মকর সংক্রান্তির পুণ্যস্নান করতে প্রত্যেক বছর গঙ্গাসাগরে ভিড় জমান লক্ষ লক্ষ পুণ্যার্থী। তাঁদের থাকার জন্য সরকারি উদ্যোগে তৈরি করা হয় অসংখ্য হোগলা পাতার অস্থায়ী শিবির।
পূর্ব মেদিনীপুরের কোলাঘাট থেকে সাগর মেলার হোগলার চাদর সরবরাহ করার রীতি চলে আসছে প্রায় পাঁচ দশক ধরে। পৌষ সংক্রান্তি আর বেশি দূরে নয়। তাই হোগলা পাতার চাদর তৈরিতে এখন ব্যস্ত কোলাঘাটের নগুরিয়া গ্রামের মানুষ। তবে এ বার কোলাঘাট এবং তমলুকে হোগলা উৎপাদন কম হওয়ায় হাওড়ার উলুবেড়িয়া থেকে কিনতে হয়েছে বেশিরভাগ হোগলা। ফলে বেড়েছে উৎপাদন খরচ।
প্রত্যেক বছর কার্তিক মাস থেকে কোলাঘাটের নগুরিয়া গ্রামের মানুষজন ব্যস্ত হয়ে পড়েন হোগলা পাতার চাদর তৈরি করতে। রূপনারায়ণের চর লাগোয়া কোলাঘাট, শহিদ মাতঙ্গিনী এবং তমলুক এলাকায় হোগলা ঘাস জন্মায়। কার্তিক মাসের প্রথম দিকে হোগলা কেটে ফেলা হয়। কাঁচা হোগলা কেটে রোদে ভাল করে শুকনো করতে হয়। এর পর প্রয়োজন মতো কেটে ফেলা হয়। সুতলি সুতোর সাহায্যে এক-একটি হোগলা ঘাস জুড়ে তৈরি করা হয় হোগলার চাদর। সাধারণত সাড়ে ৮ ফুট বাই ৬ ফুট বা সাড়ে ৭ ফুট বাই ৫ ফুটের চাদর তৈরি হয়। নগুরিয়া গ্রামের প্রায় তিনশো মানুষ এই কাজ করেন।
কার্তিক থেকে পৌষ— এই তিন মাস কোলাঘাটের রাইন গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার নগুরিয়া গ্রামের মানুষ হোগলার চাদর তৈরির কাজে ব্যস্ত থাকেন। দিনে ১০০ থেকে ২০০ টাকা করে মজুরি জোটে। চল্লিশ বছর আগে গঙ্গাসাগরে হোগলার চাদর সরবরাহের কাজ শুরু করেছিলেন নগুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা নিমাই আদক। এখন তিনি গ্রামে হোগলা চাদর তৈরির কাজ পরিচালনা করেন। জলপথে কোলাঘাট থেকে গঙ্গাসাগরে পৌঁছতে সময় লাগে ৯ ঘণ্টা। সাগরমেলায় ছাউনি তৈরির জন্য প্রায় ৬০ হাজার হোগলার চাদর দরকার হয়।
২০২১ সালে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের জেরে রূপনারায়ণে ব্যাপক জলোচ্ছ্বাস হয়। সে সময় রূপনারায়ণ তীরবর্তী তমলুক এবং কোলাঘাটে হোগলার জঙ্গল নষ্ট হয়ে যায়। ফলে জেলায় হোগলা খুব কমই মিলেছে। দাম বেশি দিয়ে বাইরের জেলা থেকে হোগলা কিনতে হয়েছে ব্যবসায়ীদের।
কয়াঘাতের হোগলা ব্যবসায়ী বিশ্বজিৎ আদক বলেন,"আগে তমলুক এবং কোলাঘাট থেকে হোগলা পাওয়া যেত ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা বান্ডিল। কিন্তু এ বার হাওড়ার উলুবেড়িয়া থেকে হোগলা কিনতে হয়েছে। দাম পড়েছে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা। উৎপাদন খরচ বাড়লেও হোগলার চাদরের দাম সে ভাবে বাড়েনি।" হোগলা ব্যবসায়ী নিয়াই আদক বলেন,"ঠিকাদারদের মাধ্যমে আমরা সাগরমেলায় হোগলা জোগান দিই। অনেক ঠিকাদার সময় মতো টাকা দেন না। টাকা পেতে এক বছর সময় লেগে যায়। ব্যবসায় আগের মতো আর লাভ নেই।"
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)