স্থানীয় ফড়েদের কাছে বিক্রি করতে হচ্ছে জলের দামে। এতে এগরার লঙ্কাচাষিরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন। লঙ্কা ছিল তাঁদের বিকল্প আয়ের পথ। ফসলের দাম না পাওয়ায় খোদ শাসক দলের বিধায়কের গ্রাম পঞ্চায়েতে লঙ্কা চাষিরা সঙ্কটে। তাঁদের ক্ষোভ লঙ্কা বিক্রির নির্দিষ্ট জায়গা না থাকা নিয়েও। কারণ ১৫ কোটি টাকার লঙ্কামান্ডি তালাবন্ধ হয়ে পড়ে। ফসলের নায্য মূল্যের দাবিতে রাজ্যপালের দ্বারস্থ হওয়ার কথা জানিয়েছেন কৃষকেরা।
পূর্ব মেদিনীপুরে একমাত্র এগরায় কাঁচালঙ্কার চাষ হয়। বোরো ধান চাষের চেয়েও লঙ্কা চাষ এখানে অনেকটাই লাভজনক ছিল। এ বার পানিপারুল গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রায় ৩০০ হেক্টর জমিতে লঙ্কা চাষ হয়েছে। পানিপারুল, কুলটিকরি, আরাঙ্গা-সহ আট থেকে ১০টি মৌজাতেও লঙ্কা ফলেছে। প্রতি দিন গড়ে ১০-১২ টন কাঁচালঙ্কা উৎপাদন হয় শুধুমাত্র পানিপারুল থেকে। গড়ে একজন চাষি দুই থেকে আড়াই হেক্টর জমিতে লঙ্কা চাষ করেছেন। বিক্রি করতে পানিপারুল বাজার এবং গ্রামীণ সড়কের পাশে একাধিক জায়গায় জড়ো করেন কৃষকেরা। সন্ধ্যার পরেই লঙ্কার পাইকারি বাজার শুরু হয়।
আগে অন্ধ্রপ্রদেশ, গুজরাত, কর্নাটক, রাজস্থান, দিল্লিতে লঙ্কা যেত। পাইকারি বাজারে ভিন রাজ্যের ব্যবসায়ীরা চাষিদের থেকে লঙ্কা কিনতেন। প্রতি কেজি লঙ্কা ৫০-৬৫ টাকা দরে বিক্রি হত। এ বারে ভিন্ রাজ্যের ব্যবসায়ীরা এগরার লঙ্কার পাইকারি বাজারে আসেননি। কাঁথির দুই ব্যবসায়ী অল্পবিস্তর লঙ্কা কিনেছেন। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ইচ্ছে মতো পাইকারি দাম ঠিক করছেন। গত তিন সপ্তাহে লঙ্কা প্রতি কেজি ২২-২৫ টাকায় পাইকারি বিক্রি হচ্ছে। চাষিরা জানাচ্ছেন, এক বিঘা জমিতে লঙ্কা চাষ করতে ৭০-৮০ হাজার টাকা খরচ হয়। মাঠ থেকে এক কেজি লঙ্কা তুলতে শ্রমিকদের পাঁচ-সাত টাকা দিতে হয়।
এক জায়গায় বিক্রির সুবিধায় পানিপারুল গ্রাম পঞ্চায়েত অফিস সংলগ্ন জমিতে ১৫ কোটি টাকা খরচে লঙ্কা মান্ডি তৈরি করা হয়েছে। দু’বছর আগে সেই মান্ডি তৈরি হলেও উদ্বোধন হয়নি। কৃষকদের রাস্তার উপরে লঙ্কা বাজারে আসতে হচ্ছে। লঙ্কা চাষকে উদ্যান পালনের মধ্যে রাখায় ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কৃষকেরা সরকারি বিমার সুবিধা পান না। কৃষি ঋণের ব্যবস্থা নেই। লঙ্কা চাষকে কৃষিকাজের মর্যাদা-সহ একাধিক দাবি নিয়ে আগেও নবান্ন এবং রাজ্যপালের দ্বারস্থ হয়েছিল লঙ্কা চাষি সমিতি।
সম্প্রতি রোগ পোকার আক্রমণে লঙ্কার ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এগরার তৃণমূলের বিধায়ক তরুণকুমার মাইতির গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ব্যাপক হারে লঙ্কা চাষ হয়। চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বিধায়কের দেখা নেই বলে অভিযোগ। বক্তব্য জানতে বিধায়ককে ফোন করা হলে তিনি ধরেননি। মেসেজের উত্তরও দেননি। পানিপারুল লঙ্কা চাষি সমিতির সহ-সভাপতি ক্ষুদিরাম বর বলেন, '‘লঙ্কা উৎপাদন হলেও পাইকারি বাজারে দাম নেই। ফড়দের কাছে বাধ্য হয়ে জলের দরে লঙ্কা বিক্রি করতে হচ্ছে। প্রশাসনের কেউ ফিরেও তাকায় না। ফসলের নায্য দামের দাবি সংগঠনের তরফে রাজ্যপালের কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।’’
এগরা মহকুমা শাসক মনজিৎকুমার যাদব বলেন, ‘‘লঙ্কা চাষিদের একাধিক দাবিগুলো জেলা প্রশাসনেকে জানানো হয়েছে। কৃষকেরা যাতে ফসলের নায্য দাম পেতে পারেন সেই চেষ্টা করা হচ্ছে।'’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)