কর্তব্যরত অবস্থায় কোনও সামরিক বা পুলিশকর্মীর মৃত্যু বলে ‘গার্ড অফ অনার’ দেওয়া হয় দফতরের তরফে। কিছু ক্ষেত্রে বিশিষ্টজনেদেরও এই সম্মান দেওয়া হয়। তবে পূর্ব মেদিনীপুরে দুর্ঘটনায় মৃত এক সিভিক কর্মীকে ‘গার্ড অফ অনার’ দেওয়া নিয়ে বিতর্ক বেধেছে। বিজেপির দাবি, পুলিশের তরফে মৃতকে শ্রদ্ধা জানানো যেতেই পারে। তবে চুক্তিভিত্তিক ওই কর্মীকে ‘গার্ড অফ অনার’ দেওয়া আইন বিরুদ্ধ। জেলা পুলিশের অবশ্য দাবি, কর্তব্যরত অবস্থায় সহকর্মীর মর্মান্তিক মৃত্যুর কারণেই তাঁকে এ ভাবে শ্রদ্ধাজানানো হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে কোলাঘাটের হলদিয়া মোড়ের কাছে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছিলেন স্থানীয় থানার সিভিক কর্মী সুদীপ চক্রবর্তী (৩৭)। সেই সময় দ্রুতগতিতে আসা একটি খড়্গপুরগামী লরি গার্ডওয়ালে ধাক্কা মেরে চলে যায়। সেই ভাঙা অংশ ঠিক ভাবে রাখতে যান সুদীপ। তখন একটি ছোট গাড়ি সুদীপকে ধাক্কা মারে। তমলুক মেডিক্যালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃতঘোষণা করেন।
কোলাঘাট থানায় সুদীপকে ‘গান স্যালুট’ দেওয়া হয়। ছিলেন ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মিতুন দে, তমলুকের এসডিপিও আফজল আবরার। ওই ছবি প্রকাশ্যে আসতেই শুরু হয়েছে বিতর্ক। বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য সিন্টু সেনাপতি বলেন, ‘‘এ ভাবে গার্ড অফ অনার দেওয়া আইন বিরুদ্ধ। নির্বাচনের আগে সিভিকদের দিয়ে অবৈধ কাজ করানোর উদ্দেশ্যেই পুলিশ কৌশলে সব সিভিককে ‘পাশে আছি’-র বার্তা দিতে চাইছে।’’ যদিও তৃণমূলের দাবি, অযথা রাজনীতি করছে বিজেপি। দলের জেলা (তমলুক) চেয়ারপার্সন অসিত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সহকর্মীকে শ্রদ্ধা জানাতেই এই উদ্যোগ পুলিশের।’’
সত্যিই কি নিয়ম ভাঙা হয়েছে?
জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানাচ্ছেন, নিয়ম মতো কর্তব্যরত অবস্থায় কোনও সামরিক এবং পুলিশকর্মীর মৃত্যু বলে ‘গার্ড অফ অনার’ দেওয়া হয়। তবে সরকারি সিদ্ধান্তে সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিদেরও মৃত্যুর পরে এই সম্মান দেওয়া হয়। কোলাঘাটের ঘটনা প্রসঙ্গে ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মিতুন দে বলছেন, ‘‘সহকর্মীর মর্মান্তিক ভাবে মৃত্যুর কারণেই গার্ড অফ অনার দেওয়া হয়েছে। আমরা ওঁর পরিবারেরপাশে থাকব।’’
সুদীপকে ধাক্কা দেওয়া গাড়িটি আটক করেছে কোলাঘাট থানার পুলিশ। চালক কোলাঘাটের আমলহান্ডা গ্রামের বাসিন্দা সুব্রত মাইতিকে রাতেই গ্রেফতার করা হয়েছে। বুধবার তাঁকে তমলুক জেলা আদালতে তোলা হলে বিচারক সাত দিন পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)