দ্বৈরথ: মেদিনীপুরের এলআইসি মোড়ে পুলিশের সামনেই চলছে ধুন্ধুমার। নিজস্ব চিত্র
অটো আর টোটো চালকদের গোলমালে ফের ভোগান্তিতে পড়ল শহর মেদিনীপুরে। বৃহস্পতিবার সকালে শহরের এলআইসি মোড়ে অটো এবং টোটো চালকেরা নিজেদের মধ্যে বচসায় জড়িয়ে পড়েন। বচসা থেকে বাধে হাতাহাতি। এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। গোলমালের জেরে বেশ কিছুক্ষণ এই এলাকায় অটো-টোটো দুই-ই চলেনি। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ।
গত দু’দিন ধরেই শহরের একাধিক এলাকায় অটো-টোটো চালকদের মধ্যে গোলমাল বেধেছে। সমস্যা খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন। মেদিনীপুরের (সদর) মহকুমাশাসক দীননারায়ণ ঘোষ বলেন, “ঠিক কী হয়েছে দেখছি। সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা করা হবে।’’
মেদিনীপুর শহরে এই মুহূর্তে চলাচল করে হাজার খানেক টোটো। তার মধ্যে মাত্র তিনশো টোটোকে অনুমোদন দিয়েছে পরিবহণ দফতর। আর শহরে অটো চলে প্রায় ছ’শো। শহরে প্রচুর অবৈধ টোটো চলছে, এই অভিযোগে সরব হয়েছেন শহরের অটো চালকরা। অবৈধ টোটোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে গত সোমবার আরটিও অফিস ঘেরাও করেছিলেন অটো চালকেরা। মঙ্গলবার মেদিনীপুর শহরে অটো ধর্মঘট হয়। বুধবার আবার কোতোয়ালি থানা ঘেরাও করে পাল্টা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন টোটো চালকেরা।
এ দিনের গোলমালের সূত্রপাত একটি টোটোর পিছনে অটোর ধাক্কা মারাকে কেন্দ্র করে। স্থানীয় সূত্রের খবর, যাত্রী নামাতে টোটো এলআইসি মোড়ে দাঁড়িয়েছিল। ঠিক পিছনে ছিল অটো। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে অটোটি টোটোয় ধাক্কা মারে। অটো চালক জানান, ব্রেক-ফেল করায় টোটোয় ধাক্কা লেগে গিয়েছে। যদিও টোটো চালকের অভিযোগ, ইচ্ছে করে তাঁর গাড়িতে ধাক্কা মারা হয়েছে। আশপাশে তখন বেশ কয়েকটি অটো-টোটো ছিল। তাদের চালকেরা ঘটনাস্থলে আসেন। উত্তেজনা ছড়ায়। অটো এবং টোটো চালকেরা বচসায় জড়িয়ে পড়েন। হাতাহাতি বাধে।
বারবার এই অশান্তিতে বিরক্ত শহরবাসী। কুইকোটার তপন সামন্তের কথায়, “অটো-টোটো গোলমালে প্রায়ই সমস্যায় পড়তে হয়। মঙ্গলবারই পথে বেরিয়ে কোনও অটো পাইনি। বাড়তি ভাড়া দিয়ে টোটোয় যাতায়াত করতে হয়েছে।” হবিবপুরের বাসিন্দা সৈকত দাস বলেন, “অটোয়-টোটোয় উঠলে এখন আতঙ্কে থাকি। মনে হয় এই বুঝি গোলমাল লাগল!”
টোটো চালকদের বক্তব্য, অটো চালকেরা গুন্ডামি করছেন। বুধবার শহরের একাধিক এলাকায় টোটো চালকদের মারধর করা হয়েছে বলেও অভিযোগ। কংগ্রেসের টোটো ইউনিয়নের নেতা মহম্মদ সইফুলের দাবি, “অটো চালকেরা টোটো চালকদের উপর হামলা করছে।’’ অভিযোগ উড়িয়ে অটো ইউনিয়নের সম্পাদক শেখ সিরাজ বলেন, “মিথ্যা অভিযোগ। মারধরের কোনও
ঘটনা ঘটেনি।’’ বৃহস্পতিবার দুপুরে মেদিনীপুরে জেলা কংগ্রেস কার্যালয়ের সামনে আবার জড়ো হন টোটো চালকেরা। এঁদের অনেকই কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থক। টোটো ইউনিয়নের নেতা মহম্মদ সইফুলের অভিযোগ, “আচমকা পুলিশ এসে দলীয় কার্যালয়ের ঢুকে কর্মী-সমর্থকদের হেনস্থা করে। কয়েকজনকে আটক করেও নিয়ে যায়।” পুলিশের অবশ্য দাবি, এমন কোনও ঘটনা ঘটেনি।
তবে গোলমালের জেরে যাত্রীরা যে ভোগান্তিতে পড়ছেন তা মানছে দু’পক্ষই। সইফুলের কথায়, “যাত্রীরা সমস্যায় পড়ছেন। আমরা সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান চাই।’’ বৃহস্পতিবার দুপুরে মেদিনীপুরের বিধায়ক মৃগেন মাইতির সঙ্গেও দেখা করে অটো ইউনিয়নের এক প্রতিনিধি দল। সিরাজেরও বক্তব্য, “কারও সঙ্গে সংঘাত নয়, আমরাও সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান চাই।।’’
মেদিনীপুর শহরে অটো-অটো সংঘাতে দাঁড়ি টানতে শেষমেশ নীতি রূপায়ণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। সম্প্রতি জেলা প্রশাসনের এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়। অবশ্য এই নীতি এখনও তৈরি হয়নি। জেলার এক প্রশাসনিক কর্তার আশ্বাস, “সমস্যার স্থায়ী সমাধানসূত্র খুঁজতেই নীতি রূপায়ণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। একটা খসড়া নীতি তৈরি হবে। আলোচনার মাধ্যমে পরে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy