E-Paper

প্রাচীন গাছে রথের চাকা, প্রশ্নে পরিবেশ

মহিষাদলের রথের চাকার ব্যাস সাড়ে চার ফুট। আগে ছিল সাড়ে ছ’ফুট। চাকা তৈরি করছেন এলাকার বাসিন্দা শিল্পী সমীরণ মাইতি।

আরিফ ইকবাল খান

শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০২৫ ০৯:৫৮
মহিষাদলের রথের চাকা তৈরির কাজ।

মহিষাদলের রথের চাকা তৈরির কাজ। নিজস্ব চিত্র।

মহিষাদল রাজবাড়ির রথ সংস্কারে জড়িয়ে রয়েছে নানা উল্লেখযোগ্য ঘটনা। একটি সংস্কার হয়েছিল ১৮৬০ সালে। রাজপরিবারের বন্ধু সিভিল ইঞ্জিনিয়ার মসিয়েঁ পেরু সংস্কার করেছিলেন। পরামর্শ দিয়েছিলেন, রথের ধনুকের মতো বাঁক কমানোর। কমেছিল চূড়া। এবার রথের চাকা বদল হচ্ছে। বদলানো চাকাগুলো হবে একটি প্রাচীন মরা নিম গাছের কাঠ দিয়ে। তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন পরিবেশকর্মীরা।

মহিষাদলের রথের চাকার ব্যাস সাড়ে চার ফুট। আগে ছিল সাড়ে ছ’ফুট। চাকা তৈরি করছেন এলাকার বাসিন্দা শিল্পী সমীরণ মাইতি। সমীরণ বলেন, ‘‘রথের চাকা তৈরি হয় শাল কাঠ দিয়ে। তবে পুরনো নিম কাঠ বেশ শক্ত। দুশো বছরের বেশি প্রাচীন নিম গাছের কাঠ দিয়ে হচ্ছে রথের চাকা। ভিজিয়ে রেখেও কাটতে হিমসিম খেতে হচ্ছে। ভার নিতে পারবে রথের।’’

প্রাচীন ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করা অর্ণব রায় রথের বিবর্তনের কথা জানালেন। তিনি বলেন, ‘‘রথের আকার কিঞ্চিৎ কমেছে নানা কারণে। রানি জানকী রথ তৈরি করেন ১৭৭৬ সালে। নিমকমহলে কাজ করতে আসা ওড়িশার শ্রমিকদের অনুরোধে পুরীর রথের কথা মাথায় রেখে রথ নির্মাণ করান। সেই সময় বাংলাদেশের ঢাকায় একটি কাঠের রথের উচ্চতা ছিল ৮০ ফুট। চূড়া ছিল আরও ১২ ফুট। মহিষাদলের রথ ঢাকাকে ছাপিয়ে গিয়েছিল।’’ অর্ণব জানাচ্ছেন, মহিষাদলের রথে ১৮৫২ সালে দুর্ঘটনা ঘটে। সাতজন ভক্তর মৃত্যু হয়। এঁরা একেবারে উপরের তলায় ছিলেন। রথ উঁচু বলে টলমল করে চলত। তাতেই সম্ভবত দুর্ঘটনা। বর্তমানে রথের উচ্চতা চূড়া ছাড়া ৫৫ ফুট। চূড়া নিয়ে ৭০ ফুট। মহিষাদলের রথ ছিল ২১টি চূড়ার। পরে ১৭টি চূড়া। বর্তমানে ১৩ চূড়ার রথ।

রথের চাকা তৈরির সময় থেকেছেন অর্ণব। অর্ণব জানান, মহিষাদলের রথের চাকা ৩৪টি। এর আগে অন্য বিখ্যাত কয়েকটি রথের চাকা ছিল ৩২টি। মহিষাদলের রথের চাকায় কোনও স্পোক থাকে না। ওড়িশার বারিপদা ও কেওনঝড় ছাড়া আর কোনও রথে এমন চাকা নেই। এই ধরনের চাকা থাকলে টানলে সরে যাবে না। ১০০ বছর আগে চাকার চলা পিচ্ছিল করতে পঞ্চগব্য অর্থাৎ দুধ, গোমূত্র, গোময়, দই ও ঘি ঢালা হত। এখন জল দেওয়া হয়। একটি চাকার ওজন ২৫০ কেজি। বাজার দর ৫৫ হাজার টাকা। রথের জন্য তৈরি হচ্ছে নানা কাঠের পুতুলও।

কিন্তু চাকা তৈরিতে মরা নিম গাছ ব্যবহারে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। মহিষাদল রাজ কলেজের জীববিদ্যার অধ্যাপক শুভময় দাস বলেন, ‘‘একটি মরা গাছ ছোটখাট বাস্তুতন্ত্র। তাতে অসংখ্য পোকামাকড়, ছত্রাক, কেঁচো, কেন্নো, অণুজীবের বাস। মরা গাছে পেঁচা বাসা বাঁধে।’’ স্থানীয় বিধায়ক তথা রথযাত্রা রথ পরিচালন কমিটির সভাপতি তিলক চক্রবর্তী বলেন, ‘‘রথের আট থেকে দশটি চাকা পরিবর্তন করতে হবে। প্রচুর খরচ। রাজবাড়ি দু’শো বছরের বেশি প্রাচীন একটি মৃত নিম গাছ দিয়েছেন। অনেক বড় কাজে কিছুটা সমঝোতা করতে হয়। মহিষাদলের প্রাচীন রথের চাকা বদল হচ্ছে দীর্ঘদিন পরে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Mahisadal

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy