গত বছর সৈকত শহরে রাস্তার দু’দিকে গাছ কাটার তোড়জোড় হয়েছিল। পরে অবশ্য গাছ বাঁচিয়েই রাস্তার দু’দিকে কংক্রিটের ফুটপাত বানানো হয়। এ বছর আবার সরকারি উদ্যোগে দিঘায় গড়াবে রথের চাকা। তাই রথ-সড়কের (যে রাস্তা ধরে রথ এগোবে) পাশে আমগাছ কাটার অভিযোগ উঠল। বহুকালের প্রাচীন বটগাছের বড় বড় শাখা-প্রশাখাও কাটা পড়ল। এতে আপত্তি তুলেছেন স্থানীয়েরা। যদিও জেলা প্রশাসন ও বন দফতরের দাবি, গাছ কাটার অভিযোগ সঠিক নয়। শুধু ডালপালা ছাঁটা হয়েছে।
আগামী ২৭ জুন রথযাত্রা। দিঘায় জগন্নাথ মন্দির উদ্বোধনের পরে এ বারই প্রথম সরকারি উদ্যোগে রথের চাকা চাকা গড়াবে এখানে। ইতিমধ্যে তৈরি হয়ে গিয়েছে জগন্নাথ, বলভদ্র এবং সুভদ্রার তিনটি পৃথক রথ। আগামী ১২ জুন জগন্নাথদেবের স্নানযাত্রার প্রস্তুতিও জোরকদমে চলছে। থেমে নেইরথযাত্রার প্রস্তুতিও।
মন্দিরের ৭ নম্বর গেট থেকে রথে চেপে তিন বিগ্রহের ওল্ড দিঘায় জগন্নাথদেবের মাসির বাড়িতে যাওয়ার কথা। ওই রাস্তা দিয়ে রথ যেতে যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, সে জন্য বিভিন্ন তার-সহ পথের বাধা সরানোর কাজ চলছে শুক্রবার থেকে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এ দিন সকালে প্রথমে আমগাছ কাটা হয়। বিবেক মিশ্র নামে স্থানীয় এক যুবক বলেন, ‘‘মন্দিরের পূর্ব দিকে বেশ কয়েকটা আমগাছ ছিল। সেগুলি কেটে ফেলা হয়েছে।’’ শুক্রবার রাতে ওল্ড দিঘায় কাটা হয় বটগাছের ডালপালাও। ওই বটবৃক্ষ দিঘা স্টেট জেনারেল হাসপাতালের সামনে বহুকাল ধরে রয়েছে। ১১৬ বি জাতীয় সড়কের দু’দিকে রাস্তা বন্ধ রেখেই চলে বটগাছের ডালপালা ছাঁটা চলে। আটকে পড়ে বাস ও পর্যটকেদের বহু গাড়ি। যে পদ্ধতিতে বটগাছের মোটা মোটা শাখা-প্রশাখা কাটা হয়েছে, তাতে আপত্তি তুলেছেন এলাকার মানুষজন।
স্থানীয় বাসিন্দা দেবব্রত দাস বলেন, ‘‘অত পুরনো বটগাছ বিশাল শাখা-প্রশাখা বিস্তার করে দাঁড়িয়েছিল। প্রচণ্ড গরমে রোদের হাত থেকে মানুষ রেহাই পেতেন ওই গাছতলায় দাঁড়িয়ে। সেই পূর্ণবয়স্ক গাছের শাখা-প্রশাখায় কোপ পড়ায় তার বেঁচে থাকার আশা নেই বললেই চলে।’’ ঘটনায় সরব হয়েছেন পরিবেশ প্রেমীরা। স্থানীয় পরিবেশ কর্মী অনুপম দাসের মতে, ‘‘পরিবেশ দিবসে দিঘায় গিয়ে অনেকে সবুজায়নের বার্তা দিয়েছিলেন। তার ঠিক পরদিন সকালে আমগাছ আর রাতে বটগাছে কোপ সেই পরিবেশের উপরেই প্রভাব ফেলবে।’’
যদিও বন দফতরের কাঁথি মহকুমা রেঞ্জ আধিকারিক অতুল প্রসাদ দে-র দাবি, ‘‘কোনও গাছ কাটা হয়নি। পুরনো বটবৃক্ষের কিছু শাখা-প্রশাখা বিপজ্জনক অবস্থায় রাস্তার দিকে এসেছিল। ঝড়-বৃষ্টিতে সমস্যার আশঙ্কায় সেগুলি কাটা হয়েছে।’’ পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজিও বলেন, ‘‘গাছ কাটা নিয়ে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। কোথাও গাছে কোপ পড়েনি। জগন্নাথদেবের রথ যাতে নির্বিঘ্নে যেতে পারে, সে জন্য কয়েকটা আমগাছ আর বটবৃক্ষের শাখা-প্রশাখা কাটা হয়েছে শুধু।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)