বিধানগর মাঠে আগের পরিবেশ ফিরেছে। সন্ধের পরে ভিড় খুদেদের।
ছেলের হাত ধরে মাঠে যাওয়া ভুলতে বসেছিলেন রিক্তা রায়। নতুন করে ফের মাঠমুখো হয়েছেন তিনি।
কেন মাঠে যাওয়া ছেড়েছিলেন?
মেদিনীপুর শহরের বিধাননগর এলাকার বাসিন্দা রিক্তাদেবীর জবাব, ‘‘মাঠে নেশার আসর, ছেলেমেয়েদের মুখে অশ্লীল কথা, এ সব তো শিশুমনে বিরূপ প্রভাব ফেলে। অনেক সময়েই ছেলে এ সব নিয়ে জানতে চাইত। তাই ওকে মাঠে আনা বন্ধ করেছিলাম।’’ ক’দিন হল ফের বিধাননগর মাঠে আসছেন রিক্তাদেবী।
বিধাননগর মাঠের হাল ফিরিয়েছে সপ্তাহ খানেক আগের একটা ঘটনা। সেই সন্ধ্যায় এই মাঠে চলা নেশার আসরের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন এলাকার মহিলারাই। নেতৃত্বে ছিলেন স্থানীয় কাউন্সিলর মৌ রায়। তারপর থেকে মাঠে পুলিশি টহলও হচ্ছে। ফলে, নেশার আসর, অভব্য আচরণ, মহিলাদের উদ্দেশে কটূক্তির মতো ঘটনা আর সে ভাবে হচ্ছে না। আলোকিত বিধাননগর মাঠে সন্ধের পরে কচিকাঁচারা ভিড় জমাচ্ছে। প্রবীণ-প্রবীণারাও আড্ডা দিতে আসছেন। বৃহস্পতিবার সন্ধেয় মাঠে দেখা হল কৃষি-সেচ বিভাগের প্রাক্তন সুপারিনটেন্ডিং ইঞ্জিনিয়ার অমল চক্রবর্তীর সঙ্গে। মাঠে ঘুরতে ঘুরতে তিনি বলছিলেন, ‘‘ক’দিন আগেও মাঠে স্বস্তিতে ঘুরতে পারতাম না। ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের অভব্যতা, ধূমপান, মদ্যপান, গালিগালাজে মুক্ত বাতাসেও হাঁফিয়ে উঠতাম। এখন আবার নিশ্চিন্তে প্রতিদিন মাঠে আসতে পারছি।’’
বিধাননগরে প্রতিবাদ হয়েছিল, তাই হাল ফিরেছে। শহরের বাকি মাঠগুলোর অবস্থা অবশ্য একই। বিধাননগরের ঘটনার পরে মাঝেমধ্যে বিভিন্ন মাঠে মোটরবাইকে বা জিপে পুলিশের টহল চলছে বটে। তবে সব মাঠে আলো নেই। সেই সুযোগে নেশার আসর চলছেই। কলেজ মাঠে ঘুরতে যাওয়া জগবন্ধু মাইতির কথায়, “আগে যেমন মাঠ জুড়ে মাদকাসক্ত ও জুয়াড়িদের আড্ডা চলত, এখন তা অনেকটা কমেছে। তবে হস্টেল লাগোয়া অংশে অন্ধকার থাকায় সেখানে আসর জমে। আমরা ওই দিকটা এড়িয়েই চলি।’’
অন্ধকারে ডুবে কলেজ-কলেজিয়েট মাঠ। (ডানদিকে) আলো জ্বলেনি রাঙামাটির মাঠেও। মেদিনীপুরে ছবি তুলেছেন সৌমেশ্বর মণ্ডল।
তেতুঁলতলার মাঠেও অন্ধকারে অসামাজিক কাজ হয় বলে অভিযোগ। রাঙামাটি, শরৎপল্লি, বার্জটাউন, রবীন্দ্রনগর, অরবিন্দনগর-সহ বিভিন্ন মাঠে যাঁরা বেড়াতে, গল্প করতে আসেন, তাঁদের অভিজ্ঞতাও ভাল নয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, রাত ৯টার পরে ওই সব মাঠে মোটরবাইক চালিয়ে এসে ভিড় করে বেপাড়ার ছেলেরা। মদ-গাঁজার আসর জমে। পরে দেখা যায়, মাঠে পড়ে আছে ফাঁকা বোতল।
পুরসভা থেকে পুলিশ, সবাই অবশ্য ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিচ্ছে। মেদিনীপুরের উপপুরপ্রধান জিতেন্দ্রনাথ দাস বলেন, “বহিরাগতদের জন্যই এ সব সমস্যা হচ্ছে। তবে পুলিশ মাঝেমধ্যেই মাঠে যাচ্ছে। এলাকার কাউন্সিলরদেরও নিয়মিত নজরদারির কথা জানিয়েছি। তাতে সুফলও মিলছে।’’ মেদিনীপুর কোতোয়ালি থানা সূত্রে খবর, সন্ধের পর প্রতিটি মাঠেই একবার করে টহল দেওয়া চলছে। নিয়মিত এই টহল চলবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy