Advertisement
E-Paper

বিক্ষুদ্ধদের সামলাতে গুলি এসডিপিও-র

বিক্ষুব্ধ জনতাকে সামলাতে গুলি চালানোর অভিযোগ উঠল এসডিপিওর বিরুদ্ধে। বুধবার সকালে পূর্ব মেদিনীপুরের এগরা শহরের আকলাবাদ এলাকার এই ঘটনায় জখম হয়েছেন এক পথচারী।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০১৬ ০১:১০
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জখম (বাঁ দিকে), এসডিপিও-র বাড়ির সামনে জটলা (ডান দিকে)।—নিজস্ব চিত্র।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জখম (বাঁ দিকে), এসডিপিও-র বাড়ির সামনে জটলা (ডান দিকে)।—নিজস্ব চিত্র।

বিক্ষুব্ধ জনতাকে সামলাতে গুলি চালানোর অভিযোগ উঠল এসডিপিওর বিরুদ্ধে। বুধবার সকালে পূর্ব মেদিনীপুরের এগরা শহরের আকলাবাদ এলাকার এই ঘটনায় জখম হয়েছেন এক পথচারী। এসডিপিও মনোরঞ্জন ঘোষের দাবি, মঙ্গলবার রাতে একটি ঘটনার প্রতিবাদ করায় এ দিন স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁর বাড়িতে হামলা চালিয়েছিলেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশেই তিনি গুলি চালিয়েছিলেন।

এসপি অলোক রাজোরিয়া বলেন, “বিভাগীয় তদন্তের পাশাপাশি দায়ের হওয়া অভিযোগ অনুযায়ী তদন্ত হচ্ছে। সেই মতো এসডিপিওর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তবে রাজ্য পুলিশের এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) অনুজ শর্মা বলেন, ‘‘এসডিপিও মনোরঞ্জন ঘোষকে সিআইএফ ব্যাটেলিয়নে বদলি করা হয়েছে। এগরায় ওই পদে এখন থেকে দায়িত্ব সামলাবেন তন্ময় সরকার (ডিএসপি, ডি অ্যান্ড টি)।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এগরা মহকুমা প্রশাসনিক ভবনের পিছনে মহকুমাশাসক ও মহকুমা পুলিশ আধিকারিকের বাংলো রয়েছে পাশাপাশি। ঘটনার সূত্রপাত মঙ্গলবার রাতে। ওই বাংলোর রাস্তার পাশেই স্থানীয় এক বাসিন্দার বাড়িতে পুজো চলছিল। জোরে বাজছিল ঢাক, কাঁসর, ঘন্টা। ফাটানো হচ্ছিল শব্দবাজিও। রাত পৌনে দুটো নাগাদ ঘটনাস্থলে যান এসডিপিও মনোরঞ্জন ঘোষ। তিনি ওই শব্দ বন্ধ করার জন্য বলেন। ওই পরিবারের সদস্য বংশীধর মাইতির অভিযোগ, ‘‘রাতে মনোরঞ্জনবাবু মদ্যপ অবস্থায় এসে পুজো থামানোর জন্য আমাকে মারধর করেন। বৌদি বাধা দিতে গেলে তাঁকে ঠেলে ফেলে দেন। সকালে এলাকার বাসিন্দারা ঘটনাটা জানতে পেরে তাঁর আবাসনে গিয়ে বিক্ষোভ দেখায়।’’ এগরা থানায় এই বিষয়ে অভিযোগও জানিয়েছেন তাঁরা।

সকালে বিক্ষোভের খবর পেয়ে এসডিপিও-র সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিলেন মহকুমাশাসক রজতকান্তি বিশ্বাস ও তৃণমূলের পুরপ্রধান শঙ্কর বেরা। সেই সময়ই গুলি চালাতে চালাতে আবাসন থেকে বেরোতে থাকেন এসডিপিও মনোরঞ্জন ঘোষ। এ দিন তাঁকে ফোনে ধরা হলে তিনি বলেন, ‘‘রাতে বিকট শব্দে ঢাক, কাঁসর, ঘণ্টা বাজছিল। আমি তার প্রতিবাদ করেছিলাম। আর তাতেই স্থানীয়রা এসে আমার বাড়িতে ঢিল ছুঁড়তে শুরু করে। বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকিও দিচ্ছিল। এরপরই জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশ মতো আমি মাটিতে গুলি করতে শুরু করি। আর তাতেই পালায় বিক্ষোভকারীরা।’’

সেই সময় রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা তপন সাউ। এসডিপিওর ছোড়া গুলি তাঁর পা ঘেঁষে বেরিয়ে যায়। এগরা মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আঘাত গুরুতর নয়। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে তপনবাবু বলেন, ‘‘প্রাতঃভ্রমণ সেরে আমি বাড়ি ফিরছিলাম। গণ্ডগোল হচ্ছে বুঝে তাড়াতাড়ি পা চালাতে গিয়ে কিছু একটা পা ঘেঁষে বেরিয়ে যায়। দেখি রক্ত ঝরছে।’’ ওই গুলিচালনার পরে বিক্ষোভকারীরা এসডিপিওর বাংলোর জানালা ও মূল দরজার কাঁচ ভেঙে দেয়। সেই সময় ভাঙা কাচে হাত কেটে জখম হন আরও একজন। ঘটনার প্রতিবাদে আধ ঘণ্টা অবরোধ করা হয় এগরা-বাজকুল রোড।

পুরপ্রধান শঙ্কর বেরার কথায়, ‘‘সমস্যা মেটাতে এসডিপিওর বাংলোতেই গিয়েছিলাম। কিন্তু উনি আলোচনা না করে এমন কাণ্ড কেন করলেন কে জানে!’’ মহকুমাশাসক রজতকান্তি বিশ্বাসও বিস্মিত এই ঘটনায়। তিনি বলেন, ‘‘মিনিট পাঁচেকের মধ্যে আলোচনার জন্য আসছি জেনেও গুলি চালান মনোরঞ্জনবাবু। পরে শুনলাম ভয় পেয়ে না কি তিনি গুলি চালিয়েছিলেন।” তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের বিক্ষোভ সামলাতে হঠাৎ গুলি চালানোর মতো হঠকারী সিদ্ধান্ত কেন নিলেন মনোরঞ্জনবাবু? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ আধিকারিকের কথায়, ‘‘বিক্ষোভকারীরা তো সশস্ত্র ছিলেন না। বিক্ষুব্ধদের ছত্রভঙ্গ করার আরও নানা উপায় ছিল। সে সব না করে উনি কেন গুলি চালালেন সেটাই বুঝতে পারছি না।’’

২০১২ সালের নভেম্বর নদিয়ার তেহট্টে এসডিপিওর গুলিতে মারা গিয়েছিলেন স্থানীয় এক ব্যক্তি। আবার তুফানগঞ্জ থানায় মাইক বাজানো থামাতে গিয়ে গুলি চালানোর অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন পাঁচজন। ঘটনার জেরে থানার ওসি মহিম অধিকারীকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি তাঁকে ক্লোজও করা হয়েছিল।

police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy