Advertisement
E-Paper

বাড়ন্ত মিড ডে মিলের চাল, পড়ুয়াদের খাওয়াতে অন্য স্কুলে ‘হাত পাততে’ হচ্ছে জামালপুরের শিক্ষকদের

পড়ুয়া পিছু চাল খাদ্য দফতর থেকে বরাদ্দ হয়ে আসে স্থানীয় রেশন ডিলারের গুদামে। ডিলার বিডিওর সুপারিশ অনুযায়ী সেই চাল স্কুলে স্কুলে পৌঁছে দেন। জামালপুরে এই প্রক্রিয়া মুখ থুবড়ে পড়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০২৩ ১২:৪৫
Midday meal crisis in bardhaman’s jamalpur area sparks controversy.

—প্রতীকী ছবি।

কাগজে, কলমে চাল মজুত আছে। কিন্তু বাস্তব হল, চালের অভাবে অন্য স্কুলের কাছে হাত পাততে হচ্ছে স্কুলকে! পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর ব্লকের একাধিক স্কুলে এখন মিড ডে মিলের চাল নিয়ে চলছে ব্যাপক তর্কবিতর্ক। অভিযোগ উঠছে, পড়ুয়াদের খাওয়ার জন্য বরাদ্দ করা সরকারি চাল উধাও হয়ে যাচ্ছে প্রশাসন এবং ডিলারের যোগসাজশে। তাই স্কুল পড়ুয়াদের খাবার পাতে চাল বাড়ন্ত। জেলাশাসক সমস্ত অভিযোগ তদন্ত করে দেখবেন বলে জানিয়েছেন।

জামালপুর ব্লকে প্রাইমারি, আপার প্রাইমারি, শিশু শিক্ষাকেন্দ্র (এসএসকে) এবং মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্র (এমএসকে) মিলিয়ে স্কুলের সংখ্যা আড়াইশোর বেশি। পড়ুয়ার সংখ্যা ৩০ হাজারেরও বেশি। প্রশাসন সূত্রে খবর, পড়ুয়াদের মিড ডে মিলের জন্যে খাদ্য দফতর প্রতি তিন মাস অন্তর দুই হাজার কুইন্টালের কিছু বেশি চাল বিডিওর কাছে পাঠায়। সেই চাল পাঁচরা এলাকায় রেশন ডিলার রুমা চট্টোপাধ্যায়ের গুদামে মজুত হয়। বিডিওর সুপারিশ মেনে ডিলার স্কুলগুলির চাহিদা মত চাল পৌঁছে দেন।

স্কুলগুলির প্রধানশিক্ষক এবং শিক্ষিকাদের বক্তব্য, সব ঠিকঠাকই ছিল। কিন্ত গত পাঁচ-ছ’মাস হল স্কুলে চাল সরবরাহের সেই স্বাভাবিক ব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়েছে। বেরুগ্রামের একটি স্কুলের শিক্ষক বলেন,“আমরা চাহিদা মত মিড ডে মিলের চাল চেয়েও সময় মত পাচ্ছি না, এটাই বাস্তব।’’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই শিক্ষক বলেন, ‘‘এমনও দিন গিয়েছে যে স্কুলের পড়ুয়াদের মুখে মিড ডে মিল তুলে দেওয়ার জন্য অন্য স্কুল থেকে চাল ধার পর্যন্ত নিতে হয়েছে। পরে চাল আসার পর সেই চাল শোধ করা হয়েছে।’’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে চকদিঘি পঞ্চায়েত এলাকার একটি স্কুলের প্রধানশিক্ষক বলেন, “মিড ডে মিলের চাল পাওয়ার গোটা ব্যাপারটাতেই হঠাৎ ছন্দপতন হয়েছে । এখন বিডিওকে চালের কথা জানালে তিনি বলছেন, ডিলারকে জানাতে। তার পরেও আগের মত রুটিন মাফিক চাল স্কুলে আসছে না।’’ একই অভিযোগের কথা জানিয়েছেন আরও বেশ কয়েকটি স্কুলের প্রধানশিক্ষক এবং শিক্ষিকা। তাঁদের মধ্যে জ্যোৎশ্রীরাম পঞ্চায়েত এলাকার একটি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষিকা মিড ডে মিলের চাল ঠিক ভাবে না পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে সরাসরি জেলায় চিঠি পাঠিয়েছেন।

এ বিষয়ে জামালপুরের বিডিও শুভঙ্কর মজুমদার বলেন, “হ্যাঁ, এ কথা ঠিক যে সময় মত যথাযথ পরিমাণ মিড ডে মিলের চাল না পাওয়ার কথা বেশ কয়েকটি স্কুল চিঠি লিখে আমায় জানিয়েছে।’’ এমনটা হওয়ার জন্য বিডিও দোষ চাপিয়েছেন ডিলার রুমা চট্টোপাধ্যায়ের ঘাড়ে। বিডিওর দাবি, খাদ্য দফতরের গুদাম থেকে সংশ্লিষ্ট ডিলার চাল তুলেছেন। সেই চাল যথাযথ ভাবে স্কুলে স্কুলে পৌঁছে দেবার দায়িত্বও ডিলারের। সেটা না হওয়ায় দায় ডিলারকে নিতে হবে। বিডিওর কাছে জানতে চাওয়া হয়, ডিলারের এমন কাজের বিষয়ে জেলায় কি অভিযোগ জানানো হয়েছে? উত্তরে বিডিও বলেন, ‘‘চাল স্কুল স্কুলে না পৌঁছনো নিয়ে ডিলারের কাছে জবাব চাওয়া হয়েছিল। ডিলার জানান, গাড়ির সমস্যার জন্য তিনি চাল পৌঁছে দিতে পারেননি। পুজোর পর সব স্কুলে চাল পৌঁছে দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তাই লিখিত ভাবে জেলায় কিছু জানাইনি, তবে মৌখিক ভাবে সব জানিয়েছি।’’ বিডিও আরও বলেন ,‘‘স্টক রিপোর্ট তো ঠিকই আছে। ডিলার তো চালে ঘাটতির কোনও রিপোর্ট দেননি!’’ ডিলার রুমার অবশ্য সাফাই, কিছু দিনের জন্য গাড়ির সমস্যা ছিল। তাই সময় মতো স্কুলে স্কুলে মিড ডে মিলের চাল পৌঁছে দিতে তাঁর সমস্যা হয়েছে। পাশাপাশি, ডিলারের আরও দাবি, গুদামে রাখা কয়েকশো বস্তা চাল নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এর ফলে তিনি সমস্যায় পড়ে গিয়েছেন। সব শুনে জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজী জানিয়েছেন, গোটা বিষয়টি তিনি তদন্ত করে দেখবেন।

বিরোধীদের দাবি, প্রশাসনের সঙ্গে যোগসাজশ করে মিড ডে মিলের চাল নয়ছয় চলছে জামালপুরে। তাঁদের অভিযোগের তির স্থানীয় তৃণমূল নেতা থেকে শুরু করে প্রশাসনের কর্তাদের দিকেও। জেলাশাসক তদন্তের প্রতিশ্রুতি দিলেও তাতে আসল মাথারা আদৌ ধরা পড়বেন কি না, তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন বিরোধী নেতৃত্ব। বিজেপির দাবি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত। জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি জিতেন ডকাল বলেন, ‘‘মিড ডে মিলের চাল নিয়ে যে গুঞ্জন ছড়িয়েছে, তা নিয়ে আমরা উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।’’

Midday Meal Burdwan Midday Meal Crisis Jamalpur
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy