Advertisement
E-Paper

বিক্রি তো হল, টাকা কবে পাবেন চাষিরা

সরকারি সহায়ক মূল্যে কৃষি সমবায় উন্নয়ন সমিতির কাছে ধান বিক্রি করে পথে বসেছেন জঙ্গলমহলের চাষিদের একাংশ। গত ফেব্রুয়ারি-মার্চে ধান বিক্রি করার পরে চার মাস কেটে গিয়েছে এখনও কানাকড়ি টাকা পাননি কয়েকশো চাষি। টাকার অভাবে আমন ধানের চাষ শুরু করতে পারছেন না অনেকেই। বিষয়টি জানাজানি হতেই নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন।

কিংশুক গুপ্ত

শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০১৬ ০১:১৯
সহায়ক মূল্যে ধান বিক্রির শিবিরে চাষিরা। ফাইল ছবি।

সহায়ক মূল্যে ধান বিক্রির শিবিরে চাষিরা। ফাইল ছবি।

সরকারি সহায়ক মূল্যে কৃষি সমবায় উন্নয়ন সমিতির কাছে ধান বিক্রি করে পথে বসেছেন জঙ্গলমহলের চাষিদের একাংশ। গত ফেব্রুয়ারি-মার্চে ধান বিক্রি করার পরে চার মাস কেটে গিয়েছে এখনও কানাকড়ি টাকা পাননি কয়েকশো চাষি। টাকার অভাবে আমন ধানের চাষ শুরু করতে পারছেন না অনেকেই। বিষয়টি জানাজানি হতেই নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন।

প্রাথমিক ভাবে লালগড় ব্লকের ৬২ জন চাষির অভিযোগের ভিত্তিতে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা খাদ্য দফতর এবং জেলা সমবায় দফতর পৃথক ভাবে তদন্ত শুরু করেছে। তাতেই কেঁচো খুঁড়তে কেউটে বেরনোর জোগাড় ! জানা গিয়েছে, জঙ্গলমহলের প্রায় ছ’শো চাষির ধান বিক্রি বাবদ প্রায় দেড় কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। ঘটনায় শাসক দলের নেতা-জনপ্রতিনিধিদের একাংশেরও নাম জড়িয়েছে বলে অভিযোগ।

অভাবী বিক্রি বন্ধ করার জন্য প্রতি বছর নির্দিষ্ট সময়ে সরকারি সহায়ক মূল্যে ধান কেনা হয়। কুইন্ট্যাল প্রতি ধানের সরকারি সহায়ক মূল্য ১,৪১০ টাকা। চাষিদের কাছ থেকে সরকারি এজেন্সির মাধ্যমে দু’রকম ভাবে ধান কেনা হয়। প্রথমত, প্রতিটি ব্লকে সরকারি ধান্যক্রয় কেন্দ্রে গিয়ে চাষিরা ধান বিক্রি করে সঙ্গে সঙ্গে চেক মারফত দাম পেয়ে যান। জেলায় ওয়েস্ট বেঙ্গল এসেনশিয়াল কমোডিটি সাপ্লাই কর্পোরেশন (ডব্লুবিইসিএসসি)-এর মাধ্যমে সরাসরি ধান কেনার ব্যবস্থা রয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন এলাকায় শিবির করেও ধান কেনা হয়। সেক্ষেত্রে সরকারি বিভিন্ন এজেন্সি (যেমন, ডব্লুবিইসিএসসি, বেনফেড, নাফেড, কনফেড) বিভিন্ন সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির (এসকেইউএস) মাধ্যমে চুক্তি করে ধান কেনে। এক্ষেত্রে সমবায় দফতরের অনুমতি নিতে হয়। ওই সব শিবিরে কৃষি সমবায় সমিতিগুলি নিজেদের টাকায় চাষিদের কাছ থেকে ধান কিনে নেয়। সমবায়গুলি চাষিদের চেকে দাম মেটায়। অথবা চাষিদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে দাম বাবদ টাকা জমা দেওয়া হয়। তারপর মিল মালিকদের কুইন্ট্যাল পিছু খরচ দিয়ে সেই ধান ভাঙিয়ে চাল বানিয়ে নেওয়া হয়। অথবা ধানের পরিবর্তে মিল মালিক লভ্যাংশ কেটে নিয়ে সমবায় সমিতিকে চাল দেন। পুরো প্রক্রিয়াটি পদ্ধতি মাফিক হয়েছে কি-না সেটা প্রশাসনিকস্তরে খতিয়ে দেখা হয়। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে এর পর সরকারি এজেন্সির মাধ্যমে পুরো চালটা খাদ্য দফতর কিনে নেয়। তারপর সংশ্লিষ্ট কৃষি সমবায় উন্নয়ন সমিতি (এসকেইউএস) টাকা পেয়ে যায়।

জানা গিয়েছে, গত ফেব্রুয়ারি ও মার্চে জঙ্গলমহলের একাধিক ব্লকে শিবির করে ধান কেনা হয়। এর মধ্যে লালগড় ব্লকের ধরমপুর পঞ্চায়েতে ১,৩০০ কুইন্ট্যাল ধান কেনা হয় (দাম প্রায় ১৮ লক্ষ টাকা)। বেলিয়াবেড়া ব্লকের পাইকআম্বি এসকেইউএস এবং বনডাহি এসকেইউএস এর প্রতিনিধি প্রশান্ত খান চাষিদের রসিদ দিয়ে ওই চাল কেনেন। চাষিদের অভিযোগ, ওই সময় ধারে ধান কিনে প্রশান্তবাবু রসিদ দিয়ে জানান, পনেরো দিনের মধ্যে চাষিদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠিয়ে দেওয়া হবে। ওই শিবিরগুলিতে শাসক দলের নেতা ও পঞ্চায়েত প্রধানরা হাজির থাকায় চাষিরাও নিশ্চিন্তে রসিদ নিয়ে বাড়ি ফিরে যান। এরপর প্রশান্তবাবু কথা রাখেননি বলে অভিযোগ। লালগড়ের শান্ত খামারের মতো কয়েকজন চাষিকে চেক দেওয়া হয়। কিন্তু ওই সব চেক বাউন্স করে যায়। বাদবাকি চাষিরা টাকার জন্য গত চার মাস ধরে প্রশান্তবাবুর অফিসে বহুবার গিয়েছেন। অবশেষে চাষের মরশুমে টাকা না পেয়ে সম্প্রতি ক্ষুব্ধ চাষিরা লালগড়ের বিডিও, ঝাড়গ্রামের মহকুমাশাসক এবং জেলা খাদ্য দফতরে অভিযোগ করেছেন। এখন জানা যাচ্ছে, আরও অন্যান্য ব্লকেও এভাবে বহু চাষিদের ঠকানো হয়েছে। এর পরই গা ঢাকা দিয়েছেন প্রশান্তবাবু। তাঁর মোবাইল ফোন সুইচ অফ রয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, ওই দু’টি কৃষি সমবায় সমিতির ধান কেনার মতো কোনও আর্থিক ক্ষমতাই নেই। প্রশান্তবাবু ওই দু’টি সমিতির পারচেজ অফিসার হিসেবে কয়েক বছর নিযুক্ত আছেন।

লালগড়ের বামাল গ্রামের নবকুমার মণ্ডলের ২৭ কুইন্ট্যাল ধান বিক্রি বাবদ ৩৮ হাজার টাকা পাওয়া বকেয়া রয়েছে। দ্বিজেন পাত্রের ৩২ কুইন্ট্যাল ধান বিক্রি বাবদ ৪৫ হাজার টাকা পাওয়া বাকি আছে। সুভাষচন্দ্র মণ্ডলের ২৩ কুইন্ট্যাল ধান বিক্রি বাবদ পাওনা বাকি ৩৫ হাজার টাকা। হতাশ চাষিদের প্রশ্ন, “কে আসল কে নকল আমরা কী করে বুঝব?”

লালগড় ব্লক তৃণমূলের সভাপতি বনবিহারী রায় বলেন, “যাঁরা ধান কিনতে আসছেন, তাঁরা এমন করবেন, সেটা আমরা কী করে বুঝব? আমার ব্লকে চাষিদের ধান বিক্রি বাবদ ২০-২৫ লক্ষ টাকা পাওনা আছে বলে শুনছি। প্রশাসনকে বিষয়টি দেখতে বলেছি।” পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা খাদ্য নিয়ামক পার্থপ্রতিম রায় বলেন, “অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত চলছে। সমবায় দফতরকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।” জেলার সমবায় সমিতি সমূহের সহ নিয়ামক তপন দাস বলেন, “জেলা খাদ্য নিয়ামকের মাধ্যমে অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।”

money crops farmer
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy