জেলায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা তিনশো ছাড়িয়েছে। মশাবাহিত রোগের চোখরাঙানি ঠেকাতে সর্বত্র প্রশাসন সে ভাবে তৎপর হচ্ছে না বলেও অভিযোগ উঠছে। ডেঙ্গি প্রতিরোধে এ বার বিভিন্ন দফতরের মধ্যে সমন্বয় বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হল। প্রশাসনের নির্দেশ, সমন্বয় রেখে সচেতনতামূলক কর্মসূচি করতে হবে। এলাকা পরিদর্শন করতে হবে। সাফাইয়ের কাজও তদারকি করতে হবে।
ডেঙ্গি মোকাবিলার পথ খুঁজতে বুধবার বিকেলে মেদিনীপুরে এক প্রশাসনিক বৈঠক হয়েছে। উপস্থিত ছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা-সহ অতিরিক্ত জেলাশাসক, মহকুমাশাসক ও বিডিওরা। তাত্পর্যপূর্ণ ভাবে বৈঠকে ছিলেন শিক্ষা, পঞ্চায়েত, গ্রামোন্নয়ন-সহ বিভিন্ন দফতরের জেলা আধিকারিকেরাও। সচেতনতামূলক কর্মসূচির ক্ষেত্রে কার কী করণীয় তা বুঝিয়ে দেওয়া হয়। প্রশাসনের আশা, সব দফতর সমন্বয় রেখে এই কাজ করলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।
বিভিন্ন দফতরকে নিয়ে যে বৈঠক হয়েছে তা মানছেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরাও। তাঁর কথায়, “যে করেই হোক ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়া রুখতে হবে। তাই সচেতনতা বাড়াতে প্রচারের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। মেদিনীপুরে একটি বৈঠকে জেলাশাসক প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়েছেন। সেই মতোই কাজ হচ্ছে। মশাবাহিত রোগ এড়াতে কী করা উচিত, আর কী করা উচিত নয় তা মানুষকে জানানো হচ্ছে।”
পুজোর আগেই পশ্চিম মেদিনীপুরে ডেঙ্গি আক্রান্তের একশো ছাড়িয়েছিল। দুর্গাপুজো ও দীপাবলি কেটে গেলেও ঠেকানো যায়নি মশাবাহিত এই রোগ। গত কয়েকদিনেও বেশ কয়েকজন জ্বর নিয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এদের মধ্যে কয়েকজনের ডেঙ্গি ধরাও পড়েছে। প্রশাসন সূত্রে খবর, চলতি বছর এখনও পর্যন্ত জেলায় ২,৫৬১ জনের রক্ত পরীক্ষা হয়েছে। এরমধ্যে ৩৬২ জনের ডেঙ্গি ধরা পড়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা সবথেকে বেশি রেলশহর খড়্গপুরেই, ১৬৬ জন। খড়্গপুর- ১ ব্লকে ১৭ জন, নারায়ণগড়ে ১৩ জন, সবংয়ে ১২ জন, সদর শহর মেদিনীপুরে ৯, মেদিনীপুর সদর ব্লকে ২২ জন, কেশপুরে ১০ জন, ঘাটালে ৩০ জন, দাসপুর-১ ব্লকে ১৩ জন।
ব্লকের ক্ষেত্রে মূলত বিএমওএইচরা মশাবাহিত রোগ দমনের কাজ দেখভাল করেন। এখন এই রোগ দমনে প্রচার-প্রসারের কাজ দেখভাল করতে শুরু করেছেন বিডিওরাও। রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের নির্দেশেই এই পদক্ষেপ। মশাবাহিত রোগ দমনের কাজ দেখভালের জন্য জেলাস্তরে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। জেলা থেকে ব্লকে ব্লকে এক নির্দেশিকাও পাঠানো হয়েছে।
প্রশাসন চাইছে, এই প্রচার-প্রসারের কাজে স্বনির্ভর দলের মহিলারাও যুক্ত হন। জেলায় অনেক স্বনির্ভর দল রয়েছে। এই সব দলের মহিলারা প্রচার-প্রসারের কাজে যুক্ত হলে গ্রামাঞ্চলে তার ভাল প্রভাব পড়বে। আগে আশাকর্মীরাই এই কাজ করতেন। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরার কথায়, “গ্রামাঞ্চলে যত প্রচার হবে ততই ভাল। মানুষ সচেতন হলেই মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।” তাঁর কথায়, “আমরা বিভিন্ন ব্লকে সচেতনতামূলক প্রচার শুরু করেছি। আরও প্রচার হবে।”
প্রশাসন সূত্রে খবর, প্রতিটি স্বনির্ভর দলের আলোচনায় মশাবাহিত রোগ ও তার প্রতিকারের কথা আলোচনার কথা জানানো হয়েছে। গ্রামে স্বাস্থ্যবিধান সংক্রান্ত যে পাড়া নজরদারি কমিটি রয়েছে তার সদস্যদেরও প্রচারে যুক্ত করা হবে।