তত ক্ষণে অবশ্য ট্রেন থেকে নেমে গিয়েছেন অভিযুক্তরা। তদন্তকারীদের মনে প্রশ্ন, বিষয়টি বলতে কেন এতটা সময় ব্যয় করল মেয়েটি?
গোটা বিষয়টি জানার পরে সোমবার রাত আড়াইটে নাগাদ হাওড়ায় নিয়ে আসা হয় ওই জওয়ান ও মেয়েটিকে। হাওড়া জিআরপি ও রেল পুলিশ দফায় দফায় তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। মঙ্গলবার দুপুরে হাওড়া আদালতে নিয়ে আসা হয় দু’জনকেই। মেডিক্যাল পরীক্ষা করানো হয় মেয়েটির। তার পরেই কার্যত ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।
মেয়েটির শারীরিক অবস্থা পরীক্ষার জন্যে যে মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়েছে সেই চিকিৎসকেরা পুলিশকে যে রিপোর্ট দিয়েছেন, তা এ দিন আদালতে পেশ করা হয়। চিকিৎসকেরা জানান, ১৪ বছরের একটি মেয়েকে ছ’বার করে গণধর্ষণ করা হলে তার হেঁটে চলার ক্ষমতা থাকবে না। গোপনাঙ্গে গভীর ক্ষত থাকার সম্ভাবনা থাকে। এক্ষেত্রে সে সব নেই! তার পরেই কার্যত গোটা ঘটনা নিয়েই বড়সড় প্রশ্ন চিহ্ন উঠে গেল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy