Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

চিকিৎসক নেই, জেলে বিপন্ন মনোরোগীরা

তাঁদের কেউ দণ্ডিত। কেউ বা বিচারের অপেক্ষায়। তবে তাঁদের মিল একটি জায়গায়। সকলেই মনোরোগী। কিন্তু রাজ্যের কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার এবং জেলার জেলগুলিতে মানসিক ভারসাম্যহীন বন্দিদের চিকিৎসা প্রায় বন্ধ। মনোবিদ ও মনোচিকিসকের অভাবে ওই সব রোগীকে নিয়ে সমস্যায় পড়েছেন জেল-কর্তৃপক্ষ।

সোমনাথ চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৫ ০৪:৪৭
Share: Save:

তাঁদের কেউ দণ্ডিত। কেউ বা বিচারের অপেক্ষায়। তবে তাঁদের মিল একটি জায়গায়। সকলেই মনোরোগী। কিন্তু রাজ্যের কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার এবং জেলার জেলগুলিতে মানসিক ভারসাম্যহীন বন্দিদের চিকিৎসা প্রায় বন্ধ। মনোবিদ ও মনোচিকিসকের অভাবে ওই সব রোগীকে নিয়ে সমস্যায় পড়েছেন জেল-কর্তৃপক্ষ।

এখন রাজ্যের বিভিন্ন জেলে ৪০৭ জন মানসিক ভারসাম্যহীন বন্দি আছেন। তাঁদের মধ্যে ১৬৯ জন সাজাপ্রাপ্ত, বাকিরা বিচারাধীন। কারা দফতরের খবর, সেন্ট্রাল জেল এবং বিভিন্ন জেলা জেলের বন্দিদের চিকিৎসার জন্য স্বাস্থ্য দফতর থেকে ৪২ জন চিকিৎসককে ডেপুটেশনে নিয়োগ করা হয়। ব্রিটিশ আমল থেকে এই ব্যবস্থাই চলে আসছে। কিন্তু এখন জেলে আছেন মাত্র ১১ জন চিকিৎসক। বাকি পদগুলি খালি। চুক্তির ভিত্তিতে নিযুক্ত কিছু চিকিৎসক আছেন। কিন্তু তাঁদের মধ্যে মনোরোগের চিকিৎসক নেই। সেন্ট্রাল জেলগুলিতে মনোবিদ ছিলেন। তাঁদের বেশির ভাগই কাজ ছেড়ে দিয়েছেন। এখন কাজ করছেন মাত্র তিন জন।

কারা-কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্য দফতরের কাছে মনোরোগের চিকিৎসক চেয়েছিলেন। স্বাস্থ্য দফতর থেকে তাঁদের জানানো হয়, ইনস্টিটিউট অব সাইকিয়াট্রির কর্তৃপক্ষই জেলে চিকিৎসক পাঠাবেন। ওই সংস্থার পক্ষ থেকে কারা-কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়, অ্যাম্বুল্যান্স পাঠিয়ে চিকিৎসকদের জেলে নিয়ে যেতে হবে। এখানেই সমস্যায় পড়েছেন কারাকর্তারা।

এক কারাকর্তা জানান, প্রতিটি সেন্ট্রাল জেলে একটি করে অ্যাম্বুল্যান্স রয়েছে। কিন্তু তার প্রায় সব ক’টিই অকেজো। তাই বন্দি মনোরোগীদের চিকিৎসা নিয়েও সমস্যা দেখা দিয়েছে। কারা দফতরের খবর, শুধু দমদম জেলেই ৮০ জন মানসিক ভারসাম্যহীন বন্দি রয়েছেন। আলিপুর, প্রেসিডেন্সি, মেদিনীপুর বহরমপুর এবং উত্তরবঙ্গ জেলেও আছেন বেশ কিছু মনোরোগী। খুব জরুরি হয়ে পড়লে আদালতের নির্দেশে কাউকে কাউকে সরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয় বটে। কিন্তু জেলে মনোরোগী বন্দিদের নিয়মিত কাউন্সেলিং বা চিকিৎসা হচ্ছে না।

অ্যাম্বুল্যান্স কেনা হচ্ছে না কেন?

রাজ্যের কারামন্ত্রী হায়দার আজিজ সফি জানান, ছ’টি অ্যাম্বুল্যান্স কেনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। অর্থ দফতর অনুমোদন দিলেই কেনা হবে। কয়েক জন বিধায়ককে তাঁদের উন্নয়ন তহবিল থেকে টাকা দিতে বলা হয়েছে। মনোচিকিৎসকের অভাব প্রসঙ্গে সফি বলেন, ‘‘চিকিৎসকের সংখ্যা সব জায়গাতেই কম। তাই সমস্যা রয়েছে। স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সপ্তাহে দু’দিন ওই চিকিৎসকেরা জেলে গিয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন বন্দিদের দেখবেন।’’

কারামন্ত্রী জানান, পুরুলিয়ায় একটি মহিলা সংশোধনাগার রয়েছে। মানসিক ভারসাম্যহীন বন্দিদের আলাদা রাখার জন্য সেখানে ২০০ শয্যার একটি হাসপাতাল হবে। মন্ত্রিসভার অনুমোদন হলেই শুরু হয়ে যাবে কাজ। রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘অনেক জায়গাতেই চিকিৎসক কম। আমরা চিকিৎসক নিয়োগ শুরু করেছি। জেলে মনোচিকিৎসক যাচ্ছেন কি না, জানা নেই। খোঁজখবর নেব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE