Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

আধিকারিক পোলিং, কেরানি প্রিসাইডিং!

বাড়ি, কর্মস্থল সবই মেদিনীপুরে। ভোটের কাজে যেতে হবে গোয়ালতোড়। ক্লার্ক বলছিলেন, “ওটা কোনও ব্যাপার নয়। আগে কখনও ভোটের কাজে যাইনি। তবে জানি, দূরে দূরেই ভোটের কাজ পড়ে।”

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০১৮ ০১:৫৪
Share: Save:

ভোটের কাজের চিঠি পড়ে দেখার পরে হাত কাঁপছিল এলআইসি-র ক্লার্কের। কী করবেন প্রথমে ভেবে পাচ্ছিলেন না। বাড়ি, কর্মস্থল সবই মেদিনীপুরে। ভোটের কাজে যেতে হবে গোয়ালতোড়। ক্লার্ক বলছিলেন, “ওটা কোনও ব্যাপার নয়। আগে কখনও ভোটের কাজে যাইনি। তবে জানি, দূরে দূরেই ভোটের কাজ পড়ে।” তাহলে হাত কাঁপছিল যে? ওই ক্লার্কের কথায়, “আমার দলের বাকি কর্মীদের পদমর্যাদা দেখেই নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারছিলাম না। হাতটা নিজে থেকেই কেঁপে যায়!”

ঠিক কী হয়েছে? চিঠি পড়ে এলআইসি-র ক্লার্ক জানতে পারেন, তাঁকে গোয়ালতোড়ের একটি বুথের প্রিসাইডিং অফিসার করা হয়েছে। অর্থাৎ বুথের ‘প্রধান’ তিনিই। অথচ ওই বুথে অন্য যে সব কর্মী রয়েছেন, তাঁদের পদমর্যাদা তাঁর চেয়ে অনেক বেশি। ভোটের চিঠিতে ক্লার্ক দেখেন, বুথের ফার্স্ট পোলিং অফিসার করা হয়েছে অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর অফ এগ্রিকালচার মার্কেটিং (অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) পদমর্যাদার এক আধিকারিককে। সেকেন্ড পোলিং অফিসার কেশপুরের এক হাইস্কুলের শিক্ষক। থার্ড পোলিং অফিসার শিক্ষা দফতরের এক এসআই। আর ফোর্থ পোলিং অফিসার এক ব্যাঙ্ককর্মী। ওই ক্লার্কের কথায়, “বড় অফিসার যেখানে রয়েছেন, সেখানে আমার পক্ষে প্রিসাইডিং অফিসারের দায়িত্ব নেওয়া অসম্ভব। এটা হয় না কি? আমার মতো ক্লার্কের তাঁরা শুনবেনই বা কেন!’’ এই প্রথম ভোটের কাজে যাবেন ওই ক্লার্ক। আর প্রথমেই প্রিসাইডিং অফিসার। তিনি বলেন, ‘‘যেখানে যেখানে জানানোর জানিয়েছি। দেখি সংশোধন হয় কি না!”

পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক তথা জেলা নির্বাচনী আধিকারিক জগদীশপ্রসাদ মিনা বলেন, “ঠিক কী হয়েছে দেখছি। কোথাও ভুল হয়ে থাকলে তা সংশোধন করা হবে।” ঘটনায় অস্বস্তিতে পড়েছে প্রশাসন। জেলা নির্বাচনী আধিকারিকের দফতরও। জেলা প্রশাসনের এক শীর্ষ আধিকারিক মানছেন, “কোথাও একটা ভুল হয়ে গিয়েছে!” এমন গোলমেলে উদাহরণ অবশ্য আরও রয়েছে। দেখা যাচ্ছে, যে বুথের প্রিসাইডিং অফিসার কোনও ক্লার্ক হয়েছেন, সেই বুথের ফার্স্ট পোলিং কিংবা সেকেন্ড পোলিং অফিসার হয়েছেন কোনও হাইস্কুলের শিক্ষক। পশ্চিম মেদিনীপুরে বুথের সংখ্যা ৩,৭৩০টি। প্রতি বুথে ৫ জন করে কর্মী কথার কথা। ২০ শতাংশ বাড়তি কর্মী আবার রাখতে হয়। সেই মতো জেলায় বিভিন্ন দফতরের প্রায় ২২ হাজার কর্মীকে ভোটের কাজে নেওয়া হয়েছে। এলআইসি কর্মীদের সাধারণত ভোটে নেওয়া হয় না। বাড়তি কর্মীর প্রয়োজনে এ বার তা-ও হয়েছে।

সব শুনে জেলা প্রশাসনের এক শীর্ষ আধিকারিকের আশ্বাস, “পদমর্যাদা এবং বেতনক্রম দেখেই ভোটকর্মীদের দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। প্রায় ২২ হাজার কর্মী তো আর কম নয়। দু’- একটা ক্ষেত্রে হয়তো ভুল হয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE