Advertisement
E-Paper

গোঁজ প্রার্থী নিয়ে সর্বদলীয় অস্বস্তি

ভোটে লড়ার ছাড়পত্র দেয়নি দল। তাই মনোনয়ননের শেষলগ্নে নির্দল হিসেবেই মনোনয়ন জমা দিলেন অনেকে। বুধবার ছিল মনোনয়ন তোলা ও জমার শেষ দিন। এ দিন ৩২ জন নির্দল প্রার্থী মনোনয়ন জমা দেন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, বিজেপি ও তৃণমূলের অনেকে এ দিন নির্দল হিসেবে মনোনয়ন জমা দেন। অনেকে মনোনয়ন দেওয়ার কথা স্বীকারও করছেন প্রকাশ্যে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৫ ০২:৪৩
মনোনয়ন পেশের পর বিজেপির বিক্ষুব্ধ কর্মীরা।

মনোনয়ন পেশের পর বিজেপির বিক্ষুব্ধ কর্মীরা।

ভোটে লড়ার ছাড়পত্র দেয়নি দল। তাই মনোনয়ননের শেষলগ্নে নির্দল হিসেবেই মনোনয়ন জমা দিলেন অনেকে। বুধবার ছিল মনোনয়ন তোলা ও জমার শেষ দিন। এ দিন ৩২ জন নির্দল প্রার্থী মনোনয়ন জমা দেন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, বিজেপি ও তৃণমূলের অনেকে এ দিন নির্দল হিসেবে মনোনয়ন জমা দেন। অনেকে মনোনয়ন দেওয়ার কথা স্বীকারও করছেন প্রকাশ্যে। আদৌ এই নির্দল প্রার্থীরা জয় ছিনিয়ে নেবেন, না কি শুধুই ভোট কেটে অন্য প্রার্থীর রণে ভঙ্গ দেবেন, তা অবশ্য সময়ই বলবে।

গত ১৮ মার্চ পুরভোটের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। যদিও ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণার পরেও প্রার্থী চূড়ান্ত করতে অল্পবিস্তর হিমশিম খেতে হয়েছে সব দলকেই। প্রার্থী তালিকা প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ দেখায় একাংশ বিজেপি কর্মী। বিক্ষোভকারীদের দাবি ছিল, পুরনো কর্মীদের বাদ দিয়ে সদ্য বিজেপিতে আসা কর্মীদের প্রার্থী পদ দেওয়া হয়েছে। আর এতেই বেজায় চটেছিলেন দলের একাংশ কর্মী। তাই আর রাখঢাক না করেই পথে নামেন তাঁরা। টাকার দাবিতে প্রার্থীপদ দেওয়ার অভিযোগে বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ ও দলের শহর সভাপতি প্রেমচাঁদ ঝার কুশপুতুল পোড়ানো হয়। প্রার্থী তালিকা প্রত্যাহার না হলে নির্দল হিসেবে লড়ার হুঁশিয়ারিও দেন বিক্ষোভকারীরা।

বিজেপি নেতৃত্বের অবশ্য যুক্তি, খড়্গপুরের ৩৫টি ওয়ার্ডের প্রতিটি থেকে প্রার্থী হওয়ার জন্য গড়ে ১৭টি আবেদন জমা পড়েছিল। তার থেকেই প্রার্থীদের নাম নির্বাচন করা হয়েছে। প্রার্থী বাছাই নিয়ে শহর তৃণমূল সভাপতি দেবাশিস চৌধুরী ও প্রাক্তন পুরপ্রধান তৃণমূলের জহরলাল পালের কোন্দল সামলাতে হিমশিম খেতে হয়েছে তৃণমূল নেতৃত্বকেও। গত রবিবার প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করে শাসক দল।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, মুখে ঐক্যের কথা বললেও দলের কোন্দল সামলাতে বেগ পেতে হচ্ছে বিজেপি নেতৃত্বকে। দল টিকিট না দেওয়ায় শহরের বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে নির্দল হিসেবেই মনোনয়ন জমা দিলেন একাংশ বিজেপি কর্মী। প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার আগেই নিজের নামে দেওয়াল লিখে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন বিজেপির শহর কমিটির সদস্য অজয় চট্টোপাধ্যায়। পরে বিতর্ক এড়াতে অবশ্য তড়িঘড়ি দেওয়াল লিখনগুলি মুছে দেওয়া হয়। যদিও এ দিন শহরের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের নির্দল প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন অজয়বাবু। এ দিন মনোনয়ন জমা দিয়ে বেরিয়ে অজয় চট্টোপাধ্যায় বলেন, “১৯৮৫ সালে যখন দলের পতাকা ধরতে লোক ভয় পেত, তখন থেকে আমি বিজেপি করছি। ১৯৯৫ সালে দলের হয়ে ১০ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী হয়েছিলাম। এখন আমরাই ব্রাত্য।” তাঁর অভিযোগ, “দলে নতুন আসা প্রভাবশালীরা দলের কাছে যোগ্য। তাই অযোগ্য হয়েও নিজেদের প্রমাণ করতে নির্দল হয়েই লড়ব। দলকে ভালোবাসি। তাই কংগ্রেসই আমার প্রতিপক্ষ।”

এ ছাড়াও এ দিন ১০ নম্বর ওয়ার্ড থেকে বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী ওরফে বাবলা, ১৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকে রাজীব দাস, ৫ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ঊষা সাউ নির্দল প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। বিশ্বজিৎ চক্রবর্তীর অভিযোগ, “তিনি শুনেছেন, প্রার্থী নির্বাচনে টাকার খেলা হয়েছে। কিন্তু তুষার মুখোপাধ্যায় এর মধ্যে নেই। এ বার প্রেমচাঁদ ঝার হাতে দল শেষ হয়ে যাবে।” তিনি বলেন, “দীর্ঘদিন বিজেপি করলেও দল আমাদের ১৯ জন প্রার্থীকে নির্দল হিসেবে মনোনয়ন দিতে বাধ্য করেছে। এই লড়াইয়ের জন্য আমরা প্রস্তুত।” দলের এক সূত্রে খবর, নির্দল কাঁটা নিয়ে প্রবল অস্বস্তিতে বিজেপি। যদিও বিজেপির পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায় বলেন, “একসময়ে ওঁরা আমাদের লোক ছিল। কিন্তু যে ভাবে ওঁরা দলকে রাস্তায় নেমে অপমান করেছে, তাতে ওঁদের দলের কর্মী বলে আর মনে করি না।” তাঁর কটাক্ষ, “নির্দল হিসেবে ওদের দাঁড়ানো সাধারণ মানুষ ভাল চোখে নেবে না। এতে বিজেপির জয় নিশ্চিত হল।” কিন্তু দল বিরোধী কাজের জন্য কী ব্যবস্থা নিচ্ছেন? তুষারবাবুর জবাব, “ওঁরা এমন কোনও বড় নেতা নয়, যে তাঁদের বহিষ্কার করতে হবে। নির্দল হিসেবে দাঁড়িয়ে ওঁরা নিজেরাই দল থেকে বহিষ্কৃত হয়ে গিয়েছে।”

নির্দল হিসেবে মনোনয়ন জমা দিলেন তৃণমূল কর্মী মালা কুণ্ডুও (সবুজ শাড়ি)।

নির্দল কাঁটা নিয়ে বিব্রত শাসক দলও। দলের এক সূত্রে খবর, প্রার্থী নির্বাচন নিয়ে খড়্গপুরের ৬, ২৩, ২৫, ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। বিদায়ী দলীয় কাউন্সিলর প্রয়াত কমল কুণ্ডুর স্ত্রী মালা কুণ্ডুকে এ বার প্রার্থী করেনি তৃণমূল। আগেই দলের কাছে প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন মালাদেবী। দল টিকিট না দেওয়ায় এ দিন তিনি নির্দল হিসেবে মনোনয়ন জমা দেন। দলীয় সূত্রে খবর, এ বছর বিগত ভোটে জয়ী কাউন্সিলরদের প্রার্থী করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তৃণমূল। তবে সংরক্ষণের গেরোয় যে সব ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা প্রার্থী হতে পারবেন না, সেখানে স্থানীয় নেতা-কর্মীরাই প্রার্থী নির্বাচন করবেন। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় ৬ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর কমল কুণ্ডুর। দলের একাংশ কর্মী আশায় ছিলেন, এ বার কমলবাবুর স্ত্রীকে ওই ওয়ার্ড থেকেই প্রার্থী করবে দল। কিন্তু ওই ওয়ার্ডে ব্যবসায়ী শুকদেব সাহাকে তৃণমূলের প্রার্থী করা হয়েছে। এতেই ক্ষুব্ধ হয়ে নির্দল প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন মালাদেবী।

মনোনয়ন পেশের পর মালাদেবী বলেন, “স্বামীর মৃত্যুর পরেও আমিএ দলের হয়ে কাজ করেছি। লোকসভায় দলের হয়ে প্রচার করেছি। কিন্তু শহর সভাপতি দেবাশিস চৌধুরী কোন স্বার্থে এক জন ব্যবসায়ীকে প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা আমার জানা নেই।” তাঁর বক্তব্য, “এ বার আমার লড়াই হবে তৃণমূল প্রার্থী শুকদেব সাহার বিরুদ্ধে। আমার স্বামীর ওয়ার্ডের মানুষ আমার পক্ষে থাকবে, এ টুকু আশা করছি।” গত লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের প্রার্থী বিমল রাজের স্ত্রী শোভা রাজও ২৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকে নির্দল হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। তবে এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি শোভাদেবী।

ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।

Mala Kundu kharagpur Dummy candidate Election Municipal election Trinamool Congress BJP
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy