Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Nantu Pradhan

SSC Recruitment Scam: ওই বুঝি এল ইডি! শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে ত্রস্ত নান্টু-তালুক

বাজারেরে বিভিন্ন চায়ের-দোকানে, পাড়ার আড্ডায় গত কয়েকদিন ধরে প্রধান আলোচনা বিষয় হয়ে রয়েছে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতিতে ইডির তদন্ত।

 নান্টুর বিএড কলেজ। নিজস্ব চিত্র

নান্টুর বিএড কলেজ। নিজস্ব চিত্র

গোপাল পাত্র
ভগবানপুর শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০২২ ০৬:০২
Share: Save:

শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে সপ্তাহখানেক আগে ‘এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটে’র (ইডি) হাতে গ্রেফতার হয়েছেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর ঘনিষ্ঠের ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয়েছে কোটি কোটি নগদ টাকা। ওই দুর্নীতির তদন্তে আরও গভীরে যেতে কলকাতা-সহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশি চালাচ্ছে ইডি। পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুরে তাদের তল্লাশি করতে আশার আশঙ্কা জোর জল্পনা শুরু হয়েছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছছে যে, সরকারি আধিকারিকের নীলবাতি গাড়ি রাস্তা দিয়ে যেতে দেখলেও এলাকাবাসী ভাবছেন— ‘ওই বুঝি ইডি এল’।

পূর্ব মেদিনীপুরের এগরা মহকুমার একটি জমজমাট এলাকা ভগবানপুরের হাট-বাজার। এই বাজারেরে বিভিন্ন চায়ের-দোকানে, পাড়ার আড্ডায় গত কয়েকদিন ধরে প্রধান আলোচনা বিষয় হয়ে রয়েছে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতিতে ইডির তদন্ত। আর হবে নাই বা কেন, এই ভগবানপুরেরই নিহত তৃণমূল নেতা নান্টু প্রধানের বিরুদ্ধে ছিল লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়ে শিক্ষকের চাকরি করে দেওয়ার অভিযোগ। বিরোধীদের দাবি, নান্টুর সঙ্গে প্রাক্তন শিক্ষা মন্ত্রী পার্থের সরাসরি যোগ ছিল। এমনকী, পার্থের পারিবারিক অনুষ্ঠানে নান্টু গাড়ি গাড়ি মাছও পাঠিয়েছিলেন একধিকবার। ২০১৮ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় জনরোষে নান্টু খুন হয়। তবে মারা যাওয়ার আগেই সে এলাকায় বানিয়েছিল প্রাসাদোপম পাঁচতলা বিএড কলেজ।

ফলে এমন নিহত নেতার এলাকায় আরও কোনও ব্যক্তি শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে জড়িত থাকতে পরে অনুমান করছেন এলাকাবাসী। আর সেই কারণেই তাঁরা আশঙ্কা করছেন শীঘ্রই হয়তো এলাকায় ইডি তদন্তে আসতে পারে। স্থানীয় সূত্রের খবর, পার্থের গ্রেফতার পরে গত সপ্তাহে পটাশপুরে কেলেঘাই নদীর বাঁধ মেরামতির কাজ পরিদর্শনে গিয়েছিল ভগবানপুরের বিডিও। ভগবানপুরের উপর দিয়ে যাওয়ার সময় বিডিও-র নীলবাতি লাগানো গাড়ি দেখে আমজনতা ভাবে, ইডি এসেছে। তারা স্থানীয় ইলাশপুর বাজারে নান্টুর বিএড কলেজের বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়। ‘চোর’ ধরার দাবিও করা হয় সেই স্লোগান। পরে অবশ্য স্থানীয়েরা নিজেদের ভুল বুঝতে পারে। জানতে পারে যে, ইডি আধিকারিক নয়, ওই গাড়ি আদতে ব্লক প্রশাসনের।

শিক্ষক নিয়োগে নান্টু যে দুর্নীতি করেছিল, তা আগেও বহুবার স্বীকার করে নিয়েছেন তাঁর বাবা চাঁদহরি প্রধান। নান্টুর মৃত্যুর পরেই চাঁদহরি কলেজে নান্টুর বসার ঘর থেকে চাকরি প্রার্থীদের দেওয়া কয়েক কোটি টাকা উদ্ধার করেছিলেন বলে দাবি। পরে চাঁদহরি দাবি করেন, তিনি চাকরি প্রার্থীদের ১৫ কোটি ফেরতও দিয়েছেন। কিন্তু এলাকাবাসীর আলোচনায় এখনও উঠে আসছে নান্টু বিএড কলেজের প্রসঙ্গ। কলেজে তদন্তের দাবিও উঠছে। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে দুশ্চিন্তায় পড়ছেন কলেজের একাংশ পড়ুয়াও। তাঁদের প্রশ্ন, আগামী দিনে কলেজ কি বন্ধ হয়ে যেতে পারে? পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে সবং থেকে কলেজে ভর্তি হতে আসা এক ছাত্র বলছেন, ‘‘শুনছি এই কলেজের প্রতিষ্ঠাতার সঙ্গে ধৃত প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। যদি তদন্তে কলেজের বিষয়ে বেআইনি কিছু উঠে আসে, তা হলে কলেজ বন্ধ হলেও হতে পারে। তাই ভর্তি না হয়ে আপাতত বাড়ি ফিরে যাচ্ছি। পরবর্তী সময়ে অবস্থা দেখে সিদ্ধান্ত নেব।’’

পড়ুয়াদের অবশ্য আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। তাঁরা জানাচ্ছেন কলেজে ভর্তির সংখ্যাও সন্তোষজনক। কলেজটি ডিএলএড এবং বিএড বিভাগ মিলিয়ে ১০০টি আসন রয়েছে। সম্প্রতি ওই আসনগুলিতে চলছে ভর্তির প্রক্রিয়া। কলেজ কর্তৃপক্ষ সূত্রের খবর, নান্টু নিহত হওয়ার পরে কলেজে ভর্তি কমে গিয়েছিল। তবে গত দু’বছর আশানুরূপ ভাবে ছাত্রছাত্রী ভর্তি হয়েছেন। গত শিক্ষাবর্ষে দুটি বিভাগ মিলিয়ে ৯০ জন ছাত্রছাত্রী ভর্তি হয়েছিলেন। এ বছরও ভর্তির সংখ্যাটা তেমনই হবে বলে আশা কলেজ কর্তৃপক্ষের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজের এক শীর্ষ আধিকারিক বলছেন, ‘‘কলেজে অনুমোদন নিয়ে তো কোনও বেআইনি কিছু নেই। যদি শিক্ষক নিয়োগে সঙ্গে কেউ দুর্নীতি করে থাকেন, সেটা তাঁর ব্যক্তিগত বিষয়।’’ কলেজ ট্রাস্টের সভাপতি পদে রয়েছেন নান্টুর বাবা চাঁদহরি। তাঁরও দাবি, ‘‘শুধু পার্থ চট্টোপাধ্যায় নয়, আরও অনেক বড় বড় নেতার সঙ্গে নান্টুর যোগাযোগ ছিল। কিন্তু ওই দুর্নীতির সঙ্গে কলেজের কোনও যোগ নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE