Advertisement
E-Paper

কলেজে গিয়েও ‘ডাইনি’ বিশ্বাস

ডাইনি প্রথা, ঝাড়ফুঁক বন্ধ করতে প্রায়ই শিবির হয়। বোঝানোর চেষ্টা হয়, এ সব ঠিক নয়। তাতে লাভ যে কিছু হচ্ছে না, তার প্রমাণ ওই তরুণী।

আনন্দ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০১৭ ০১:৩৯
প্রতীকী চিত্র।

প্রতীকী চিত্র।

শিক্ষাও তাঁর মন থেকে সরাতে পারেনি কুসংস্কারের জগদ্দল পাথর।

পাঁশকুড়ার গ্রামে ডাইনি অপবাদে প্রহৃত বছর পঞ্চাশের মহিলার বৌমা মনে করেন, তাঁর শাশুড়ি ডাইনি বলেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তাঁর সাফ কথা, ‘‘ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছি ডাইনি আছে। আমিও তাই বিশ্বাস করি।’’

ডাইনি প্রথা, ঝাড়ফুঁক বন্ধ করতে প্রায়ই শিবির হয়। বোঝানোর চেষ্টা হয়, এ সব ঠিক নয়। তাতে লাভ যে কিছু হচ্ছে না, তার প্রমাণ ওই তরুণী। পাঁশকুড়ার বিডিও বিকাশ দত্ত বলেন, ‘‘ওই মহিলা বা তাঁর পরিজনেদের উপর যাতে আর কোনও অত্যাচার না হয়, সে জন্য সকলকে সতর্ক করেছি।’’

পাঁশকুড়া শহর থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার দূরে ওই গ্রামের আদিবাসী পাড়ায় প্রায় ৩৫টি পরিবারের বাস। রয়েছেন অন্য সম্প্রদায়ের মানুষও। এই পাড়াতেই গত শনিবার রীতিমতো সালিশি সভা ডেকে ওই মহিলাকে ডাইনি ঠাওরানো হয়। তারপরেই তাঁকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। গত সোমবার ওই মহিলার মেয়ে-জামাই খবর পেয়ে গ্রামে গিয়ে ওই মহিলাকে পাঁশকুড়া সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ভর্তি করান। মঙ্গলবার আদিবাসী পাড়ায় গিয়ে দেখা মিলল নির্যাতিতার।

তিনি বলেন, ‘‘বিশ্বকর্মা পুজোর সময় বৌমার জ্বর হয়। ওকে পাঁশকুড়ার হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলাম। জ্বর কমে যাওয়ার পর বৌমাকে নিয়ে গেলেন ওর বাবা-মা।’’ তারপরে তাঁরা জানগুরুর কথা মতো মেয়ের শাশুড়িকে ডাইনি অপবাদ দেন।

নির্যাতিতার ছেলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। পেশায় সোনার কারিগর। কাজের সূত্রে বছরের বেশিরভাগ সময় দিল্লিতে থাকেন। তিনি বলছিলেন, ‘‘স্ত্রীর অসুস্থতার জন্য আমার মাকে দায়ী করে ডাইনি অপবাদ দিয়ে মারধর করা হয়। এটা আমরা মেনে নিতে পারিনি।’’ ডাইনিপ্রথায় বিশ্বাস নেই তাঁর। তবে প্রতিবেশীদের হুমকিতে রীতিমতো আতঙ্কিত তিনি।

হাসপাতালে সপ্তাহ খানেকের চিকিৎসায় জ্বর কমলেও পেটে ব্যথা হচ্ছিল নির্যাতিতার বৌমার। সে জন্য শাশুড়িকেই দায়ী করেন তিনি। বলেন, ‘‘বাড়িতে ডাইনি থাকার কারণে এটা হচ্ছে বলে আমি বিশ্বাস করি।’’ তাঁর সুরে সুর মিলিয়ে এলাকার বাসিন্দা নিমাই সরেন, রামদাস সরেনরা বলেন, ‘‘আমরাও বিশ্বাস করি ওই মহিলা নিজের ঘরে কিছু লুকিয়ে রেখেছে। তাতেই ওর বৌমা অসুস্থ।’’ পাড়ার মাতব্বর বছর ষাটের দশরথ মাণ্ডিও বলেন, ‘‘আমরা জানগুরুর নির্দেশ মেনে ওকে শাস্তি দিয়েছি।’’

গত শনিবারের সালিশি সভায় সিদ্ধান্ত হয়, মঙ্গলবার পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা থেকে জানগুরু এসে ওই মহিলার বাড়ি থেকে অপদেবতা বের করে দেবে। এ জন্য ওই মহিলার পরিজনেদেরই ১৫ হাজার টাকা দিতে হবে।

যদিও এ দিন জানগুরু আসেনি। অবশ্য এ দিন সকালে পুলিশ নিয়ে ওই এলাকায় যান বিডিও বিকাশ দত্ত, পঞ্চায়েত প্রধান দিলীপ সাঁতরা। এলাকার বাসিন্দাদের তাঁরা বোঝান ‘ডাইনি’ বলে কিছু নেই। কেউ অসুস্থ হলে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান দিলীপবাবু বলেন, ‘‘সচেতনতার অভাবের কারণেই এমনটা হচ্ছে। কুংসস্কার দূর করার জন্য সচেতনতা শিবির করা হবে।’’

superstition পাঁশকুড়া Witch calumny
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy