Advertisement
E-Paper

ঝাড়ফুঁক নয়, ওঝাদেরই বার্তা শিবিরে

জানা গিয়েছে, বছর পঞ্চাশের রঞ্জন তন্ত্রসাধনা করতেন। করতেন ঝাড়ফুঁকও। আশেপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে নানা সমস্যা নিয়ে তাঁর কাছে আসতেন অনেকে। কোথাও সাপ বেরোলেই ধরে ফেলতেন রঞ্জন। বাড়িতে কাঠের বাক্সের মধ্যে সাপ পুষেও রেখেছিলেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৭ ১২:৫০

এলাকায় ওঝা হিসেবে নামডাক থাকা রঞ্জন ঘোষ সাপের ছোবলেই মারা গিয়েছেন রবিবার। খাস মেদিনীপুর শহরে এমন ঘটনার পরে নড়ে বসেছে স্বাস্থ্য দফতর। পরিস্থিতি দেখে ফের ওঝাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ শুরু করছে দফতর। আগেও অবশ্য এ ব্যাপারে তোড়জোড় হয়েছিল। তবে তার সঠিক রূপায়ণ হয়নি। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রবীন্দ্রনাথ প্রধানের যদিও আশ্বাস, “এ বার উদ্যোগের সঠিক রূপায়ণ হবে। ব্লক ধরে ধরে ওঝাদের নিয়ে প্রশিক্ষণ শিবির করে তাঁদের সচেতন করা হবে।’’

জানা গিয়েছে, বছর পঞ্চাশের রঞ্জন তন্ত্রসাধনা করতেন। করতেন ঝাড়ফুঁকও। আশেপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে নানা সমস্যা নিয়ে তাঁর কাছে আসতেন অনেকে। কোথাও সাপ বেরোলেই ধরে ফেলতেন রঞ্জন। বাড়িতে কাঠের বাক্সের মধ্যে সাপ পুষেও রেখেছিলেন। রোজ পোষ্যকে খাবার দিতেন। রবিবার সকালে বাক্সের দরজা খুলে খাবার দেওয়ার সময়ই সাপটি তাঁকে ছোবল মারে। ঝাড়ফুঁক করতে গিয়ে অনেকটা সময় পেরিয়ে যায়। পরে মেদিনীপুর মেডিক্যালে মৃত্যু হয় রঞ্জনের।

মেদিনীপুর মেডিক্যালের এক কর্তা মানছেন, “ওঝার খপ্পরে পড়েই ওই সর্পদষ্টের বিপদ হয়েছে। পরিজনেদের ভুল ধারণা ছিল। তাঁরা অনেক পরে সর্পদষ্টকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন। ততক্ষণে শরীরে বিষ ছড়িয়ে পড়েছে।’’

পশ্চিম মেদিনীপুরে মাঝেমধ্যেই এমন ঘটনা ঘটে। গত বছর সাপের ছোবলে মৃত্যু হয়েছিল গোয়ালতোড়ের বছর ষোলোর তারাবাতি মান্ডির। শুরুতে তাকেও হাসপাতালের বদলে এক ওঝার কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন বাড়ির লোক। ঝাড়ফুঁকে অবস্থা আরও খারাপ হয়। পরে হাসপাতালে আনার পথে ওই কিশোরীর মৃত্যু হয়। জেলার এক স্বাস্থ্যকর্তার মতে, এ রকম কুসংস্কারের বলি যে কেউ হতে পারে। সাপের ছোবল সম্পর্কে সবস্তরে সচেতনতা না বাড়লে এ ভাবে বেঘোরে মৃত্যু চলবেই।

সমস্যা মোকাবিলায় ওঝাদের নিয়েই শিবির করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরে সব থেকে বেশি সর্পদষ্টের ঘটনা ঘটে কেশপুর এবং ডেবরায়। এই দুই এলাকায় বহু ওঝাও রয়েছেন। তাই এই দুই এলাকা দিয়েই শিবির শুরু হবে। ঠিক হয়েছে, যে সব এলাকায় বেশি সংখ্যক মানুষ সাপের ছোবল খান, সেখানেই এই প্রশিক্ষণ শিবির হবে। ওঝাদের বোঝানো হবে, পুরনো ধ্যানধারণা আঁকড়ে থাকলে হিতে বিপরীত হয়। ঝাড়ফুঁক করে সর্পদষ্টকে বাঁচানো যায় না। প্রাণ বাঁচাতে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিয়ে যাওয়াই একমাত্র রাস্তা। পশ্চিম মেদিনীপুরে সব থেকে বেশি সর্পদষ্টের ঘটনা ঘটে কেশপুর এবং ডেবরায়। এই দুই এলাকায় বহু ওঝাও রয়েছেন। তাই এই দুই এলাকা দিয়েই শিবির শুরু হবে। জেলার উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রবীন্দ্রনাথবাবুর কথায়, “প্রশিক্ষণ শিবিরে ওঝাদের যদি সাপের ছোবল সম্পর্কে বোঝানো যায়, আশা করি পরিস্থিতির অনেকখানি উন্নতি হবে। সর্পদষ্ট হয়ে মৃত্যুর সংখ্যাও শূন্যে নামিয়ে আনা সম্ভব হবে।’’ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরাও বলছেন, ‘‘সাপের ছোবল সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধির সব রকম চেষ্টা চলছে।’’

Shaman Awarness Campaign ওঝা ঝাড়ফুঁক
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy