দিঘায় জগন্নাথ মন্দির উদ্বোধন এবং মূর্তির প্রাণ প্রতিষ্ঠা নিয়ে বিপুল সমারোহ। পূর্ব মেদিনীপুর জেলারই এক পুরসভা এলাকায় জগন্নাথদেবকে নিয়ে দেখা গেল অন্য সমারোহ। তা সম্প্রীতির। এই সমারোহ দিঘার জগন্নাথ মন্দিরকে কেন্দ্র করেই।
পাঁশকুড়ার চার নম্বর ওয়ার্ডেও প্রাক্তন কাউন্সিলর তথা জেলা যুব তৃণমূল কংগ্রেসের সহ-সভাপতি শেখ সমিরুদ্দিন আয়োজন করলেন যজ্ঞের। তা জেলার জগন্নাথ ধাম সংস্কৃতি কেন্দ্রের উদ্বোধন উপলক্ষেই।
আয়োজনের ত্রুটি রাখেননি সমিরুদ্দিন। মেদিনীপুর ক্যানালের পাশে দলীয় কার্যালয়ের সামনে টাঙানো হয়েছে শামিয়ানা। বড় পর্দায় চলছে দিঘার মন্দির উদ্বোধনের সম্প্রচার। দর্শক আসনে দলীয় কর্মী সমর্থক থেকে সাধারণ মানুষ। কার্যালয়ের সামনেও জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রার ছবি রেখে চলছে পুজোপাট। সেখানেই ভক্তদের সঙ্গে বসে রয়েছেন সমিরুদ্দিন। খেয়াল রাখছেন সব দিকে। বুধবার এমনই দৃশ্য দেখা গেল।
হাজারের বেশি জনের অন্নভোগের আয়োজন ছিল এ দিন। রান্না হয়েছিল অন্ন ভোগ, এঁচোড়ের তরকারি, কলার ছেঁচকি, লাউয়ের তরকারি, চাটনি ও মিষ্টি। অন্নভোগেও সম্প্রীতির ছবি। জগন্নাথের প্রসাদ পাত পেড়ে পাশাপাশি বসে খেলেন সকল ধর্মাবলম্বী। পরিবেশন করেন সমিরুদ্দিন। ওয়ার্ড তৃণমূল কংগ্রেসের এই উদ্যোগ। তবে সমিরুদ্দিন সংকল্প করেননি বা যজ্ঞের আহুতিতে দেননি। চার নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি সুকান্ত আদক সঙ্কল্প করেন। যজ্ঞের পুরোহিত দিব্যেন্দু চক্রবর্তী বলেন, ‘‘সমিরুদ্দিনবাবুর ডাকেই আজ জগন্নাথ দেবের যজ্ঞ করতে এসেছি। যে ভক্তই ভক্তিভরে ভগবান কে ডাকবে সে ভক্তই ভগবানের সাড়া পাবে। ব্যক্তি কোনও ধর্মের সেটা বড় নয়। ভগবানের চোখে সবাই সমান।’’
স্থানীয় সূত্রে খবর, সমিরুদ্দিন আগেও দুর্গাপুজো, সন্তোষী ঠাকুরের পুজো অথবা শিব ভক্তদের জল দানের আয়োজনে থেকেছেন। স্থানীয় বাসিন্দা পাপিয়া মাজি বলেন, ‘‘দাদা আমাদের কাছে বটগাছ। হিন্দু মুসলিম সবাই ওঁর ছায়ার তলায় সুন্দর ভাবে বেঁচে আছি। সমস্ত ধর্মীয় অনুষ্ঠান থেকে বিপদ-আপদে ওঁকে পাশে পাই। এ ভাবেই মানুষ হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ালে মানবতা বেঁচে যাবে। ধর্ম যে যার বিশ্বাসের জায়গাতেই রেখে দেবে। তবেই না শান্তি, তবেই না সম্প্রীতি। আমরা এ বাংলাই দেখতে চাই।’’
সমিরুদ্দিন তিনি বলেন, ‘‘আমার ধর্ম আমাকে শিখিয়েছে নিজের ধর্মের প্রতি আস্থাশীল হওয়া ও পরের ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া। এটাই তো ইসলাম। অন্য রাজনৈতিক দল বরাবরই ধর্মকে রাজনীতিতে টানে। সে বিভাজনের রাজনীতি নাই বা করলাম এ রকম একটা মহৎ দিনে।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)