Advertisement
০৩ মে ২০২৪
West Bengal Panchayat Election 2023

‘পরম্পরা’ অটুট, বড়মুড়া এ বারও বিরোধী শূন্য

বড়মুড়া গ্রাম পঞ্চায়েতে ১৪টি আসনের সবগুলিতেই এ বার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন তৃণমূলের প্রার্থীরা। এখানে পঞ্চায়েত সমিতির দু’টি আসনে অবশ্য প্রার্থী দিয়েছে বিজেপি।

খোশমেজাজে এলাকার তৃণমূল কর্মীরা। নিজস্ব চিত্র

খোশমেজাজে এলাকার তৃণমূল কর্মীরা। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
গড়বেতা শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০২৩ ০৮:৪৭
Share: Save:

শাসকদলে যে, পঞ্চায়েতেও সে!

বিগত দু’দশকে এটাই দস্তুর বড়মুড়া গ্রাম পঞ্চায়েতে। ট্র্যাডিশন ধরে রেখে এ বারও বিরোধী শূন্য গড়বেতা ১ ব্লকের বড়মুড়া গ্রাম পঞ্চায়েত। এই নিয়ে টানা পাঁচবার। শেষবার এই পঞ্চায়েতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছিল ১৯৯৮ সালে। তারপর ২০০৩ থেকে ২০২৩— টানা পাঁচটি পঞ্চায়েত নির্বাচনে এখানে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সব আসনে জিতে আসছেন শাসকদলের প্রার্থীরা। বাম আমলে সিপিএম, আর এই আমলে তৃণমূল। দু’পক্ষেরই মতে, একদা রাজনৈতিক সন্ত্রাসের বধ্যভূমি বড়মুড়া শাসকের সঙ্গে থাকার অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছে!

বড়মুড়া গ্রাম পঞ্চায়েতে ১৪টি আসনের সবগুলিতেই এ বার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন তৃণমূলের প্রার্থীরা। এখানে পঞ্চায়েত সমিতির দু’টি আসনে অবশ্য প্রার্থী দিয়েছে বিজেপি। তবে গ্রাম পঞ্চায়েত একেবারে বিরোধী শূন্য। এখানে এ বার দু’জন পুরনোকে রেখে ১২ জন নতুন মুখকে প্রার্থী করেছিল তৃণমূল। যেখানে দিকে দিকে ‘গোঁজ’ প্রার্থী নিয়ে নাজেহাল অবস্থা, সেখানে বড়মুড়ায় দলীয় কর্মীদের এককাট্টা হয়ে দলকে প্রাধান্য দেওয়ার ফল সব আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় বলে জানাচ্ছেন স্থানীয় তৃণমূল কর্মীরা। এ বার এখানে তৃণমূল প্রার্থী করেছিল ছোট আঙারিয়ার ‘শহিদ’ মুক্তার খাঁর দাদা আখতার আলি খাঁকে। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন তিনিও। আখতার বলছেন, ‘‘এই পঞ্চায়েতের মধ্যেই পড়ে ছোট আঙারিয়া। সিপিএমের সেই গণহত্যা ভুলতে পারেনি বড়মুড়ার মানুষ। তাই সিপিএম বা বিরোধীদের সুযোগ নেই এখানে।’’

বড়মুড়া পঞ্চায়েতে এ বার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছেন তৃণমূলের ব্লকের সংখ্যালঘু সেলের সভাপতি হাবিবুল শেখ। শুক্রবার হেতোশোল বুথে কর্মীদের সঙ্গে মনোনয়ন পরবর্তী বিষয় নিয়ে আলোচনা করার ফাঁকে বলেন, ‘‘বড়মুড়ার উপর কম অত্যাচার হয়নি বাম আমলে। হেতোশোল, ছোট আঙারিয়ার কর্মীরা শহিদ হয়েছেন। তবুও তৃণমূলেই আস্থা এই অঞ্চলের মানুষের। অন্যদেরকে পাত্তা দেয় না।’’ আগের দু’টি পঞ্চায়েত নির্বাচনেও বড়মুড়া ছিল বিরোধী শূন্য। ভোটের আগেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে বোর্ড গঠন করেছিলেন তৃণমূল প্রার্থীরা। এ বারও তার পুনরাবৃত্তি।

দলের ব্লক সভাপতি সেবাব্রত ঘোষ বলেন, ‘‘তৃণমূল ছাড়া অন্য কোনও দলকে বিশ্বাস করে না বড়মুড়ার মানুষ। বাম আমলে সিপিএমের অত্যাচারে জর্জরিত সেখানকার বাসিন্দারা এখন তৃণমূলকেই শান্তির জায়গা বলে মনে করে। সেখানে বিরোধী দলের সংগঠনই নেই, প্রার্থী দেবে কোত্থেকে।’’

শুধু তৃণমূল আমলেই নয়, বাম আমলেও ২০০৩ ও ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে বড়মুড়ায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছিলেন বাম প্রার্থীরা। এই অঞ্চলের বাসিন্দা সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য দিবাকর ভুঁইয়া বলেন, ‘‘১৯৯৮ সালে তৃণমূল-বিজেপি সন্ত্রাস করে এই অঞ্চল দখল করেছিল। তারপর মানুষ অভিজ্ঞতা দিয়ে এই দুই দলকে বিদায় দেয়। তাই ২০০৩ ও ২০০৮ সালের পঞ্চায়েতে বিরোধীদের দেখা মেলেনি এখানে। রাজ্যে পালাবদলের পরে সেই সন্ত্রাস করেই বড়মুড়া বিরোধী শূন্য রাখছে শাসকদল।’’

বড়মুড়ায় দলের প্রার্থী না থাকার কারণ ব্যাখ্যা করে বিজেপির জেলা সহ-সভাপতি শঙ্করকুমার গুছাইত বলছেন, ‘‘বড়মুড়ায় তৃণমূল ব্যাপক সন্ত্রাস চালাচ্ছে। এটা গণতন্ত্রকে হত্যা করার চক্রান্ত। সেখানে লোকসভায় যোগ্য জবাব পাবে তৃণমূল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE