E-Paper

ক্যানসারের সঙ্গে লড়েই পরীক্ষায়, স্বপ্ন উচ্চশিক্ষার

গড়বেতা ১ ব্লকের আমলাগোড়া অঞ্চলের জুনশোল গ্রামের গোয়ালাপাড়ার বাসিন্দা বছর ঊনিশের অভিজিৎ ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০২৫ ০৬:১৯
পড়াশোনায় ব্যস্ত অভিজিৎ। মঙ্গলবার সকালে।

পড়াশোনায় ব্যস্ত অভিজিৎ। মঙ্গলবার সকালে। নিজস্ব চিত্র।

এক দিকে, বেঁচে থাকার নিরন্তর লড়াই। অন্য দিকে, উচ্চ শিক্ষিত হওয়ার তীব্র বাসনা!

মারণ-ব্যাধির কারণে গতবার জীবনের ‘দ্বিতীয় বড় পরীক্ষা’ উচ্চ মাধ্যমিকে বসার কথা থাকলেও, তা সম্ভব হয়নি। প্রথমে মানসিক ভাবে কিছুটা ভেঙে পড়লেও, হার মানতে নারাজ অভিজিৎ দণ্ডপাট। অদম্য জেদকে সামনে রেখেই এ বার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছেন ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত দরিদ্র পরিবারের এই ছাত্র।

গড়বেতা ১ ব্লকের আমলাগোড়া অঞ্চলের জুনশোল গ্রামের গোয়ালাপাড়ার বাসিন্দা বছর ঊনিশের অভিজিৎ ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত। চলছে চিকিৎসা। ব্যানার্জিডাঙা হাই স্কুলের কলা বিভাগের ছাত্র অভিজিতের গত বছরই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পরীক্ষার ফর্ম-পূরণের আগেই তাঁর ব্লাড ক্যানসার ধরা পড়ে। তাই সে বার প্রস্তুতি নিয়েও পরীক্ষায় বসতে পারেননি ভুবনেশ্বরের এইমসে চিকিৎসাধীন থাকায়। মাস সাতেক সেখানেই থাকতে হয়েছিল। চলেছে কেমোথেরাপি। এখনও চিকিৎসা চলছে, তবে বাড়িতে থেকেই। মাঝে মধ্যেই এইমসের চিকিৎসকদের দেওয়া নির্দিষ্ট তারিখে ভুবনেশ্বরে গিয়ে ‘চেকআপ’ করিয়ে আসেন। তারই মধ্যে এ বার পরীক্ষায় বসতে চেয়ে একদিন স্কুলে গিয়ে ফর্ম-পূরণ করে আসেন অভিজিৎ।

প্রথম দিন বাংলা পরীক্ষা ভালই হয়েছে অভিজিতের। আজ, বুধবার রয়েছে ইংরেজি পরীক্ষা। মঙ্গলবার সকালে মাটির ভাঙাচোরা বাড়ির দুয়ারে পড়তে বসেছিলেন অভিজিৎ। পড়া থামিয়ে আত্মবিশ্বাসী অভিজিৎ বলেন, ‘‘যা প্রস্তুতি আছে তাতে বলতে পারি ইংরেজি-সহ বাকি পরীক্ষাগুলি ভালই হবে।’’ অভিজিৎ উচ্চ শিক্ষিত হতে চান, ঝোঁক তাঁর কারিগরি শিক্ষার প্রতি। তারপর রোজগার করে অভাবী বাবার দুঃখ ঘোচানো। বাবা উদয় দণ্ডপাট রঙের কাজ করেন। তাঁর দিনমজুরি বাবদ যা রোজগার হয়, তাতেই চলে যায় পিতা-পুত্রের সংসার। বছর দু’য়েক আগে অভিজিতের মায়ের মৃত্যু হয়েছে হৃদ্‌যন্ত্রের এক রোগে। আবার বছর আটেক আগে একমাত্র দিদিরও মৃত্যু হয়।

অভিজিৎ বলেন, ‘‘দিদিরও ব্লাড ক্যানসার হয়েছিল। দিদি যখন অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে তখন মারা যায়। আসলে আমরা তো গরীব। সামান্য কৃষি জমি আছে। বাবা অন্যকে দিয়ে চাষ করায়। অত টাকাপয়সা ছিল না বাবার।’’ তিনি আরও জুড়লেন, ‘‘২০২৩ সালের জুন মাসে আবার আমার ব্লাড ক্যানসার ধরা পড়েছে। চিকিৎসা চলছে। প্রচুর খরচও হচ্ছে। অনেকেই পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন বলে মনে জোর পাচ্ছি।’’

অভিজিৎদের স্বাস্থ্যসাথী কার্ড রয়েছে। কিন্তু এইমসে তার সুবিধা না মেলায় ইতিমধ্যে ওষুধ-ইঞ্জেকশন-সহ তাঁর চিকিৎসার জন্য খরচ হয়ে গিয়েছে দু’লক্ষ টাকারও বেশি। তাঁদের নাম রয়েছে আবাস যোজনার তালিকায়। বাংলার বাড়ি প্রকল্পে প্রথম কিস্তির ৬০ হাজার টাকা তাঁরা পেয়েছেন। সেই টাকায় আবাসের কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু ক্যানসারের মতো রোগের চিকিৎসা, পুষ্টিকর খাবার, পড়াশোনার খরচ— কী ভাবে চলছে? অভিজিৎ বলেন, ‘‘অনেকেই নানা ভাবে সাহায্য করেন। কখনও কেউ পুষ্টিকর খাবার কিনে দেন, কেউ অন্য ভাবে। যেমন— শ্যামল সাহা আমাকে এ বার পরীক্ষা দিতে যাওয়ার জন্য টোটো ভাড়ার টাকা দিয়েছেন। এ ভাবে সকলের সহযোগিতায় আমি সুস্থ হব, উচ্চ শিক্ষিতও হব।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Garbeta HS Exam 2025

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy