Advertisement
E-Paper

শহরের উপকণ্ঠেই ডাইনি ঠাওরে মারধর

ডাইনি অপবাদে দাসপুরে পিটিয়ে খুনের ঘটনায় মাস কয়েক আগেই জানগুরু-সহ সাতজনকে ফাঁসির নির্দেশ দিয়েছিল ঘাটাল আদালত। সেই কড়া সাজার ঘোষণাতেও যে এই ধরনের সামাজিক ব্যাধিতে রাশ টানা যাচ্ছে না, তার প্রমাণ মিলল পশ্চিম মেদিনীপুরেরই আর এক প্রান্তে।

বরুণ দে

শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:১২

ডাইনি অপবাদে দাসপুরে পিটিয়ে খুনের ঘটনায় মাস কয়েক আগেই জানগুরু-সহ সাতজনকে ফাঁসির নির্দেশ দিয়েছিল ঘাটাল আদালত। সেই কড়া সাজার ঘোষণাতেও যে এই ধরনের সামাজিক ব্যাধিতে রাশ টানা যাচ্ছে না, তার প্রমাণ মিলল পশ্চিম মেদিনীপুরেরই আর এক প্রান্তে। ডাইনি অপবাদে এক মহিলাকে মারধরের নজির এ বার মেদিনীপুর সদর ব্লকের এক গ্রামে।

মেদিনীপর শহর থেকে মাত্র ১৩ কিলোমিটার দূরে আদিবাসী ওই গ্রাম। গ্রামেই রয়েছে প্রাথমিক স্কুল। হাইস্কুলের দূরত্বও বেশি নয়। গ্রামের ছেলেমেয়েরা নিয়মিত স্কুলেও যায়। তারপরেও এই গ্রামে কুসংস্কারের অচলায়তন যে এখনও অটুট, তা প্রমাণ করে দিয়েছে বৃহস্পতিবারের ওই ঘটনা।

ঘটনার তদন্তে শুক্রবার গ্রামে যান কোতোয়ালি থানার এসআই প্রশান্ত পাঠক। গ্রামেরই দশম শ্রেণির ছাত্রী ফুলমণি হেমব্রমকে দেখে প্রশান্তবাবু জিজ্ঞাসা করেন, ‘‘ডাইনি বলে কিছু হয় না কি? তোরা তো লেখাপড়া শিখেছিস। তোদের কী মনে হয়?’’ ফুলমণির সরল জবাব, “ডাইনি রয়েছে। বছর খানেক আগে আমার বাবাকেও তো ডাইনে খেয়েছে! জানগুরু কাউকে ডাইনি বললে সে ডাইনি হয় বলেই শুনেছি।” এমন উত্তর শুনে প্রথমে কিছুটা বিস্মিতই হন প্রশান্তবাবু। পরে তিনিই মানছেন, মানুষ সচেতন না হলে এমন ব্যাধি আটকানো অসম্ভব।

এই ঘটনার সূত্রপাত একটি পারিবারিক বিবাদকে কেন্দ্র করে। বছর দু’য়েক আগে মালতি মাহাতো (নাম পরিবর্তিত) নামে স্থানীয় এক মহিলাকে ডাইনি ঠাওরানো হয়। ঘটনার পিছনে মালতির শ্বশুরবাড়ির কয়েকজন লোক ও স্থানীয়দের একাংশেরও মদত ছিল। মালতির স্বামী চাষবাস করেন। ডাইনি ঠাওরানোর পর থেকেই একঘরে হয়ে পড়েন ওই মহিলা। তাঁর সঙ্গে পরিজনেরা মেলামেশা বন্ধ করে দেয়। ওই মহিলার ভাসুরের ছেলে তপন (নাম পরিবর্তিত) মাস কয়েক আগে থেকে কাকার বাড়িতে যাতায়াত শুরু করেন। মালতির সঙ্গে কথাও বলতেন তিনি। গ্রামের মাতব্বরেরা বিষয়টি ভাল চোখে দেখেননি।

গত ১৪ জানুয়ারি এই নিয়ে গ্রামে সালিশি সভা বসে। সভায় তপনের কাছে জানতে চাওয়া হয়, কেন তিনি কাকা-কাকিমার বাড়ি যাতায়াত শুরু করেছেন। পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে পরদিনই গ্রাম ছাড়েন তপন। গত বুধবার তিনি গ্রামে ফেরার পর বৃহস্পতিবার ফের গ্রামে সালিশি সভা বসে। সভা চলাকালীন বাড়ি থেকে বেরিয়ে দোকানে যাচ্ছিলেন মালতিদেবী। তখন তাঁকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ।

অভিযোগের তির মালতির বড় ভাসুরের ছেলে ও তাঁর স্ত্রীর দিকে। ওই দু’জনের আবার পাল্টা অভিযোগ, তপনেরাই তাঁদের মারধর করেছে। ঘটনায় মালতিদেবী-সহ দু’পক্ষের পাঁচ জন জখম হন। আহতেরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ঘটনার দিনই পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেন নিগৃহীতা ওই মহিলা।

গ্রামের মানুষকে কুসংস্কার-মুক্ত করতে সচেতনতা শিবির হচ্ছে। পরিস্থিতি যে তাতেও বিশেষ বদলায়নি, তা মানছেন স্থানীয় বিধায়ক দীনেন রায়। দীনেনবাবুর কথায়, “এই সামাজিক ব্যাধি দূর করতে আদিবাসী সমাজের শিক্ষিত মানুষজনকে এগিয়ে আসতে হবে।” ডাইনি প্রথা বিরুদ্ধে সচেতনতা বাড়ানোর কথা বলছেন বিডিও ঋত্বিক হাজরাও। তাঁর কথায়, “এমন ঘটনা অনভিপ্রেত। ওই এলাকায় সচেতনতা বাড়ানোর সব রকম চেষ্টা করা হবে।”

শুক্রবার দুপুরেও গ্রামের মাঠে খেলা করছিল শুকদেব হেমরম, কৃষ্ণ হেমব্রমরা। ডাইনি বলে কিছু রয়েছে কি না প্রশ্ন করতেই চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়া শুকদেবের সটান জবাব, “আছে বলেই তো শুনেছি!” এই অন্ধবিশ্বাস আদৌ ভাঙবে তো, বৃহস্পতিবারের ঘটনার পর আরও একবার উস্কে গিয়েছে সেই প্রশ্ন।

Ghost Lady
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy