দৃষ্টান্ত: চিকিৎসা করছেন মোহিতাসিব আলম। নিজস্ব চিত্র
ঝড়-বৃষ্টিতে বিদ্যুৎ নেই। রাস্তাও জলের তলায়। আসন্ন প্রসবা তরুণীটিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জো নেই। এমন অবস্থায় গাড়ির ব্যাটারি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ সংযোগ এনে আর ইনভার্টার ও ভ্যাকুয়াম ক্লিনার দিয়েই সদ্যোজাতকে পৃথিবীর আলো দেখিয়েছিল র্যাঞ্চো। কলেজের কমনরুম রাতারাতি হয়ে উঠেছিল ‘অপারেশন থিয়েটার’।
এটা ছিল সিনেমা। থ্রি ই়ডিয়টসের একটি দৃশ্য।
বাস্তবে এমন অসম্ভবকেই সম্ভব করলেন শালবনি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের চিকিৎসক এইচ এম মোহিতাসিব আলম। নিজের হাতে ভেন্টিলেশন গড়ে প্রাণ বাঁচালেন বছর বারোর এক কিশোরের।
বুধবার সকাল ছ’টা। হাতে কালাচ সাপের ছোবল খাওয়া গড়বেতার নিশ্চিন্দপুরের বাসিন্দা দুমবা মুর্মু তখন নেতিয়ে পড়েছে। ফুসফুস প্রায় অকেজো, স্নায়ুতন্ত্র বিকল, রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমছে। তাকে পরীক্ষা করে আলম বুঝেছিলেন, ভেন্টিলেশন ছাড়া বাঁচানো যাবে না। কিন্তু সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল হলেও শালবনিতে ভেন্টিলেশন নেই। ২২ কিলোমিটার দূরে মেদিনীপুর মেডিক্যালে সিসিইউ-তে ভেন্টিলেশন রয়েছে। তবে খোঁজ নিয়ে আলম জানলেন, সেখানে শয্যা খালি নেই।
আরও পড়ুন: দুই ওসিতে টক্কর
এ বার উপায়? কলকাতায় ‘রেফার’ মানে তো পথেই ছেলেটা মরে যেতে পারে। বেশিরভাগ চিকিৎসক সে সব না ভেবে ‘রেফার’ করেন। আলম অবশ্য ছক ভেঙে ভাবলেন। অনেকটা র্যাঞ্চোর মতোই।
হাতের নাগালে কিছু যন্ত্রপাতি ছিল। যেমন অব্যবহৃত কার্ডিয়াক মনিটর, ওই চিকিৎসকের নিজের টাকায় কেনা ল্যারিঙ্গোস্কোপ আর এন্ডোট্র্যাকিয়াল টিউব (ইটি টিউব)। সে সব ব্যবহার করে জোড়াতালি দিয়ে কোনওমতে খাড়া করা হল ‘ম্যানুয়াল ভেন্টিলেশন’। দুমবার শ্বাসনালিতে জুড়ে দেওয়া হল ল্যারিঙ্গোস্কোপ, ইটি টিউব। অ্যাম্বুব্যাগ পাম্প করতে শুরু করলেন আলম। লড়াই চলল ঘণ্টা তিনেক। তারপর দুমবার চোখের পাতা নড়ে উঠল। বেলা বারোটা নাগাদ হাত-পা নাড়তে শুরু করল সে। আলম বুঝলেন, সঙ্কট কেটেছে।
সীমিত পরিকাঠামো, নানা ঝুঁকির মধ্যেও আলম যে ভাবে অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন, তাতে তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছেন জেলার স্বাস্থ্যকর্তারা। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা মানছেন, “উনি অসাধ্য সাধন করেছেন। আমরা সবাই গর্বিত।”
বহরমপুরের ছেলে আলম শালবনিতে এসেছেন বছর দেড়েক। নিয়ম করে রোজা রেখেছেন এ বারও। দুমবা-র জন্য মরণপণ লড়াইটা লড়েছেন উপবাসের মধ্যেই। তিনি বলছেন, ‘‘ঈশ্বর চেয়েছেন বলেই এটা সম্ভব হল। আমি শুধু আমার কাজটুকু করেছি।’’ দুমবার বাবা-মায়ের কাছে অবশ্য আলমই সাক্ষাৎ ঈশ্বর। ওই কিশোরের মা বাসন্তীদেবীর কথায়, “রোজার মধ্যেও উনি আমার ছেলেকে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে এনেছেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy