ডেঙ্গি রোধে পাঁচ দাওয়াই। সোমবার খড়্গপুরের নিমপুরা বাংলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের তাই বোঝাচ্ছেন স্বাস্থ্য কর্তারা।
বাড়ি থেকে দোকান, অভিযানে ডেঙ্গি-মশার লার্ভা মিলেছিল নানা জায়গায়। এ বার স্কুলের মিড-ডে মিলের জলের ড্রামেও মশার লার্ভার হদিস পেল খড়্গপুরের ডেঙ্গি টাস্ক ফোর্স কমিটি। সোমবার শহরের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের নিমপুরায় এই ঘটনা ঘটেছে।
এই ওয়ার্ডের এক মহিলাই গত শনিবার ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে কলকাতার হাসপাতালে মারা গিয়েছেন। পরিস্থিতি দেখে এ দিন বৈঠকের পরে ডেঙ্গি নজরদারি কমিটি ও টাস্ক ফোর্সের সদস্যরা ১২ নম্বর ওয়ার্ডে পরিদর্শনে যান। তখনই নিমপুরা বাংলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মিড ডে মিলের জলের ড্রামে ডেঙ্গি মশার লার্ভা দেখা যায়। টাস্কফোর্স কমিটির সদস্য তথা জেলায় মশাবাহিত রোগের নোডাল অফিসার রবীন্দ্রনাথ প্রধান বলেন, “ওই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মিড-ডে মিলের জলের ড্রাম পরীক্ষা করতে গিয়ে নজরে আসে, জমা জলে মশার লার্ভা রয়েছে। জমা জল ফেলে দেওয়া হয়েছে। স্কুল কর্তৃপক্ষকে সতর্কও করা হয়েছে।”
ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক দিলীপকুমার চক্রবর্তী জানান, মাঝে কয়েকদিন ছুটি থাকায় ওই জল ব্যবহার করা হয়নি। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা ভাবতে পারিনি এ ভাবে ওই জলে মশার লার্ভা জন্মাবে। এ বার সচেতন হব।” এই ঘটনার পরে সতর্ক করা হয়েছে অন্য বিদ্যালয়গুলিকেও।
খড়্গপুর শহরে ডেঙ্গি এ বার ভয়াবহ আকার নিয়েছে। প্রতি বাড়িতে জ্বরে কেউ না কেউ জ্বরে আক্রান্ত। এখনও পর্যন্ত কয়েক হাজার রোগী ডেঙ্গির উপসর্গ নিয়ে বিভিন্ন হাসপাতাল ও বাড়িতে চিকিৎসাধীন। অনেকে কলকাতাতেও গিয়েছে। স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান বলছে, জেলার শতাধিক ডেঙ্গি আক্রান্তের মধ্যে ৭৫ জনই খড়্গপুরের বাসিন্দা। এরই মধ্যে নিমপুরার এক মহিলার মৃত্যু হওয়ায় শহরে ক্ষোভ ছড়িয়েছে। পুর-নাগরিকদের অভিযোগ, ডেঙ্গি মোকাবিলায় পুরসভা কাজ করছে বলে প্রচার চললেও অধিকাংশ এলাকায় আবর্জনার স্তূপ ও জমা জল দেখা যাচ্ছে। এর প্রতিবাদে এ দিন পুরসভায় স্মারকলিপিও জমা দেন ১২ নম্বর ওয়ার্ডের নাগরিকেরা।
পুরসভার কাজ ঠিকমতো হচ্ছে কিনা, তা দেখতেই গড়া হয়েছে ডেঙ্গি নজরদারি কমিটি। সেই কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে পদক্ষেপ করতে গড়া হয়েছে টাস্ক ফোর্স। গত এক সপ্তাহ ধরে পরিদর্শনের পরে এ দিন দুই কমিটির সদস্যরা এ দিন যৌথ বৈঠকে বসেছিলেন। সেখানে ছিলেন অতিরিক্ত জেলাশাসক অরিন্দম নিয়োগী, মহকুমাশাসক সুদীপ সরকার, পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার, জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা, উপমুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রবীন্দ্রনাথ প্রধান প্রমুখ। মহকুমাশাসক বলেন, “রেলের অনেক এলাকায় আবর্জনা পড়ে থাকছে। রেল বলছে, সাফাইকর্মীর অভাব। আমরা তাই পুরসভাকে বলেছি রেলের আবর্জনা সাফাই করতে।” পুরপ্রধান প্রদীপ সরকারের কথায়, “আমরা পুর এলাকায় দু’বেলা আবর্জনা তুলছি। রেল আবেদন করলে রেলের ওয়ার্ডেও সাফাইকর্মী পাঠাব।”
মহকুমাশাসক আরও জানান, কারও জমিতে বা বাড়িতে জমা জল ও আবর্জনা দেখা গেলে পুর আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুরপ্রধানেরও বক্তব্য, “আবর্জনা আর জমা জলে মশার বাড়বাড়ন্ত হচ্ছে। ওই সব জমি-বাড়ির মালিকের বিরুদ্ধে পুরসভা ব্যবস্থা নেবে।”
স্কুলে-স্কুলে ডেঙ্গি বিরোধী প্রচার ও বেশি পরিমাণে মশা মারার তেল, ব্লিচিং, চুন ছড়ানো হবে বলেও পুরপ্রধান জানান। ডেঙ্গি মোকাবিলায় প্রত্যেক কাউন্সিলরকে আরও সচেতন করতে আগামী শুক্রবার পুরসভায় বৈঠক ডাকা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy