ঘাটাল-দাসপুরের গ্রামে সোনার কাজের পাশাপাশি চলছে তামার গয়না তৈরির কাজও। ছবি: কৌশিক সাঁতরা
সোনার হাতে এ বার ফুটবে তামার কারুকাজ!
দেশ জোড়া যে এলাকার স্বর্ণশিল্পীদের কদর, ঘাটালের সেই দাসপুরে তামার হাব তৈরির তোড়জোড় শুরু হয়েছে। মূলত কাজহারা স্বর্ণশিল্পীরাই শিখবেন তামার গয়না তৈরির কৌশল। এই উদ্যোগ দাসপুর-২ ব্লক প্রশাসনে। পাশাপাশি ইচ্ছুক বেকার যুবকরাও তামার হাবে প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন। তামার গয়না শিল্পে দক্ষ কারিগররা প্রশিক্ষণ দিবেন। কাঁচামাল ও বিপণনের বন্দোবস্তও করবে ব্লক প্রশাসন। প্রশিক্ষণ শেষে ব্যক্তিগত ভাবে দোকান খুলে বা অর্ডার নিয়ে ব্যবসা করা যাবে। সে জন্য স্বল্প
সুদে ব্যাঙ্ক ঋণের ব্যবস্থাও করে দেওয়া হবে।
দাসপুর ২-এর বিডিও অনির্বাণ সাহু বলেন, “দাসপুর জুড়েই বহু সোনার কারিগর নোট বন্দির সময় কাজ খুইয়েছেন। তাঁরা বেকার হয়ে বসে রয়েছেন। তাঁদের জন্যই সরকারি উদ্যোগে তামার হাব খোলা হচ্ছে।” ব্লকের শিল্প উন্নয়ন আধিকারিক ব্যোমকেশ মাইতিরও বক্তব্য, “তামার কাজে সব রকম সহায়তা করা হবে। প্রশিক্ষণ দেওয়াও শুরু হয়েছে।”
দেশে, এমনকি দেশের বাইরেও দাসপুরের সোনার কারিগরদের যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। দাসপুর ও সোনাখালি এলাকার কয়েক হাজার যুবক সোনার কাজে যুক্ত। দাসপুরের অর্থনীতির মেরুদণ্ডও এই স্বর্ণশিল্প। শুধু ভিন্ রাজ্যের স্বর্ণশিল্পী পাঠানো নয়, দাসপুর জুড়েও চলে সোনার কারবার। গাঁ-গঞ্জে বাড়িতে বাড়িতে, কোথাও আবার ছোট কারখানায় সোনার গয়না তৈরি হয়। ২০১৬ সালে নোটবন্দির সময় দেশ জুড়েই স্বর্ণশিল্পে ধাক্কা লেগেছিল। সেই সময় কাজ হারিয়ে বহু স্বর্ণশিল্পী ফিরে এসেছিলেন দেশের বাড়িতে। তাঁদের জন্য তখন সমর্থন প্রকল্প চালু করেছিল রাজ্য সরকার। এককালীন ৫০ হাজার টাকার অর্থসাহায্য দিতেই চালু হয়েছিল ওই প্রকল্প। কিন্তু তখন অভিযোগ ওঠে, সমর্থনের সাহায্য প্রকৃত দাবিদাররা পাচ্ছেন না। পরিবর্তে শাসক ঘনিষ্ঠেরা টাকা পেয়ে যাচ্ছেন, চলছে স্বজনপোষণ। এই পরিস্থিতিতে বেশ কিছু শিল্পী সোনার কাজ ছেড়ে মাছ বেচতে শুরু করেন, কেউ আবার টোটো চালাচ্ছেন।
তবে কি সমর্থন প্রকল্প ষোলোআনা সফল হয়নি? তাই এখন কারিগরদের তামার কাজ শেখাতে হচ্ছে?
বিডিও-র ব্যাখ্যা, দু’টি সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়। সমর্থন প্রকল্পে সাহায্য পেয়েছেন এমন অনেকেও তামার গয়না তৈরির প্রশিক্ষণ নেবেন।
বস্তুত, কয়েক বছর ধরেই ঘাটাল, দাসপুরের বিভিন্ন এলাকায় তামার গয়নার কাজ শুরু হয়েছে। সেখানে নানা ডিজাইনের গয়না তৈরি হয়। ইদানিং বহু মহিলাও এই পেশায় আসছেন। বড় বড় ব্যবসায়ীরাই কারিগরদের কাঁচামাল পৌঁছে দিচ্ছেন। গয়না তৈরির পরে নিয়ে যাচ্ছেন বাড়ি থেকেই। বাজারও বেশ চাঙ্গা।
যে হাতে সোনার গয়নায় কারুকাজ ফুটে উঠত, সেই হাত এ বার তামার গয়না তৈরি করবে?
জোতঘনশ্যামের স্বর্ণশিল্পী হারাধন দাস বলছিলেন, “এতে তো লজ্জার কিছু নেই। আমাদের সমস্যা আমরাই বুঝি। এমন উদ্যোগ জরুরি ছিল।”
দাসপুর-২ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি আশিস হুতাইত জানালেন, সিঙ্গুরে তামার বড় বাজার রয়েছে। সেখানকার দক্ষ কারিগরদের দিয়ে প্রাথমিক ভাবে ‘হাব’ চালু করা হবে। তিন দফায় এক মাসের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। একসঙ্গে দু’শো জন কাজ শিখতে পারবেন। জেলা শিল্প কেন্দ্র সব রকম সহযোগিতা করবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy