Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

যানজটে দাওয়াই পাতাল পার্কিং

রাস্তায় গাড়ি নিয়ে বেরোলেই হ্যাপার অন্ত নেই। অটো, টোটো, লোটো গিজগিজ করছে। সাইকেল, মোটর সাইকেল, রিকশা তো রয়েছেই। সবের চাপে পথচলাই দায়।শহরের লোকসংখ্যা উত্তরোত্তর বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যানজটের ফাঁস চেপে বসছে মেদিনীপুরে।

বাইকের দখলে রাস্তা। মেদিনীপুরের এলআইসি মোড়ে।— নিজস্ব চিত্র।

বাইকের দখলে রাস্তা। মেদিনীপুরের এলআইসি মোড়ে।— নিজস্ব চিত্র।

সুমন ঘোষ
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:৩৫
Share: Save:

রাস্তায় গাড়ি নিয়ে বেরোলেই হ্যাপার অন্ত নেই। অটো, টোটো, লোটো গিজগিজ করছে। সাইকেল, মোটর সাইকেল, রিকশা তো রয়েছেই। সবের চাপে পথচলাই দায়।

শহরের লোকসংখ্যা উত্তরোত্তর বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যানজটের ফাঁস চেপে বসছে মেদিনীপুরে। আর এই দুর্ভোগের অন্যতম কারণ, জেলার সদর শহরে নির্দিষ্ট পার্কিং জোনের অভাব। একে তো ফুটপাথ, এমনকী রাস্তার দু’দিকের কিছুটা অংশ দখল করে নিয়েছেন হকাররা। তার উপর দোকান-বাজার-ব্যাঙ্কে বেরনো লোকজন রাস্তাতেই দাঁড় করিয়ে দিচ্ছেন দু’চাকা বা চার চাকা। ফলে নিত্য যানজটে দুর্ভোগে পড়ছেন শহরবাসী। পাঁচ মিনিটের পথ যেতে আধঘন্টা সময় লাগছে। বাড়ছে দুর্ঘটনার আশঙ্কাও।

সমস্যা মেটাতে তাই প্রথমে পার্কিং জোন তৈরির ভাবনাচিন্তা শুরু করেছে পুরসভা। তবে রাস্তা তো বেদখল। তাই মাটির নীচে অর্থাৎ আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিং জোন তৈরির পরিকল্পনা করা হচ্ছে। মেদিনীপুরের উপ-পুরপ্রধান জিতেন্দ্রনাথ দাস বলেন, ‘‘পার্কিং জোন যে ভীষণ জরুরি হয়ে পড়েছে, এটা ঠিক। সে জন্যই মাটির নীচে কী ভাবে পার্কিংজোন করা যায় তার চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে। শীঘ্রই এ ব্যাপারে পদক্ষেপও করা হবে।’’

যানজট কাটাতে ইতিমধ্যে রাঙামাটিতে উড়ালপুল তৈরি হয়েছে। তবে বিরোধীরা আরও উড়ালপুল তৈরির উপরেই জোর দিচ্ছে। কংগ্রেস কাউন্সিলর শম্ভুনাথ চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘শহরকে গতিশীল করতে উড়ালপুল জরুরি। এর জন্য এখন থেকে চিন্তাভাবনা শুরু না করলে ভবিষ্যতে সমস্যায় পড়তে হবে পুরসভাকে। যে ভাবে চারদিকে জমি বেদখল চলছে, তাতে উড়ালপুলের স্তম্ভ তৈরির জন্য জমি মেলাও দুষ্কর হবে। তাই এখন থেকেই প্রস্তুতিটা জরুরি।’’ উপ-পুরপ্রধান যদিও জানান, উড়ালপুল নিয়ে এখনই কোনও ভাবনা নেই।

শহরের জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বদলাচ্ছে শহরবাসীর জীবনশৈলী। সাবেক দোকানের পাশাপাশি মফস্সলেও এখন শপিং মলের সংস্কৃতি ঢুকে পড়েছে। খুলেছে বিভিন্ন বড় বড় সংস্থার শোরুম। পাল্লা দিয়ে জেলার সদর শহরে বেড়েছে ব্যাঙ্কের শাখাও। আর এই সব প্রতিষ্ঠানই প্রায় বড় রাস্তার ধারে। সেখানে লোকজন এলে তাই রাস্তাতেই গাড়ি রাখছেন। ধরা যাক রাজাবাজার পঞ্চুরচকের কথা। এখানে রাস্তা প্রসারিত হওয়া সত্ত্বেও দু’দিকে হকার থাকায় যানজট লেগেই রয়েছে। এখানে রয়েছে ডাকঘর, টেলিফোনের অফিস। সামনেই মেদিনীপুর কলেজ ও কলেজিয়েট স্কুল। পরে আবার এই এলাকায় দু’টি ব্যাঙ্কের শাখা খুলেছে। পার্কিং জোন না থাকায় এই চত্বরে নানা প্রয়োজনে আসা লোকজন রাস্তাতেই গাড়ি রাখতে বাধ্য হন।

একই পরিস্থিতি এলআইসি চক, কেরানিতলা, বটতলা চক, স্কুলবাজার-সহ শহরের প্রায় সর্বত্র। তবে এখনই সব জায়গায় মাটির নীচে পার্কিং জোন তৈরির কথা ভাবছে না পুরসভা। প্রাথমিক ভাবে পঞ্চুরচক ও এলআইসিচকে এই পার্কিং জোন হবে। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, এমন ভাবে পরিকল্পনা করা হচ্ছে, যাতে একাধিক এলাকার মানুষ এতে উপকৃত হন। যেমন, সুড়ঙ্গপথের একটা মুখ হল পঞ্চুরচকে তো অন্যটি গোলকুয়াচকে। একই ভাবে এলআইসিচকে এমন পরিকল্পনা করা হবে যাতে কালেক্টরেট মোড় ও এলআইসি চকের যানজট কমানো যায়। এই দু’টি প্রধান এলাকার যানজট কাটানো গেলে মেদিনীপুরের গতি অনেকটাই বাড়বে বলে শহরবাসীর আশা। তবে শহরবাসী চাইছেন, শুধু সিদ্ধান্ত নয়, দ্রুত রূপায়িত হোক এই পাতাল-পার্কিংয়ের পরিকল্পনা। শহরের বাসিন্দা প্রলয় দাস যেমন বললেন, “পুরসভার এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়। আমাদের একটাই দাবি, দ্রুত গতিতে কাজ হোক। তাহলে শহরবাসী অনেকটাই হাঁফ ছেড়ে বাঁচবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bike Parking lot
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE