Advertisement
০৬ মে ২০২৪

বাড়ি তৈরির প্রকল্পে বিধায়ক কোটা, দুর্নীতির অভিযোগ

দুর্নীতি বন্ধে মরিয়া মুখ্যমন্ত্রী। সে সময়ই গীতাঞ্জলি প্রকল্পে বিধায়ক কোটা তৈরি হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠল পশ্চিম মেদিনীপুরে। প্রশ্ন উঠেছে জেলা প্রশাসনের পক্ষপাতিত্ব নিয়ে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০১৬ ০১:৩৯
Share: Save:

দুর্নীতি বন্ধে মরিয়া মুখ্যমন্ত্রী। সে সময়ই গীতাঞ্জলি প্রকল্পে বিধায়ক কোটা তৈরি হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠল পশ্চিম মেদিনীপুরে। প্রশ্ন উঠেছে জেলা প্রশাসনের পক্ষপাতিত্ব নিয়ে। প্রশাসন অভিযোগ অস্বীকার করলেও, বিধায়করা স্বীকার করেছেন, প্রকল্পের জন্য তাঁদের কাছ থেকে নামের তালিকা চাওয়া হয়েছে।

সাধারণত, গীতাঞ্জলির উপভোক্তা চিহ্ণিত করে ব্লক প্রশাসন বা পঞ্চায়েত সমিতি। সেখান থেকে জেলায় প্রস্তাব আসে। পরে জেলা সেই প্রস্তাব খতিয়ে দেখে চূড়ান্ত পদক্ষেপ করে। সেই তালিকা তৈরি রাজ্যের কাছে পাঠানো হয়। উপভোক্তা পিছু দু’দফায় ৭০ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়। প্রথম কিস্তির শর্তপূরণ করলে দ্বিতীয় কিস্তির টাকা মেলে। উপভোক্তা বাছাইয়ের জন্য বিডিও, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির ও সংশ্লিষ্ট এলাকার বিধায়ককে নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু এ বার সরাসরি বিধায়কদের কাছ থেকে নামের তালিকা চেয়েছে জেলা প্রশাসন।

জেলা প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, “বিধায়কেরাও যাতে গীতাঞ্জলি প্রকল্পে উপভোক্তাদের সুবিধে দিতে পারেন, সেই ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে অন্যায়ের কী আছে!” জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা অবশ্য বলেছেন, “নিয়ম অনুযায়ী কাজ হচ্ছে। উপভোক্তাদের নাম পঞ্চায়েত সমিতি দেবে।” কিন্তু জেলা প্রশাসনের এক কর্তাই বললেন আসল কথা, “পঞ্চায়েত সমিতি যে তালিকা দেবে, তার মধ্যেই সংশ্লিষ্ট এলাকার বিধায়কের দেওয়া উপভোক্তাদের নামগুলো রাখা হবে।”

তবে শাসক দলের বিধায়কেরা মানছেন কোটার কথা। গড়বেতার বিধায়ক আশিস চক্রবর্তী বলেন, “গীতাঞ্জলি উপভোক্তাদের নামের তালিকা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। শীঘ্রই তা দিয়ে দেবো।” নারায়ণগড়ের বিধায়ক প্রদ্যোত ঘোষ আবার জানিয়েছেন, তিনি ইতিমধ্যে ওই তালিকা দিয়ে দিয়েছেন। খড়্গপুর গ্রামীণের বিধায়ক দীনেন রায় বলেন, “যা বলা হয়েছে, তাই করছি। ঠিক সময়ই তালিকা দিয়ে দেব।”

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, শাসক দলের বিধায়কদের বলা হয়েছে, ১০০ জন উপভোক্তার নামের তালিকা জমা দিতে। কিন্তু সরাসরি শাসক দলের বিধায়কদের আলাদা করে কোটার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে কেন? প্রশ্ন তুলছে বিভিন্ন মহল। উপভোক্তা নির্বাচন নিয়ে পঞ্চায়েতস্তরে বিবাদ নতুন নয়। এই কোটা পদ্ধতিও নতুন নয়। ব্লক থেকে যে তালিকা জেলায় আসে, সেখানেও প্রধান-সভাপতির কোটা থাকে। কখনও প্রধানরা দু’টি করে নামের সুপারিশ করেন, কখনও সভাপতিরা পাঁচটি করে নামের সুপারিশ করেন।

বিরোধীদের দাবি, এ ভাবে আসলে স্বজন পোষণের পথ প্রশস্ত করে দেওয়া হল। জেলা সিপিএমের এক নেতার কথায়, “বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রকৃত অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল পরিবারগুলোকে বঞ্চিত করার অভিযোগ ওঠে। এ বার আরও বেশি করে ওই অভিযোগ উঠবে!” সিপিএমের জেলা সম্পাদক তরুণ রায় বলেন, “আসলে এই সব পাইয়ে দেওয়ার নীতি! শাসকের পছন্দের লোকেদের প্রকল্পের সুবিধে পাইয়ে দিতেই এই সব।” তিনি বেশ কিছু অভিযোগ পেয়েছেন বলেও জানিয়েছেন। প্রতিবাদের পথেই হাঁটবেন তাঁরা। সবংয়ের কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়া অবশ্য দাবি করেছেন, “আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না। জেলা থেকে এ নিয়ে আমাকে কোনও চিঠি দেওয়া হয়নি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

House
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE