খোলাচিঠি: ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দয়ালবন্ধুবাবুর সেই চিঠি।
পরিসংখ্যান বলছে, এ দেশে প্রতি বছর সাপের কামড়ে মৃত্যু হয় ৪০ থেকে ৫০ হাজার মানুষের। যার সংখ্যাগরিষ্ঠই পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা। তার মধ্যে আবার চন্দ্রবোড়ার বিষে মৃত্যু সবচেয়ে বেশি।
সর্প-দংশনে মৃত্যুর এই শোচনীয় ছবি সম্পর্কে ফেসবুকে মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে ‘খোলাচিঠি’ লিখলেন এক প্রবীণ সরকারি চিকিৎসক দয়ালবন্ধু মজুমদার। চোখের চিকিৎসক হিসেবে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত হলেও দীর্ঘদিন ধরে তিনি সাপের কামড়ের চিকিৎসা নিয়ে কাজ করছেন। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা ফেসবুক-চিঠিতে তিনি জানান, তামিলনাড়ুর সাপের বিষ থেকে তৈরি ‘অ্যান্টি ভেনাম সিরাম’ (এভিএস) পশ্চিমবঙ্গে সাপের কামড়ে কোনও কাজ করছে না।
তিনি লিখেছেন, সময়মতো যথেষ্ট পরিমাণ এভিএস দিয়েও গত ক’মাসে বাঁকুড়া, ভাতার-সহ রাজ্যের একাধিক জায়গায় সরকারি হাসপাতালে, এমনকী এসএসকেএম-এ আসা রোগীকেও বাঁচানো যায়নি। মুখ্যমন্ত্রী যাতে অবিলম্বে পশ্চিমবঙ্গের সাপ, বিশেষ করে এ রাজ্যের চন্দ্রবোড়ার বিষ সংগ্রহ করে তার থেকে এভিএস তৈরির অনুমতি দেন, সেই আর্জি জানিয়েছেন ওই সরকারি চিকিৎসক।
একই আবেদন লিখিত ভাবে জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিকর্তা ও স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তার কাছে জমা দিয়েছেন দয়ালবন্ধুবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘এ রাজ্যে ২০০৮-২০০৯ সালের পর থেকে এভিএস তৈরি করা হচ্ছে না। তা আনা হচ্ছে তামিলনাড়ুর মহাবলীপুরমের একটি সংস্থা থেকে। তারা ওখানকার সাপের বিষ থেকে এভিএস তৈরি করছে, যা পশ্চিমবঙ্গের সর্প দংশনে কাজ করছে না। ‘এলাকাভিত্তিক এভিএস’ তৈরি করা দরকার।’’ ২০০৯-এর পরেও এ রাজ্যের বিভিন্ন সাপের বিষ সংগ্রহ করে নমুনা হিসেবে পাঠানো হত তামিলনাড়ুতে। তা থেকে এভিএস তৈরি করে পশ্চিমবঙ্গে পাঠাত তামিলনাড়ু। ২০১৫ সালের পরে সেই প্রক্রিয়াও বন্ধ হয়ে যায়।
দয়ালবন্ধুবাবুর আবেদনের পর অন্তত ২০ জন ও একাধিক সংগঠন একই আবেদন জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন। বিজ্ঞানকর্মী সৌম্য সেনগুপ্ত, সর্প বিশেষজ্ঞ বিশাল সাঁতরার মতো অনেকের মতে, ২০১৫-১৬ সালেই সাপের কামড়ে মৃতদের পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে রাজ্য সরকারের ৮ কোটি টাকার বেশি খরচ হয়েছে। এভিএস-এ কাজ হলে এত ক্ষতিপূরণ দিতে হয় না।
দয়ালবন্ধুবাবুর চিঠির প্রাপ্তিস্বীকার করে স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘বিষয়টি স্বাস্থ্যসচিব অনিল বর্মাকে জানানো হয়েছে।’’ দেবাশিসবাবুর কথায়, ‘‘এ রাজ্যের সাপের বিষ ও তামিলনাড়ুর সাপের বিষের মধ্যে রাসায়নিক মৌলের দিক থেকে কী পার্থক্য রয়েছে, তা জানিয়ে দয়ালবন্ধুবাবুকে একটা রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।’’
গত ৩০ অগস্ট এসএসকেএমে ডোমজুরের বাসিন্দা ৬ বছরের মৌপর্ণা দাসের মৃত্যু হয় চন্দ্রবোড়ার কামড়ে। চিকিৎসকদের দাবি, সময়মতো তাকে হাসপাতালে আনা হয়েছিল এবং ৪০টি এভিএস দেওয়া হয়েছিল। বাঁকুড়ার বাসিন্দা কনক মাল্য নামে এক মহিলা বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজে মারা যান। তাঁকেও চন্দ্রবোড়ায় কামড়েছিল। সময়মতো ৩০টি এভিএস দেওয়া হয়েছিল। বাঁচানো যায়নি। অথচ, এভিএস কাজ করলে এমনটা হওয়ার কথাই নয়, দাবি চিকিৎসকদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy