E-Paper

মায়ে-ছায়ে নিরাপদ, বাড়ছে হাতির প্রসব

জঙ্গলমহলে হাতি নিয়ে খুশির খবর। বন দফতর জানাচ্ছে, জঙ্গলমহলের ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়া এবং বাঁকুড়া জেলায় ২০১৭ সালে মোট হাতি ছিল ১৯৪টি।

রঞ্জন পাল

শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২৫ ০৮:৩১
মায়ের সঙ্গে হস্তি শাবক।

মায়ের সঙ্গে হস্তি শাবক। —ফাইল চিত্র।

মায়ের পিছনে চলেছে তারা। কখন মায়ের লেজ ধরে। কখনও খুনসুটি করতে করতে। ঝাড়গ্রামের বন দফতরের বিভিন্ন ডিভিশনে এই দৃশ্য চেনা। মায়ের সঙ্গে হাতির শাবকদের দৃশ্যে খুশি হন বন দফতরের আধিকারিকেরাও। তাঁদের মতে, মায়ে-ছায়ের এমন দৃশ্য বেশি দেখা মানে জঙ্গল তাদের কাছে নিরাপদ। আর জেলার নিরাপদ জঙ্গল মা হাতিরা নির্ভয়ে প্রসবের জন্য বেছে নিচ্ছে।

জঙ্গলমহলে হাতি নিয়ে খুশির খবর। বন দফতর জানাচ্ছে, জঙ্গলমহলের ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়া এবং বাঁকুড়া জেলায় ২০১৭ সালে মোট হাতি ছিল ১৯৪টি। ২০২৫ সালে হয়েছে ২২৪টি।

বন দফতরের মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) তথা মুখ্য বন্যপ্রাণ (রক্ষক) সন্দীপ সুন্দ্রিয়াল বুধবার ঝাড়গ্রামে এসে জানিয়েছিলেন, ‘‘হাতি হল জাতীয় হেরিটেজ অ্যানিম্যাল। এখানে জঙ্গল ভাল থাকার কারণে হাতি নিরাপদ আশ্রয়ে রয়েছে।’’

ঝাড়গ্রাম জেলায় প্রতি বছর বাচ্চার জন্ম দিচ্ছে হাতি। ঝাড়গ্রামকে হাতিদের ভাললাগার ব্যাখ্যা মিলল প্রাণী চিকিৎসকদের কাছে। তাঁদের মতে, যে কোনও বন্যপ্রাণীর অন্যত্র যাওয়ার প্রথম কারণ পানীয় জল। দ্বিতীয় খাদ্য। ঝাড়খণ্ডের দলমায় জলস্তর দূষিত বা নষ্ট হয়েছে। আবার এক দশকে দক্ষিণবঙ্গে শস্য-আনাজ চাষ কয়েক গুণ বেড়েছে। জঙ্গল লাগোয়া সরকারি জমি পাট্টা দেওয়ায় বেড়েছে চাষও। কংসাবতী ক্যানাল ও গভীর নলকূপের মাধ্যমে সারা বছর আনাজ চাষ হচ্ছে। হাতিদের কাছে জল ও ফসল, দু’টোই লোভনীয়।

নজর এড়াতেও সুবিধে হয় এই জেলার জঙ্গলে। ঝাড়গ্রামের প্রতিটি বিটে ‘লাটা জঙ্গল’ (কাঁটা ঝোপ) রয়েছে। এই জঙ্গল ঘন। দূর থেকে দেখা যায় না। রোদ, বৃষ্টি ও মানুষের দৃষ্টি থেকে বাঁচার সহায়ক। প্রাণী চিকিৎসক চঞ্চল দত্ত বলেন, ‘‘হাতি সাধারণত তিন বছর অন্তর শাবক প্রসব করে। জেলায় শুকনো পাতার বদলে রসালো আনাজ ও দানা খাবার পাওয়ার ফলে প্রোটিনের ঘাটতি দূর হচ্ছে। পুষ্টির ঘাটতি পূরণ হওয়ায় প্রজননের ফলে হাতি অন্তঃসত্ত্বা সহজেই হচ্ছে। এটা খুবই ভাল ইঙ্গিত।’’ চঞ্চল বলেন, ‘‘ভারতে হাতির সংখ্যা দ্রুত হারে কমছে। ঝাড়গ্রাম জেলায় যে ভাবে বংশ বিস্তার হচ্ছে তাতে এটা আমাদের পক্ষে খুব ভাল।’’

হাতি সাধাণরত আট-ন’বছর থেকেই সন্তানধারণে সক্ষম হয়। গর্ভধারণ করে ২২-২৪ মাস। ৬৫-৭০ বছর বয়স পর্যন্ত সন্তান ধারণে সক্ষম। এই হিসেবে একটি হাতি সারা জীবনে ২০টি বাচ্চার মা হতে পারে।

হাতিদের গন্তব্যেরও পরিবর্তন হয়েছে। ঝাড়গ্রামের ডিএফও উমর ইমাম বলছেন, ‘‘হাতি এখন ঝাড়খণ্ড বেশি যাচ্ছে না। ওড়িশার দিকে যাচ্ছে। আবার ঘুরে এসে এখানেই বছরভর থাকছে।’’ বন দফতরের এক আধিকারিক জানাচ্ছেন, ওড়িশায় ৪০-৫০ কিলোমিটার ক্যানাল রয়েছে। এই ক্যানালে বাধা পায় হাতি। ফলে ওড়িশা গেলেও এক মাসের মধ্যে ফিরে চলে আসে। ঝাড়গ্রামের ডিএফও উমর ইমাম বলেন, ‘‘হাতি এই জেলায় সহায়ক পরিবেশ পাচ্ছে বলেই বাচ্চা প্রসব করছে। বৃহস্পতিবারও ডিভিশনে মোট ছ’টি শাবক রয়েছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Jhargram

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy