Advertisement
E-Paper

মুকুল-মান্নান ফের বৈঠকে নয়া জল্পনা

দিল্লির পরে কলকাতা। শুক্রবার রাতে দক্ষিণ কলকাতার ব্রড স্ট্রিটে কংগ্রেসের এক আস্তানায় রাজ্য কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন তৃণমূলের একদা দু’নম্বর মুকুল রায়। মুকুলের সঙ্গে বৈঠক করা কংগ্রেস নেতাদের মধ্যে ছিলেন খোদ আব্দুল মান্নান। যাঁর দায়ের করা জনস্বার্থ মামলার জেরেই সারদা কেলেঙ্কারিতে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।

সঞ্জয় সিংহ

শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৫ ০৩:৩০

দিল্লির পরে কলকাতা।

শুক্রবার রাতে দক্ষিণ কলকাতার ব্রড স্ট্রিটে কংগ্রেসের এক আস্তানায় রাজ্য কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন তৃণমূলের একদা দু’নম্বর মুকুল রায়। মুকুলের সঙ্গে বৈঠক করা কংগ্রেস নেতাদের মধ্যে ছিলেন খোদ আব্দুল মান্নান। যাঁর দায়ের করা জনস্বার্থ মামলার জেরেই সারদা কেলেঙ্কারিতে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।

মুকুলের সঙ্গে আলোচনায় মান্নান ছাড়াও ছিলেন প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য। মুকুল নিজে অবশ্য প্রকাশ্যে এই বৈঠককে গুরুত্ব দিতে নারাজ। তাঁর কথায়, ‘‘ওটা সৌজন্য সাক্ষাৎ। প্রদীপদা রাজ্যসভার সদস্য। সংসদে তাঁর সঙ্গে আমার রোজ দেখা হয়। কলকাতায় থাকলে চা খেয়ে যেতে বলেছিলেন প্রদীপদা। তাই গিয়েছিলাম।’’

শুক্রবারের আগেও দিল্লিতে প্রদীপবাবুর বাড়িতে কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে এক দফা বৈঠক করেছেন মুকুল। তা ছাড়া, যোগাযোগ করেছেন রাহুল গাঁধী থেকে শুরু করে সোমেন মিত্র, দীপা দাশমুন্সির সঙ্গে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলছেন, ‘‘মুকুল কংগ্রেসে যোগ দিতে চেয়ে আমাদের কাছে প্রস্তাব দিয়েছেন। আমাদের সর্বভারতীয় নেতৃত্ব বিষয়টি বিবেচনা করছেন। সব দিক খতিয়ে দেখেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’

দিল্লিতে প্রদীপবাবুর বাড়ির বৈঠকে দলের প্রথম সারির নেতাদের সঙ্গে হাজির ছিলেন মান্নানও। তিনি এ দিন দাবি করেন, ‘‘মুকুলই বারবার আমাদের সঙ্গে বসতে চাইছিল। রাজনীতিতে কেউই অচ্ছুৎ নয়। তাই ওর সঙ্গে বসে রাজনৈতিক আলোচনা করেছি।’’ রাজনীতির কী কথা হল মুকুলের সঙ্গে। প্রদীপবাবু জানাচ্ছেন, রাজ্য-রাজনীতির বর্তমান পরিস্থিতি নিয়েই কথা হয়েছে। দিল্লিতেও এই বিষয়ে দু’পক্ষে কথা হয়েছিল।

সারদা-কেলেঙ্কারিতে সিবিআই তদন্তের নির্দেশের পরে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ক্রমেই দূরত্ব বেড়েছে তাঁর একদা আস্থাভাজন মুকুলের। মমতা দলকে সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে সরব হওয়ার নির্দেশ দিলেও উল্টো পথে হেঁটে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সহযোগিতার কথাই বলেছিলেন মুকুল। আদালতের নজরদারিতে সিবিআই তদন্ত দাবি করে মামলা করার ব্যাপারেও দলের অন্দরে আপত্তি তুলেছিলেন তিনি। এর পরেই ধীরে ধীরে মুকুলকে দলের সব পদ থেকে ছেঁটে ফেলেন মমতা। আপাতত সাধারণ সাংসদ ছাড়া তৃণমূলে মুকুলের আর কোনও ভূমিকাই নেই।

তৃণমূল সূত্র বলছে, রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়ার ফলে অন্য দলের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন মুকুল। প্রাথমিক ভাবে তাঁর লক্ষ্য ছিল বিজেপি। যার পিছনে সারদা তদন্ত থেকে অব্যাহতি পাওয়ার উদ্দেশ্য ছিল বলেও তৃণমূল সূত্রের দাবি। কিন্তু সারদা কেলেঙ্কারিতে যাঁর দিকে সব চেয়ে বেশি অভিযোগের আঙুল উঠেছে, সেই মুকুলকে দলে নেওয়ার ব্যাপারে বিজেপির একাংশের তীব্র আপত্তি ছিল। তার পর লোকসভা ও বিধানসভার উপনির্বাচন এবং ৯২টি পুরসভার ভোটে তৃণমূলের বিপুল সাফল্যের পরে তাদের উৎসাহে আরও ভাটা পড়ে। বিজেপির দরজা কার্যত বন্ধ বুঝেই মুকুল কংগ্রেসে কড়া নাড়ছেন বলে অনেকের অভিমত।

মুকুল নিজে অবশ্য কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে বৈঠককে তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ খোঁজার চেষ্টা বলতে নারাজ। তাঁর কথায়, ‘‘গল্প ছড়ানো হচ্ছে। আমার সঙ্গে সংসদ চলাকালীন সব দলের সদস্যদের সঙ্গে দেখা হয়েছে। কথা হয়েছে। আমার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি।’’ কিন্তু প্রদীপবাবু এ দিন বলেন, ‘‘তৃণমূলের বর্তমান অবস্থা নিয়ে মুকুল যে অখুশি, তা বারবার আমাদের বুঝিয়েছে।’’ অন্য দিকে মান্নান জানিয়েছেন, তৃণমূলের রাজত্বে রাজ্যে যে অরাজক অবস্থা তৈরি হয়েছে তার প্রতিবাদে বিরোধী জোট গড়ে তোলা দরকার বলে মুকুল তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন।

কিন্তু যে মুকুলের সঙ্গে পথ চলতে বিজেপি সংশয়ী, সেই মুকুলকে নিতে কংগ্রেসের আগ্রহ কেন! বিশেষ করে মান্নানের হাত ধরেই যেখানে সারদা কেলেঙ্কারির সিবিআই তদন্ত হচ্ছে এবং অস্বস্তিতে পড়েছে রাজ্যের শাসক দল! মান্নানের বক্তব্য, ‘‘মুকুলের সঙ্গে বৈঠকের ফলে জনসাধারণের মনে বিভ্রান্তি তৈরির যে সম্ভাবনা রয়েছে, সেটা আমরা জানি। সেই কারণেই আগেভাগে আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে নিয়েছি আমি। আর মুকুলের সঙ্গে সারদা নিয়ে আমাদের কোনও কথা হয়নি।’’

এই ব্যাখ্যায় কি জনসাধারণের বিভ্রান্তি দূর করা যাবে? কংগ্রেস নেতাদেরই একাংশ বলছেন, সারদা কেলেঙ্কারি নিয়ে দল পথে নেমে আন্দোলন করেছে। রাজ্য নেতাদের আপত্তিতে দিল্লির নেতা কপিল সিব্বল রাজ্য সরকারের হয়ে মামলা লড়তে পারেননি। এর পর এই কেলেঙ্কারিতে যাঁর বিরুদ্ধে দল এত

দিন সরব ছিল, তাঁর সঙ্গেই গোপন বৈঠক মোটেই ভাল বার্তা দেবে না। মুকুলের সঙ্গে কথা বলে দল দুর্নীতির সঙ্গে সমঝোতা করছে, এমনটা মনে করার সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে।

উত্তরে অধীরের বক্তব্য, ‘মুকুলের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু কিছু তো প্রমাণ হয়নি। তাঁর শাস্তিও হয়নি। অপরাধ প্রমাণ হলে উনি জেলে যাবেন। কিন্তু এখন আমরা ওঁকে আড়ালও করছি না মদতও দিচ্ছি না।’’ অধীরের মতে, মুকুল তৃণমূলে কোণঠাসা। কিন্তু তিনি রাজনীতিটা করতে চান। কংগ্রেস তাঁকে সেই সুযোগটা করে দিতে আগ্রহী। যদিও মুকুলকে দলে নেওয়ার ব্যাপারটা যে পুরোপুরি হাইকম্যান্ডের উপরে নিভর্রশীল, সেটাও মনে করিয়ে দিচ্ছেন তিনি।

মুকুলের সঙ্গে কংগ্রেস নেতাদের বৈঠক নিয়ে এ দিন প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করতে চাননি তৃণমূল নেতৃত্ব। বস্তুত, মুকুলের প্রতি মনোভাব কী হবে, তা নিয়ে দলের অন্দরেই জল্পনা রয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, প্রাক্তন সবর্ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক পুরভোটে নিষ্ক্রিয় থাকার পরে তাঁর প্রতি এখন নরম অবস্থান নেওয়ারই পক্ষপাতী শীর্ষ নেতৃত্ব। কিন্তু কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে মুকুলের ওঠাবসা কি দলের মনোভাব পাল্টে দেবে? জবাবে এক শীর্ষ তৃণমূল নেতার মন্তব্য, ‘‘দল সব কিছুই নজরে রাখছে।’’

আর কী বলছেন মুকুল নিজে? এ দিন তাঁর মন্তব্য, ‘‘আমি এখনই এই বিষয়ে কিছু বলছি না। আমি এখনও তৃণমূলের সাংসদ। জুলাই মাসের পরে যা বলার বলব।’’ কেন জুলাই? মুকুল জানান, ওই সময়ের মধ্যে বাকি ৭টি পুরসভার ভোট হয়ে যাওয়ার কথা। রাজ্যের রাজনীতির ছবিটা আরও স্পষ্ট হবে। তখন তাঁর পক্ষে রাজনৈতিক অবস্থান সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হবে।

আপাতত মুকুল নানা আলাপ-আলোচনায় রাজনীতির জল মেপে চলবেন বলেই তাঁর অনুগামীদের মত।

abpnewsletters Abdul Mannan Mukul Roy congress trinamool tmc mamata bandopadhyay Adhir chowdhury pradip bhattacharya sanjay singha
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy