মেয়ের আঁকা ছবি প্রকাশিত হয়েছিল আনন্দবাজার পত্রিকার মেদিনীপুর সংস্করণের ছোটদের পাতায়। দরিদ্র বাবা খবরের কাগজের পাতাটা নিয়ে গিয়ে দেখিয়েছিলেন বিডিও-কে। আর তারপরই স্কুলছাত্রী তুলি দাস ছবি আঁকার কাজ পেল প্রশাসনের তরফে। তাকে মিড ডে মিল প্রকল্পের লোগো আঁকার দায়িত্ব দিয়েছে গোপীবল্লভপুর-১ ব্লক প্রশাসন।
সত্যিই সার্থকনামা তুলি। দরিদ্র পরিবারে প্রথাগত ছবি আঁকা শেখার প্রশ্নই নেই। প্রতিভা আর মনের মাধুরীতেই বাঙ্ময় হয়ে ওঠে তার ছবির খাতা। গোপীবল্লভপুর জনকল্যাণ বালিকা বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির তুলির বার্ষিক পরীক্ষা চলছে। নতুন বছরে নবম শ্রেণিতে উঠবে সে। তুলির প্রতিভাকে স্বীকৃতি দিয়েই তার অভাবি পরিবারকে সাহায্য করতে পাশে দাঁড়িয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। বিডিও দেবজ্যোতি পাত্র বলছেন, ‘‘তুলির প্রতিভা রয়েছে। ওকে আঁকার সরঞ্জাম দিয়ে সাহায্য করা হয়েছে। তুলির প্রতিভাকে স্বীকৃতি দিতে এবার ওকে ব্লকের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মিড ডে মিলের লোগো আঁকার দায়িত্ব হয়েছে। এ জন্য সাম্মানিকও দেওয়া হবে।’’
ব্লকের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র, প্রাথমিক স্কুল, শিশুশিক্ষা কেন্দ্র (এসএসকে), মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্র (এমএসকে), হাইস্কুল মিলিয়ে ২৪৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মিড ডে মিলের লোগো আঁকবে তুলি। বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হলেই ব্লকের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দেওয়ালে মিড ডে মিলের লোগো আঁকার কাজ শুরু করবে সে। এমন সুযোগ পেয়ে বছর চোদ্দোর তুলি বলছে, ‘‘এমন কাজ করব ভেবে আমি রোমাঞ্চিত।’’ তুলির বাবা উত্তম দাস ঠিকাদারের অধীনে ইলেকট্রিকের কাজ করেন। আয় সামান্যই। শ্রীপাট গোপীবল্লভপুরের রাধাগোবিন্দ জিউ মন্দিরের আশ্রিত উত্তম। মহন্ত কৃষ্ণকেশবানন্দ দেবগোস্বামীর সহযোগিতায় মন্দিরের যাত্রীনিবাসের একটি ঘরে স্ত্রী-মেয়েকে নিয়ে থাকেন তিনি। মন্দিরের ভোগেই পেট ভরে তিনজনের। উত্তমের স্ত্রী শেফালি মন্দিরে পুজোর জোগাড় করেন।