Advertisement
E-Paper

হুঁশ ফেরেনি, নিয়ম ভেঙেই ছুটছে ট্রেকার

লরির সঙ্গে ট্রেকারের সংঘর্ষে চারজন যাত্রীর মৃত্যু হয়। জখম হন আরও ২১ জন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০০:০৮
ঝুঁকি: দুর্ঘটনাও বদলাতে পারেনি ছবিটা। ফের অতিরিক্ত যাত্রী নিয়েই চলছে ট্রেকার। চন্দ্রকোনা রোডের ডুকিতে। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল

ঝুঁকি: দুর্ঘটনাও বদলাতে পারেনি ছবিটা। ফের অতিরিক্ত যাত্রী নিয়েই চলছে ট্রেকার। চন্দ্রকোনা রোডের ডুকিতে। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল

মুর্শিদাবাদের দৌলতাবাদে ভয়াবহ বাস দুর্ঘটনার ছবি দেখে গা শিউরে উঠেছিল সকলের। তার পর এক সপ্তাহ যেতে না যেতেই রবিবার জেলার পিঁড়াকাটা-শালবনি রুটের বনমালীপুরে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে যাত্রীবাহী ট্রেকার। লরির সঙ্গে ট্রেকারের সংঘর্ষে চারজন যাত্রীর মৃত্যু হয়। জখম হন আরও ২১ জন। সাধারণত, একটি ট্রেকারে যেখানে ১২-১৪ জন থাকার কথা, সেখানে ওই ট্রেকারে প্রায় ২৮ জন ছিলেন। শুধু অতিরিক্ত যাত্রীই নয়, অতিরিক্ত মালপত্রও বহন করছিল ট্রেকারটি।

দুর্ঘটনার পরেও অবশ্য পরিস্থিতি এতটুকু পাল্টায়নি। শালবনির দিকে সোমবার ট্রেকারের দৌরাত্ম্য না থাকলেও কেশপুর, আনন্দপুর, ডেবরা, বালিচক প্রভৃতি রুটে সোমবারও অতিরিক্ত যাত্রী তুলে দিব্যি চলেছে ট্রেকার। যাত্রাপথে পুলিশি নজরদারিও তেমন ছিল না। কেউ প্রতিবাদও করেননি। যাত্রীদের বক্তব্য, এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে যে কোনও সময় ফের বড়সড় দুর্ঘটনার মুখে পড়বে ট্রেকার। বেপরোয়া ট্রেকার চলাচলের ফলে একদিকে যেমন সাধারণ মানুষের প্রাণহানির সম্ভাবনা থাকে, তেমনই ট্রেকার উল্টে যাত্রীদেরও প্রাণহানির সম্ভাবনা থাকে। ফলে, এ নিয়ে এখনই সতর্ক হওয়া জরুরি।

অবশ্য সতর্ক হবে কে? শালবনির ওই ট্রেকারে যে অতিরিক্ত যাত্রী ছিল তা মানছে পুলিশ। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়ার কথায়, “ওই ট্রেকারে অতিরিক্ত যাত্রী ছিল। আনাজ ভর্তি বেশ কয়েকটি বস্তাও ছিল।” কেন পুলিশ ব্যবস্থা নেয় না? জেলা পুলিশ সুপারের জবাব, “পুলিশি নজরদারি থাকে। এ বার নজরদারি আরও বাড়ানো হবে।” তাঁর আশ্বাস, “অতিরিক্ত যাত্রী কেন ট্রেকারে ছিলেন তা দেখা হচ্ছে। ওই রুটে ট্রেকারের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় কম রয়েছে কি না তাও দেখা হচ্ছে। সব দিক খতিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থাই নেওয়া হবে।”

পশ্চিম মেদিনীপুরের বিভিন্ন রুটে সবমিলিয়ে প্রায় ৪০০টি ট্রেকার চলাচল করে। কিছু অবৈধ ট্রেকারও রয়েছে। ট্রেকারের বিরুদ্ধে অভিযোগও রয়েছে ভুরিভুরি। এক, প্রায় সব ট্রেকারই অতিরিক্ত যাত্রী তোলে। বেশির ভাগ সময় ২০-২২ জন যাত্রী না হলে ট্রেকার সময় মতো স্ট্যান্ড থেকে ছাড়ে না। দুই, বেশির ভাগ ট্রেকারই দ্রুত গতিতে চলাচল করে। এরফলে বিপদের সম্ভাবনা থাকে। তিন, অনেক সময় কিছু ট্রেকার নির্দিষ্ট রুট ভেঙেও চলাচল করে। অর্থাৎ, ‘কাট- রুট’ দিয়ে চলে।

ট্রেকারে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহণের কথা মানছে পরিবহণ দফতরও। জেলা পরিবহণ আধিকারিক বিশ্বজিৎ মজুমদারের স্বীকারোক্তি, “যে সংখ্যক যাত্রী থাকার কথা, শালবনির ওই ট্রেকারে তার থেকে বেশিই যাত্রী ছিল।” বিশ্বজিৎবাবু বলেন, “অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহণ করলে এ বার কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ট্রেকারের ছাদে কেউ থাকবে না। মালপত্র থাকতে পারে। ট্রেকারের তিনদিকে কেউ ঝুলেও যেতে পারবেন না। আমরা ট্রেকার মালিকদের এ কথা স্পষ্ট জানিয়ে দিচ্ছি।” তাঁর কথায়, “বাসের সিঁড়ি খোলা হয়েছে। ট্রেকারের সিঁড়ি খোলার কাজও শুরু হচ্ছে।” পুলিশি সহায়তায় পরিবহণ দফতর এ নিয়ে ট্রেকার চালকদের সতর্ক করতে পারে। অবশ্য এই দফতরের পরিকাঠামোই বেহাল! কর্মীর সংখ্যা কম। ফলে, সব সময় রাস্তায় নেমে অভিযান চালাতে পারেন না আধিকারিকেরা।

তবে পরিকাঠামোগত সমস্যা যে রয়েছে তা মানছেন জেলা পরিবহণ দফতরের এক আধিকারিকও। তাঁর কথায়, “কিছু সমস্যা রয়েছে। তবে এরমধ্যেই নজরদারি চালানো হয়। যে সব চালক বিধি লঙ্ঘন করেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়। জরিমানা আদায় করা হয়। এ বার নজরদারি আরও বাড়ানো হবে।” জেলার এক পরিবহণ কর্মী ইউনিয়নের নেতা শশধর পলমলের আশ্বাস, “ট্রেকার মালিকদের সঙ্গে কথা বলছি। কোনও ট্রেকারে যাতে অতিরিক্ত যাত্রী তোলা না হয় সে দিকে নজর দেওয়ার কথা বলছি।”

আশ্বাস মিলেছে। তবে শালবনির মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পরে ট্রেকার দৌরাত্ম্য বন্ধে পুলিশ-পরিবহণ দফতরের নজরদারি আদৌ বাড়ে কি না, সেটাই দেখার।

Accident Salboni Trekker Traffic Rule শালবনি দুর্ঘটনা
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy