দীর্ঘক্ষণ বিদ্যুৎহীন ছিল মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের এই বাংলো। — নিজস্ব চিত্র।
বিদ্যুত্ গিয়েছিল বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটা নাগাদ। আর এল শুক্রবার সকাল এগারোটায়। টানা ১৮ ঘন্টা বিদ্যুৎহীন হয়ে রইল পশ্চিম মেদিনীপুরের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের বাংলো। অথচ অদূরেই বিদ্যুত্ দফতরের জোনাল অফিস। মেরেকেটে মিনিট পাঁচেকের হাঁটাপথ।
তাঁর বাংলো দীর্ঘক্ষণ বিদ্যুত্বিচ্ছিন্ন থাকা নিয়ে অবশ্য কোনও অনুযোগ করতে নারাজ জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা। তাঁর বক্তব্য, ‘‘এটা তেমন কিছু ব্যাপার নয়! ঝড়বৃষ্টির সময় হতেই পারে!’’ কিন্তু বিদ্যুৎ আসতে এতক্ষণ সময় লাগল কেন? জেলা পরিষদের বিদ্যুত্ কর্মাধ্যক্ষ অমূল্য মাইতির বক্তব্য, ‘‘লাইন মেরামতি করতে একটু সময় লেগেছে! তবে কাজটা তত্পরতার সঙ্গেই হয়েছে!’’
মেদিনীপুর শহরের বাসস্ট্যান্ডের অদূরেই রয়েছে জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের বাংলো। বাংলোর এক দিকে জেলা পুলিশ সুপারের বাংলো, অন্য দিকে পূর্ত দফতরের এক কর্তার বাংলো। ওই দু’টি বাংলো অবশ্য বিদ্যুত্-বিভ্রাটের কবলে পড়েনি। বৃহস্পতিবার বিকেলে শহরে ঝড়-বৃষ্টি হয়। বৃষ্টিপাতে প্রচণ্ড গরমের হাত থেকে সাধারণ মানুষ সাময়িক স্বস্তি পেয়েছেন ঠিকই, কিন্তু এই বৃষ্টিই অস্বস্তির কারণ হয়ে ওঠে গিরীশচন্দ্রবাবুর! ঝড়-বৃষ্টি যখন চলছে, তখন নিজের দফতরেই ছিলেন তিনি। সেখানেই তাঁর কাছে খবর আসে, বাংলো বিদ্যুত্বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। যোগাযোগ করা হয় বিদ্যুত্ দফতরের সঙ্গে। জানা যায়, ঝড়-বৃষ্টিতে তার ছিঁড়েই বিপত্তি। বিদ্যুৎ দফতর থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়, শীঘ্রই মেরামতির কাজ শুরু হবে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় বিদ্যুত্ বিভ্রাট কোনও নতুন ঘটনা নয়। কোথাও সাব-স্টেশনের ট্রান্সফরমারে সমস্যা দেখা দেয়, কোথাও বিদ্যুতের খুঁটির উপর গাছের ডাল ভেঙে পড়ে বিদ্যুত্ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এমন ঘটনা এড়াতে অবশ্য বর্ষার আগে বিদ্যুতের লাইন পরীক্ষা করার কথা। গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোর পরিকাঠামো খতিয়ে দেখার কথা। ত্রুটি থাকলে তা মেরামত করার কথা। বিদ্যুত্ দফতরের এক কর্তার অবশ্য সাফাই, ‘‘এটা তো বর্ষার বৃষ্টি নয়। বর্ষা শুরুই হয়নি। এ ভাবে বজ্র-বিদ্যুত্ সহ বৃষ্টির পূর্বাভাসও ছিল না!’’ একই সঙ্গে তিনি মানছেন, অনেক সময় চেষ্টা করেও পরিস্থিতি তড়িঘড়ি সামাল দেওয়া সম্ভব হয় না। ত্রুটি কেমন, তার উপরই নির্ভর করে সারাতে কম সময় লাগবে না বেশি। তবে গুরুত্বপূর্ণ সরকারি দফতর কিংবা পদস্থ কর্তাদের বাংলো বিদ্যুত্হীন হলে বিদ্যুত্ দফতরের কর্মীদের ছোটাছুটি করতে দেখা যায়। এ ক্ষেত্রে কিন্তু তা দেখা যায়নি।
এ দিকে, দীর্ঘক্ষণ বিদ্যুৎ না আসায় বিষয়টি জেলা পরিষদের বিদ্যুত্ কর্মাধ্যক্ষ অমূল্যবাবুকে জানান জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্রবাবু। অমূল্যবাবু আশ্বাস দেন, চিন্তার কিছু নেই। মেরামতির কাজ দ্রুতই হবে। রাতে অবশ্য মেরামতির কাজ হয়নি। শুক্রবার সকালে ফের দু’জনের কথা হয়। পরে মেরামতি শুরু হয়। বাংলোয় বিদ্যুত্ ফেরার পর তা জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে জানিয়েও দেন অমূল্যবাবু। ততক্ষণে অবশ্য বাংলো থেকে বেরিয়ে নিজের দফতরে চলে এসেছেন গিরীশচন্দ্রবাবু। গোটা ঘটনা শুনে স্বাস্থ্য দফতরের চতুর্থ শ্রেণির এক কর্মীর মন্তব্য, ‘‘স্যারের বাংলোয় বিদ্যুত্ ফিরতেই যদি ১৮ ঘন্টা লাগে, তাহলে সাধারণ লোকের বাড়িতে বিদ্যুত্ ফিরতে কত ঘন্টা লাগবে কে জানে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy