মায়ের ছবি আঁকড়ে ভবানী। নিজস্ব চিত্র।
পয়েন্ট-সিগন্যালের তালগোলে তিন ট্রেনের সংঘর্ষে ঘটেছিল ভয়ঙ্কর রেল দুর্ঘটনা। ওড়িশার বাহানাগার সেই দুর্ঘটনায় মৃতদেহের স্তূপ থেকে শনাক্ত হয়েছিল এ রাজ্যের ৯০ জনের দেহ। রেল দুর্ঘটনায় এ রাজ্যের মৃতদের পরিবারের এক জনকে স্পেশাল হোমগার্ডে চাকরির কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই দুর্ঘটনা কেড়ে নিয়েছিল খড়্গপুরের হীরা নায়েকের প্রাণ। দুর্ঘটনার পরে কেটেছে এক বছর। এখনও চাকরির আশায় বসে হীরার অসহায় মেয়ে ভবানী!
খড়্গপুর শহরের ট্রাফিকের অম্বেডকর রেলবস্তির বাসিন্দা ভবানী। গত বছর ২ জুন মৃত্যু হয় তাঁর মা, বছর সাঁইত্রিশের হীরা নায়েকের। যশবন্তপুরের ইঞ্জিন থেকে উদ্ধার হয়েছিল হীরার দেহ। মা কশিতা দাসকে কটক থেকে চিকিৎসা করিয়ে যশবন্তপুর এক্সপ্রেসে ফিরছিলেন হীরা। সাধারণ কামরায় উঠতে না পেরে গার্ডকে অনুরোধ করে তাঁরা উঠে পড়েছিলেন ইঞ্জিনে। তার পরেই বাহানাগার কাছে সেই দুর্ঘটনা।
গত বছর ৫ জুন দ্বিতীয় হুগলি সেতুর টোলপ্লাজ়ায় মৃতদের শ্রদ্ধা জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘‘আমরা ঠিক করেছি মৃত পরিবারগুলিকে পাঁচ লক্ষ টাকা দেব। সঙ্গে একটা করে স্পেশাল হোমগার্ডের চাকরি দেব।’’ পর দিনই খড়্গপুর মহকুমা প্রশাসনের প্রতিনিধিরা গিয়ে হীরার বাড়িতে চাকরির জন্য নথি জমা দিতে বলেছিলেন। এর পরে ৭ জুন সেই নথি মহকুমাশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে এক ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জমা দিয়েছিলেন বলে জানান ভবানী। সেই চাকরি এখনও মেলেনি। যদিও এ দিন বিষয়টি জেনে খড়্গপুরের মহকুমাশাসক পাতিল যোগেশ অশোকরাও বলেন, ‘‘ওই রেল দুর্ঘটনার অনেক পরে আমি এখানে দায়িত্বে এসেছে। আমার কাছে কেউ এই বিষয়ে সরাসরি এসে কিছু বলেননি। যদি এমন কোনও ঘটনা থাকে, তা হলে ৪ জুনের পরে আমার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করলে বিষয়টি খতিয়ে দেখে নিশ্চয় পদক্ষেপ করব।’’
রবিবার ওই রেল দুর্ঘটনার এক বছর পূরণের দিনে হীরার পরিবারের খোঁজ নিতে তাঁর রেলবস্তির ঝুপড়ি বাড়িতে গিয়েছিলেন ‘আমরা বামপন্থী’ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। হীরার মেয়ে ভবানী এখনও চাকরি না পাওয়ায় সরব হন তাঁরাও। সংগঠনের আহ্বায়ক অনিল দাস বলেন, ‘‘বারবার মহকুমাশাসকের কার্যালয় থেকে নবান্নে ছুটেও চাকরি হয়নি। আমরা জানি অনেকে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা মতো চাকরি পেয়েছেন। আমাদের আবেদন, রাজ্য সরকার যেন প্রতিশ্রুতি মেনে ভবানী নায়েককে চাকরি দেয়।’’ মৃত হীরার খড়্গপুরের ঝুপড়ি বাড়িতে রয়েছেন স্বামী নির্মাণ শ্রমিক শম্ভু নায়েক। সেই রোজগারেই মেয়ে ভবানী ও ছেলে ঈশ্বরকে নিয়ে সংসার চালাচ্ছেন। প্রতিদিন দু’বেলা খাবার জোটে না ভাল ভাবে। অভাব সত্ত্বেও চাকরিপ্রার্থী ভবানী ইতিহাসে অনার্স নিয়ে স্নাতকের পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন। অভাবে পড়া ছেড়ে গাড়ির গ্যারাজে কাজ করেন ছেলে ঈশ্বর। বাবা শম্ভু নায়েক বলেন, ‘‘আমি টুকটাক নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতাম। ছেলেটাও অভাবের তাড়নায় ১৫ বছর বয়সেই গাড়ির গ্যারাজে কাজে ঢুকেছিল। স্ত্রীর মৃত্যু আমাদের কাছে দুঃস্বপ্নের মতো। তবে মুখ্যমন্ত্রী চাকরি দেবেন বলায় চেয়েছিলাম, পড়াশোনায় ঝোঁক থাকা মেয়েটা যেন চাকরি পায়।’’ আর ভবানী বলছেন, ‘‘বারবার ঘুরেও নতুন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে দেখা হয়নি। পরে নবান্নে গিয়েছি, শ্রম দফতরে বারবার ঘুরেছি। কিন্তু চাকরি পাইনি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy