ফ্রেন্ডস ইউনাইটেড ক্লাবের পুজো। নিজস্ব চিত্র।
দশভূজা দুর্গার পিছনে রয়েছে চাল-গমের বস্তা। দেবী এক হাতে বিলি করছেন চাল। লক্ষ্মী দেবী আবার বিলি করছেন ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রকল্পের টাকা। গণেশ কৃষকদের দিচ্ছেন ‘কৃষক বন্ধু’ প্রকল্পের চেক।
এগরা শহরের ‘ফ্রেন্ডন্স ইউনাইটেড ক্লাবে’র পুজোর থিমে এবার এভাবেই উঠে এসেছে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের বিষয়। এই ক্লাবের সম্পাদক এক দলবদলু নেতা জয়ন্ত সাহু। একদা এগরা শহর তৃণমূলের প্রাক্তন সভাপতি বিধানসভা ভোটের আগে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। তাঁর পুজোয় তৃণমূল পরিচালিত রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প থিম হিসাবে উঠে আসায় প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি ফের জোড়া ফুল শিবিরে ফেরার চেষ্টা করছেন জয়ন্ত!
‘ফ্রেন্ডন্স ইউনাইটেড ক্লাবে’র পুজো এবার অষ্টম বর্ষে পড়েছে। মণ্ডপ সজ্জায় রংবাহারি আলোর ব্যবহার করা হয়েছে। ভিতরে ঢুকলেই অভিনব প্রতিমা সজ্জায় দর্শকদের জন্য চমক অপেক্ষা করছে। দশভূজা দেবীর হাতে ত্রিশূল, গদা, পদ্ম, চক্র থাকলেও এক হাতে তিনি ‘খাদ্য সাথী প্রকল্পে’র চাল ও গম বিতরণ করছে। দেবী সরস্বতী সর্বশিক্ষা মিশনে ছাত্রছাত্রীদের বই ও খাতা দিচ্ছেন। গণেশ কৃষকদের কৃষক বন্ধু চেক তুলে দিচ্ছেন। পিছিয়ে নেই কার্তিকও। করোনা মহামারি প্রতিরোধে প্রতিষেধক দিচ্ছেন তিনি। এরকম অভিনব পন্থায় বিজেপি নেতার পুজো মণ্ডপে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের অনুকরণ করা হয়েছে।
জয়ন্ত জেলা রাজনীতিতে অধিকারী পরিবারের ঘনিষ্ঠ ছিলেন বলে পরিচিত। ২০২০ সালে শহর তৃণমূলের সভাপতি থেকে দল তাঁকে সরিয়ে করে। পরবর্তী সময়ে শুভেন্দু আধিকারী বিজেপিতে যোগদান করার পরে দলে সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় হয়ে যান জয়ন্ত। বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির হেস্টিংসের দফতরে সাংসদ দিলীপ ঘোষের হাত ধরে জয়ন্ত সাহু ও তৃণমূলের প্রাক্তন পুরপ্রশাসক শঙ্কর বেরা বিজেপিতে যোগদান করে। এতে সেময়ই এগরা শহর বিজেপি নেতৃত্ব ক্ষুন্ন হয়েছিলেন।
বিধানসভা ভোটে তৃণমূল বিপুল ভোটে জিতে তৃতীয়বারের জন্য সরকার গড়েছে। তার পরে বহু দলবদলু তৃণমূল নেতাই ফের শাসক শিবিরে নাম লিখিয়েছেন। জেলা রাজনৈতিক মহলে ব্যাখ্যা, জয়ন্তও হয়তো ফিরতে চাইছেন পুরনো দলে। তাই তাঁর পুজোর মণ্ডবে এভাবে রাজ্য সরকারের প্রকল্পের প্রচার করা হচ্ছে। জয়ন্ত অবশ্য বলছেন, ‘‘আমরা সবাই এই রাজ্যের মানুষ। সংবিধান অনুয়ায়ী রাজ্য সরকারের প্রকল্প পাওয়ার অধিকার সবার রয়েছে। সেই ধারণা থেকে প্রতিমা সজ্জায় সরকারি প্রকল্পের অনুকরণ করা হয়েছে। এখানে কোনও রাজনৈতিক জল্পনা বা বিতর্ক নেই।’’
উল্লেখ্য, এর আগে বহু বিজেপি নেতাকে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের সুবিধা নিতে দেখা গিয়েছে। কিন্তু এভাবে সেই সব প্রকল্পের প্রচার করতে তেমন কাউকে দেখা যায়নি পূর্ব মেদিনীপুরে। দলীয় নেতার এ হেন আচরণে বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অনুপ চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘কেউ যদি পুজোর থিমে রাজ্য সরকারের প্রকল্প তুলে ধরেছেন, তবে সেটা সম্পূর্ণ তার ব্যক্তিগত বিষয়। তিনি দলের এসেছিলেন। এখন কোথায় যাবেন সেটা নিয়ে আমরা বিশেষ
চিন্তিত নই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy