Advertisement
E-Paper

পশ্চিমে রফা শেষ, পূর্বে কাঁটা চার কেন্দ্রে

আর ফাঁকা মাঠ নেই শাসকের। প্রথম দফা ভোটের মনোনয়ন-পর্ব শুরুর ২৪ ঘণ্টা আগেই পশ্চিম মেদিনীপুরের আসন রফা চূড়ান্ত করল সিপিএম-কংগ্রেস। বৃহস্পতিবার সিপিএমের দ্বিতীয় দফার প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পরে দেখা যাচ্ছে, জেলার ১৯টি আসনের মধ্যে ৪টি কংগ্রেসকে ছাড়া হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৬ ০১:৫৮
সন্তোষ রাণা, তাপসী মণ্ডল এবং স্বপন সাঁতরা।

সন্তোষ রাণা, তাপসী মণ্ডল এবং স্বপন সাঁতরা।

আর ফাঁকা মাঠ নেই শাসকের। প্রথম দফা ভোটের মনোনয়ন-পর্ব শুরুর ২৪ ঘণ্টা আগেই পশ্চিম মেদিনীপুরের আসন রফা চূড়ান্ত করল সিপিএম-কংগ্রেস। বৃহস্পতিবার সিপিএমের দ্বিতীয় দফার প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পরে দেখা যাচ্ছে, জেলার ১৯টি আসনের মধ্যে ৪টি কংগ্রেসকে ছাড়া হয়েছে। বাকি ১৫টিতে থাকছেন বাম প্রার্থী। মেদিনীপুরে বাম প্রার্থী হয়েছেন সিপিআইয়ের সন্তোষ রাণা। সন্তোষবাবু মেদিনীপুরের প্রাক্তন বিধায়ক। দলের জেলা সম্পাদক।

একটি আসনে অবশ্য প্রার্থী রদবদল করেছে সিপিএম। য়াগ্রামের প্রার্থী হিসেবে পুলিনবিহারী বাস্কের নাম ঘোষণা করা হয়েছিল। জেলার প্রাক্তন সভাধিপতি। এদিন অবশ্য জানানো হয়েছে, পুলিনবিহারীবাবু গোপীবল্লবপুর থেকে লড়বেন। নয়াগ্রাম আসনটি কংগ্রেসকে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।

পশ্চিম মেদিনীপুরের যে ক’টি আসন নিয়ে সিপিএম-কংগ্রেস নেতৃত্ব ঐক্যমতে পৌঁছতে পারছিলেন না, তারমধ্যে ছিল মেদিনীপুর। মেদিনীপুর আসনে প্রার্থী দিতে চেয়েছিল কংগ্রেস। তবে আসনটি ছাড়তে রাজি ছিল বামেরা। জেলা সদরের এই আসনে অবশ্য সিপিএমের প্রার্থী থাকে না, সিপিআইয়ের প্রার্থী থাকে। আসন রফার পথের এই শেষ কাঁটা সরাতে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিলেন দু’দলের রাজ্য নেতারা। কেন মেদিনীপুর আসনে দলের প্রার্থী লড়বেন, যুক্তি দিয়ে তা বাম নেতৃত্বকে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন সিপিআই নেতৃত্ব। সিপিআইয়ের মতে, যে সব আসনে দলের জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে, তারমধ্যে জেলার সদর আসন অন্যতম। গত লোকসভার নিরিখে মেদিনীপুর থেকে তৃণমূল পেয়েছিল ৯৭,৫৮৭ ভোট। সিপিআই পেয়েছিল ৫৮,৫২৪ ভোট। বিজেপি পেয়েছিল ৩২,১৪৫ ভোট এবং কংগ্রেস পেয়েছিল ৬,৯৬৭ ভোট। কংগ্রেসের সঙ্গে আসন ফয়সালা চূড়ান্ত হতে এ দিন বিকেল থেকেই প্রচারে নেমে পড়েন মেদিনীপুরের সিপিআইয়ের কর্মী-সমর্থকেরা।

বাম রাজনীতিতে দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞ সন্তোষ রাণা ভোট ময়দানে নতুন নন। তিনি মেদিনীপুরের প্রাক্তন বিধায়ক। এই নিয়ে বিধানসভা ভোটে লড়বেন তৃতীয় বার। গত লোকসভা ভোটে ঘাটালে অভিনেতা দেবের বিরুদ্ধে লড়েছিলেন। প্রার্থী হওয়ার পরে তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘এ বারের ভোটটা অন্য অঙ্কে হচ্ছে। আশা করব মানুষ গণতন্ত্র রক্ষায় আমাদের পাশে থাকবেন।’’

দ্বিতীয় দফার বাম প্রার্থীরা

পূর্ব মেদিনীপুর

নন্দীগ্রাম- কবীর মহম্মদ (সিপিআই)

হলদিয়া (এসসি)- তাপসী মণ্ডল (সিপিএম)

কাঁথি দক্ষিণ- উত্তম প্রধান (সিপিআই)

পশ্চিম মেদিনীপুর

মেদিনীপুর- সন্তোষ রাণা (সিপিআই)

গোপীবল্লভপুর- পুলিনবিহারী বাস্কে (সিপিএম)

দাসপুর-স্বপন সাঁতরা (সিপিএম)

* পুলিনবিহারী বাস্কের আসন এ দিন
নয়াগ্রাম থেকে বদলে গোপীবল্লভপুর করা হয়েছে।

অন্য দিকে, দাসপুর বিধানসভায় বাম প্রার্থী করা হয়েছে স্বপন সাঁতরাকে। বামপন্থী আন্দোলনের নেতা জহর সাঁতরা দুই মেদিনীপুরেই পরিচিত মুখ। প্রত্যন্ত চক চাঁইপাট গ্রামের সেই সাঁতরা বাড়ির ছেলে স্বপনবাবু। কাকা জহরবাবুর হাত ধরেই তাঁর রাজনীতিতে আসা। উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ স্বপনবাবু পেশায় জীবন বিমার এজেন্ট। আশির দশকের গোড়া থেকে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে একাধিক বার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। ১৯৮৩ সাল থেকে টানা দশ বছর দাসপুর-২ ব্লকের চাঁইপাট পঞ্চায়েতের প্রধান ছিলেন। টানা পাঁচ বছর দাসপুর-২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিও ছিলেন। জেলা পরিষদেও জিতেছিলেন। স্বপনবাবু এখন গোপীগঞ্জ লোকাল কমিটির সম্পাদক, সোনাখালি জোনাল কমিটির সদস্য, ওই ব্লকের কৃষক সভার সম্পাদকও। স্বপনবাবুর কথায়, “দল আমাকে প্রার্থী করেছে। ভাল লাগছে। কিন্তু একই সঙ্গে মনে পড়তে প্রয়াত কাকার কথা।”

এ দিন পূর্ব মেদিনীপুরেও তিনটি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বামেরা। নন্দীগ্রামে লড়বেন সিপিআই প্রার্থী কবীর মহম্মদ, হলদিয়ায় সিপিএম প্রার্থী করা হয়েছে তাপসী মণ্ডল আর কাঁথি দক্ষিণ কেন্দ্রে প্রার্থী হয়েছেন সিপিআইয়ের উত্তম প্রধান।

নন্দীগ্রামের জেলায় মোট বিধানসভা আসন ১৬টি। তার মধ্যে বামেরা লড়ছে (এখনও পর্যন্ত) ১১টিতে। তিনটিতে লড়ার কথা জানিয়েছে কংগ্রেস। তবে তিনটি কেন্দ্র খেজুরি, নন্দকুমার ও এগরায় এখনও পর্যন্ত বাম-কংগ্রেস কেউই লড়ার কথা জানায়নি। উল্টে কাঁথি দক্ষিণ কেন্দ্র লড়ার কথা জানিয়েছে দুই শিবিরই। তবে সূত্রের খবর, এ ক্ষেত্রে আসন রফা হতে পারে।

২০১১ সালে নন্দীগ্রামে তৃণমূল প্রার্থী ফিরোজা বিবির বিরুদ্ধে সিপিআই প্রার্থী ছিলেন পরামনন্দ ভারতী। এ বার শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে ময়দানে সিপিআইয়ের প্রবীণ নেতা কবীর মহম্মদ। মহম্মদপুরের বাসিন্দা ৬৮ বছরের কবীর নন্দীগ্রাম কলেজে সিপিআইয়ের ছাত্র সংগঠন এআইএসএফের নেতা ছিলেন। স্নাতক হয়ে রাজ্য সরকারের ক্ষুদ্র-কুটিরশিল্প দফতরে চাকরি করেছেন। সমান্তরাল ভাবে করে গিয়েছেন রাজনীতিও। বর্তমানে সিপিআইয়ের জেলা কমিটির সদস্য। ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটে অবশ্য জেলা পরিষদ আসনে তৃণমূলের শেখ সুফিয়ানের বিরুদ্ধে হেরে যান। এ বার প্রতিপক্ষ কঠিন। যদিও প্রবীণ এই বাম নেতা বলছেন, ‘‘নন্দীগ্রামের কিংবদন্তী কমিউনিস্ট নেতা ভূপাল পান্ডাকে দেখে রাজনীতিতে এসেছিলাম । তাঁর আদর্শেই রাজনীতি করি। তাই প্রতিপক্ষ যেই হোন না কেন আমি লড়াই করতে ভয় পাইনা । তবে শুভেন্দুবাবু ভাল প্রতিদ্বন্দ্বী।’’

হলদিয়ার সিপিএম প্রার্থী তাপসীদেবী এ বার বিধানসভা ভোটে দলের নতুন মুখ। তবে ১৯৯৭ সালে হলদিয়া পুরসভার শুরু থেকে তাপসীদেবী প্রায় ২০ বছর কাউন্সিলর ছিলেন। বর্তমানে তৃণমূল পরিচালিত পুরসভার বিরোধী দলনেত্রী তিনি। আর দলের জেলা কমিটির সদস্য, গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির জেলা সম্পাদকমণ্ডলীরও সদস্য। হলদিয়া শহরের কুমারচকের বাসিন্দা তাপসীদেবী মাধ্যমিক উত্তীর্ণ। বাম-রাজনীতিতে আসা কাকা নীহারেন্দু মণ্ডলের হাত ধরে। তাপসীদেবীর প্রতিপক্ষ পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি মধুরিমা মণ্ডল। তাপসীদেবীও বলছেন, ‘‘মানুষের কাছে নিজেকে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে আপ্রাণ খাটব।’’

(তথ্য সহায়তা: কিংশুক গুপ্ত, অভিজিৎ চক্রবর্তী, বরুণ দে ও আনন্দ মণ্ডল)

congress cpm seat allocation
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy