Advertisement
E-Paper

গেরুয়া আঁচে বাজার জমছে শেষবেলায়

অভিযান হচ্ছে। সব পক্ষকে তুষ্ট রেখে শব্দবাজিও হচ্ছে। দেখল আনন্দবাজার মেদিনীপুর শহর থেকে মাত্র ৬-৭ কিলোমিটার দূরে ছেড়ুয়া গ্রাম। মেদিনীপুর সদর ব্লকের পাঁচখুরি পঞ্চায়েতের অন্তর্গত এই গ্রাম।

সৌমেশ্বর মণ্ডল

শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০১৯ ০০:৫৭
অবাধে: ছেড়ুয়ার মাইনরিটি সেন্টারের সামনে শুকনো করা হচ্ছে রকমারি শব্দবাজি। নিজস্ব চিত্র

অবাধে: ছেড়ুয়ার মাইনরিটি সেন্টারের সামনে শুকনো করা হচ্ছে রকমারি শব্দবাজি। নিজস্ব চিত্র

এত দিন একাধিপত্য ছিল তৃণমূলের। এখন জেলায় বিজেপি বেড়েছে। সেই গেরুয়া আঁচ বাজি বাজারেও। বেআইনি বাজির কারবারে এ বার তাই শাসক শিবিরের পাশাপাশি গেরুয়া শিবিরকেও ‘তুষ্ট’ রাখতে হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন বাজির কারবারিরা।

মেদিনীপুর শহর থেকে মাত্র ৬-৭ কিলোমিটার দূরে ছেড়ুয়া গ্রাম। মেদিনীপুর সদর ব্লকের পাঁচখুরি পঞ্চায়েতের অন্তর্গত এই গ্রাম। কালীপুজো-দীপাবলির আগে এখানে অবৈধ শব্দবাজি তৈরি ও বিক্রি হয় বলে বরাবরের অভিযোগ। বছর কয়েক আগে এখানে বাজি তৈরির সময়ে বিস্ফোরণে কয়েক জনের মৃত্যুও হয়েছিল। তাতেও অবশ্যে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে নিষিদ্ধ হাজি তৈরি বন্ধ হয়নি।

এ বার অবশ্য দুর্গাপুজোর পরপরই ছেড়ুয়ায় বাজি অভিযান করে পুলিশ। তারপরে দিনকয়েক কারবার বন্ধ থাকলেও বাজি তৈরিতে ছেদ পড়েনি। আলোর উৎসবের ছেড়ুয়া গ্রামে ঘুরে অন্তত সেটাই দেখা গেল। স্থানীয় বাজি ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত বছর পর্যন্ত শুধু তৃণমূল নেতাদের কাছে গেলেই হতো। এ বার বিজেপি-র কাছেও যেতে হয়েছে। দুই দল ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলার পরেই তাঁরা কাজ শুরু করেছেন।

লোকসভা ভোটের ফলপ্রকাশের পর থেকেই মেদিনীপুরের গ্রামীণ এলাকায় সংগঠন বাড়াচ্ছে বিজেপি। ছেড়ুয়া গ্রামও তার ব্যতিক্রম নয়। পাঁচখুরি পঞ্চায়েতটি তৃণমূলের দখলে থাকলেও গত কয়েক মাস ধরেই ছেড়ুয়া গ্রাম দখলকে কেন্দ্র করে তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষ চলছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পরিবর্তনের আগে সিপিএম ও পরে তৃণমূলের স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে বাজি তৈরি ও বিক্রির কাজ চলত। কিন্তু লোকসভা ভোটের পরে গ্রামে বিজেপির সমর্থন বাড়ার পরে কোন দলের কাছে গেলে কাজ হবে সেটা বুঝতে সময় চলে যায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাজি ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘প্রায় ৩৫ বছর ধরে বাজির ব্যবসা করছি। এ বার পরিস্থিতি কিছুটা আলাদা। এলাকায় যাঁরা বিজেপি করে তাঁদের সঙ্গেও কথা বলতে হয়েছে।’’ আরেক বাজি ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘বছরের মাত্র কয়েকটা দিন ব্যবসা করি। তাই পুলিশ যাতে হয়রানি না করে সেটা বিজেপি নেতাদের দেখতে বলেছি।’’

ছেড়ুয়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, বেশিরভাগ বাড়ির উঠোনে ত্রিপল পেতে ছোট, মাঝারি ও বড় মাপের বোমা শুকনো করা হচ্ছে। গ্রামের শেষ দিকে মাইনোরিটি সেন্টারের সামনের মাঠেও ত্রিপল পেতে নানা রঙের শব্দবাজি শুকোতে দেওয়া হয়েছে। সবটাই হচ্ছে প্রকাশ্যে এবং নিশ্চিন্তে। অচেনা মুখ দেখে এগিয়ে এলেন এক মাঝবয়সী ব্যক্তি। বললেন, ‘‘কী বাজি নেবেন বলুন। তৃণমূল, বিজেপি ও পুলিশ একসঙ্গে বসে আলোচনা হয়েছে। এই ক’টা দিন ভয় নেই।’’

সত্যিই কি কোনও বোঝাপড়া হয়েছে? বিজেপির জেলা সম্পাদক অরূপ দাসের অবশ্য দাবি, ‘‘আমরা অবৈধ কাজকে সমর্থন করি না। কোতোয়ালি থানার আইসি ও তৃণমূলের মধ্যে বোঝাপড়া হয়েছে। যাঁরা অবৈধ বাজির কারবার করছেন তাঁদের অনেকেই তৃণমূল সমর্থক।’’

কোতোয়ালি থানার আইসি পার্থসারথি পালের দাবি, ‘‘অভিযোগ ভিত্তিহীন। কয়েকদিন আগেই অবৈধ বাজির খোঁজে ছেড়ুয়ায় অভিযান চালানো হয়েছে।’’ পুলিশ ও বিজেপির সঙ্গে বোঝাপড়ার অভিযোগ মানেনি তৃণমূলও। বিধায়ক তথা জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান দীনেন রায় বলেন, ‘‘ধেড়ুয়ার গরিব মানুষরা পেটের জ্বালায় বাজির কাজ করে। আমাদের দলের সঙ্গে পুলিশের বোঝাপড়া নেই।’’

জেলা পুলিশ সুপার দীনেশকুমার বলেন, ‘‘নিষিদ্ধ শব্দবাজি রুখতে জেলা জুড়ে অভিযান চলছে। ছেড়ুয়াও তার ব্যতিক্রম নয়।’’

BJP TMC Firecrackers
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy