চমকাইতলা থেকে এ ভাবেই পাচার হচ্ছে মোরাম। নিজস্ব চিত্র
নামেই চমক। দু’দশক আগে। দু’দশক পরেও। শুধু বদলে গিয়েছে অনুষঙ্গ।
চমকাইতলা। একসময় পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া ও হুগলি জেলার সীমানার সংযোগস্থলে অবস্থিত চমকাইতলা শিরোনামে উঠে এসেছিল রাজনৈতিক সংঘর্ষের কারণে। এখন তা হয়েছে মোরাম-বোল্ডার পাচারকারীদের স্বর্গরাজ্য। এই এলাকায় রয়েছে সিকেরডোব নামে একটি খাদান। স্থানীয়দের অভিযোগ, ওই খাদান থেকেই নিয়ম বর্হিভূত ভাবে কখনও শ্রমিকের মাধ্যমে আবার কখনও মেশিনের সাহায্যে তোলা হয় মোরাম আর বোল্ডার। তবে শুধু চমকাইতলা নয়। সন্ধিপুর, খড়কুশমার একটা অংশে, চন্দ্রকোনার আমশোল, গোপীনাথপুর, কৃষ্ণপুর, পানশিউলি প্রভৃতি এলাকায় যথেষ্টই সক্রিয় এই পাচারচক্র। খাদান থেকে তোলা হয় টন টন মোরাম ও বোল্ডার।
কোন রুটে পাচার হয় এই মোরাম-বোল্ডার? খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, চমকাইতলা ও সন্ধিপুর এলাকার খাদান থেকে বড়বড় লরিতে মোরাম - বোল্ডার বোঝাই হয়ে মূলত দুটি রুটে পাচার হয়। একটি চমকাইতলা থেকে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সীমানা পেরিয়ে কৃষ্ণগঞ্জ, বদনগঞ্জ গোঘাট হয়ে হুগলীর আরামবাগ, তারকেশ্বর। অন্যটি সন্ধিপুর হয়ে কৃষ্টপুর, শ্রীনগর থেকে রামজীবনপুর। এখান থেকে দুটি রাস্তা ধরে দু’দিকে পাচার হয়। রামজীবনপুর থেকে একটি হাজিপুর, কামারপুকুর হয়ে আরামবাগ। অন্যটি ক্ষীরপাই হয়ে ঘাটাল, দাসপুর, হয়ে ভিন জেলা। খড়কুশমা, আমশোল, আঁধারনয়ন এলাকার কারবারিরা মোরাম-বোল্ডার বোঝাই গাড়িগুলি নিয়ে যায় কয়েকটি রুটে। একটি রসকুণ্ডু, চন্দ্রকোনা, নেড়াদেউল, কেশপুর হয়ে মেদিনীপুর বা খড়গপুর। আর একটি চন্দ্রকোনা, ক্ষীরপাই হয়ে ঘাটাল, কিংবা ক্ষীরপাই থেকে রামজীবনপুর হয়ে হুগলি জেলায়।
মোরাম বোল্ডারের ভারি ভারি গাড়ি যাতায়াতে ভাঙছে গ্রামের রাস্তাও। এই রাস্তা নিয়েই কয়েকদিন আগে পাচারকারীদের সঙ্গে কাঁটাগড় গ্রামের বাসিন্দাদের বচসা থেকে মারপিটের ঘটনা ঘটেছিল। কিছুদিন আগে লরিতে করে মোরাম পাচার করতে গিয়ে লরির ধাক্কায় জখম হয়েছিলেন চমকাইতলার বাসিন্দা এক যুবক। এনিয়েও ক্ষোভ দেখা দিয়েছিল এলাকায়। সম্প্রতি এই অবৈধ মোরাম - বোল্ডার পাচার রুখতে এলাকার বাসিন্দারা গণস্বাক্ষর করে আবেদন করেছেন জেলা প্রশাসনের কাছে।
নিয়ম হল, খাদান থেকে মোরাম তোলার জন্য ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের থেকে অনুমতি নিতে হয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, একটি লরির অনুমতি নিয়ে তোলা হয় ১০-১২টি লরি মোরাম। অতিরিক্ত জেলাশাসক তথা জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক সজল টিকাদার বলেন, ‘‘আমরা খবর পাওয়া মাত্রই ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের মাধ্যমে অভিযান চালাচ্ছি। অনেকটাই বন্ধ হয়েছে। পুরোপুরি বন্ধ করতে জেলাস্তরে একটা টিম করছি।’’
এই কারবারের সঙ্গে যুক্ত চমকাইতলা, আমশোলের কয়েকজন বলেন, ‘‘খাদান থেকে মোরাম - বোল্ডার তোলার চেয়েও ঝুঁকিপূর্ণ কাজ পাচার করা।, ধরা পড়লে অবশ্য ‘ম্যানেজ’ করতে হয়।’’ (চলবে)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy