—প্রতীকী ছবি।
একা রাম ‘এল নিনো’ বা দুষ্টু ছেলেতেই রক্ষা নেই, দোসর সুগ্রীব হয়ে দেখা দিয়েছে আরব সাগরের ঘূর্ণিঝড় ‘বিপর্যয়’। এই দুই প্রাকৃতিক উপদ্রবই এ বার গাঙ্গেয় বঙ্গে বর্ষার পথে কাঁটা ছড়িয়ে দিয়েছে। নির্ঘণ্ট মেনে চললে ১১ জুন অর্থাৎ রবিবারেই বঙ্গে বর্ষার পদার্পণের কথা ছিল। কিন্তু এল নিনো (সাগরজলের উষ্ণতা বৃদ্ধি) আর ঘূর্ণিঝড় পরিস্থিতি এমন ভাবে ঘুলিয়ে দিয়েছে যে, বর্ষা এ বার কবে দক্ষিণবঙ্গে ঢুকবে, সেই বিষয়ে আবহবিদেরা কার্যত অন্ধকারে।
অদূরে আষাঢ়। কিন্তু বর্ষা সমাগমে স্বস্তি উপভোগের বদলে তীব্র গরমে বাংলা ও বাঙালি অতিষ্ঠ। উপকূলবর্তী এলাকায় ভ্যাপসা গরম চলছে, অন্য দিকেই আগামী কয়েক দিন রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলে আবার তাপপ্রবাহের আশঙ্কার কথাও জানিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর। গাঙ্গেয় বঙ্গে বিক্ষিপ্ত ভাবে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টি এবং ঝোড়ো হাওয়া হতে পারে। কিন্তু তাতে গরমের দাপট থেকে পুরোপুরি রেহাই মিলবে, এমন আশা ক্ষীণ।
উত্তরবঙ্গের পাহাড়ে ও ডুয়ার্সের পরিস্থিতি তুলনায় ভাল। ওই সব এলাকায় দিন দুয়েকের মধ্যে বর্ষা ঢুকতে চলেছে বলে জানিয়েছেন আবহবিদেরা। উত্তরবঙ্গের একাংশে মৌসুমি বায়ুর আবির্ভাবের পরে গাঙ্গেয় বঙ্গের বর্ষা পরিস্থিতি কী হতে চলেছে, সেটা স্পষ্টতর হবে বলে মনে করছেন হাওয়া অফিসের বিজ্ঞানীরা। তবে আবহবিদদের অনেকের মতে, ১৫ জুনের আগে গাঙ্গেয় বঙ্গে বর্ষা সমাগমের আশা তেমন নেই। এই পরিস্থিতিতে মৌসম ভবন এ দিন জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় ‘বিপর্যয়’ কচ্ছ ও করাচি উপকূলের মাঝামাঝি কোথাও আছড়ে পড়তে পারে। তার ফলে আবার বর্ষা ব্যাহত হবে কি না, সেই প্রশ্ন উঠছে। তবে আবহবিদদের অনেকের বক্তব্য, কচ্ছ উপকূলে পৌঁছলে ওই ঘূর্ণিঝড় পূর্ব ভারতে তেমন প্রভাব ফেলতে পারবে না।
বর্ষা এ বার এমন দুর্বল কেন?
মৌসম ভবনের প্রাক্তন ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল গোকুলচন্দ্র দেবনাথের ব্যাখ্যা, প্রশান্ত মহাসাগরের জলের উষ্ণতা স্বাভাবিকের থেকে বেশি (এল নিনো) হওয়ায় এ বার মৌসুমি বায়ু যে দুর্বল হবে, তা জানা ছিল। তার পরে বর্ষা কেরলে ঢোকার সময় আরব সাগরে ঘূর্ণিঝড় ‘বিপর্যয়’ (বাংলাদেশের দেওয়া নাম) তৈরি হওয়ায় সে-ও বর্ষার উপরে কুপ্রভাব ফেলেছে। বঙ্গোপসাগরে ওড়িশা-বাংলা উপকূলে এই সময় নিম্নচাপ তৈরি হলেও তা বর্ষার সহায়ক হয়। কিন্তু প্রশান্ত মহাসাগরের একটি শক্তিশালী টাইফুনের প্রভাবে সেই সম্ভাবনাও জোরালো হচ্ছে না।
প্রবীণ আবহবিজ্ঞানী গোকুলচন্দ্র আরও একটি বিষয়ে জোর দিচ্ছেন। তিনি জানান, এ বার গ্রীষ্মে এক ধরনের উলটপুরাণ লক্ষ করা গিয়েছে। গরমকালে রাজস্থানের মরু এলাকার তাপমাত্রা অনেকটাই উপরে থাকে এবং তার ফলে স্থানীয় ভাবে কিছু নিম্নচাপ তৈরি হয়। রাজস্থান থেকে উত্তর ভারত পর্যন্ত উত্তাপের ফলে বাতাস হালকা হয়ে যায় এবং সেই শূন্যস্থান পূরণ করে জলীয় বাষ্প। এ বার গরমে মরু এলাকার তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে ৮-১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নীচে ছিল। প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে সেখানে। গত তিন দশকে দিল্লিতে মে মাসে তাপমাত্রা এত কম কখনও ছিল না। উল্টো দিকে, গরমকালে জলীয় বাষ্পের অভাবে শুষ্ক গরম এবং তাপপ্রবাহ পেয়েছে গাঙ্গেয় বঙ্গ। জলবায়ুগত এই পরিবর্তনের সঙ্গেও বর্ষার বিলম্বের সম্পর্ক খুঁজতে চাইছেন আবহবিদেরা।
বর্ষার চরিত্রবদল নিয়েও নানা প্রশ্ন আছে দীর্ঘ কাল ধরে। অনেকেই বলছেন, গত কয়েক বছরে বর্ষার আগমনে বিলম্ব হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, কেরলে সময়মতো বর্ষা পৌঁথে গেলেও বঙ্গে আসার আগে মাঝপথে থমকে গিয়েছে সে। জুনে বর্ষার শক্তিও তেমন বজায় থাকছে না। বরং বর্ষণে ঘাটতি হচ্ছে। এ বারেও তেমনই ইঙ্গিত আছে। তাই অনেকের প্রশ্ন, বর্ষার ক্যালেন্ডার বা বর্ষাপঞ্জিই কি তা হলে বদলে যাচ্ছে?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy